শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৬ জুন ২০২৫ ০৬:৫৯ পিএম
শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে শিবচরে পশুর হাট, দাম অনেকটা চওড়া
রাত পোহালেই পবিত্র কোরবানির ঈদ। বিভিন্ন হাট-বাজারে শেষ মূহুর্তে জমে উঠেছে কোরবানির পশু বেচাকেনার ধুম। মাদারীপুরের শিবচরে পশুর দাম অনেকটা চওড়া। এক হাটের সাথে অন্য হাটের জমজমাট বেচাকেনার উৎসব মুখর পরিবেশের সৃষ্টি করার প্রচেষ্টা। প্রতিটি হাটেই জমে উঠেছে চাহিদা মোতাবেক দেশি বিদেশী নানা প্রজাতির গরু-ছাগল। সকাল গড়িয়ে বিকাল, তবুও এক হাট থেকে অন্য হাটে ছুটে আসছে ক্রেতা ও বিক্রেতারা।
একদিকে দাম কম যাবে ভেবে বিক্রেতাদের চাহিদা মত দামাদামি করছে না ক্রেতারা। অপরদিকে দাম বাড়ার আশায় পশু ছাড়ছে না ক্রেতারা। একজনের সাথে পাল্লা দিয়ে দাম হাকাতে দেখা যাচ্ছে ক্রেতাদের। কোনো হাটেই কমতি নেই পশুর দাম। ক্রেতারা মনে করছে যেন শেষ মূহুর্তে পশুর দামে আগুন। শুধু তাই নয় গরুর হাটে গরু দেখার জন্যও হাটে আসছে সাধারণ মানুষেরাও।
শুক্রবার (৬ জুন) সকাল থেকেই বিভিন্ন হাটে পশুর দাম টানটান উত্তেজনা থাকলেও বিকাল থেকে উপজেলার বিভিন্ন স্হায়ী বা অস্থায়ী ছোট-বড় হাটে কোরবানির ঈদের মাঝারি গরু ছাড়াও ছোট ছোট গরুর দাম যেন হরিনের দামের মত মনে হচ্ছে। সকাল থেকে এই হাট গুলো মিলছে চলবে গভীর রাত পর্যন্ত। কেননা রাত পোহালেই কোরবানি। এসব হাটের মধ্যে রয়েছে পুরাতন ছোট কুতুবপুর হাট, বড় কুতুবপুর হাট, চান্দের চর হাট, মাদবরের চর হাট,কাঁঠাল বাড়ী বাংলা বাজার হাট, চেয়ারম্যান গেট হাট, শিরুয়াইল হাট, কাদিরপুর দেলোয়ার বেপারী হাটৎ, উতরাইল হাট, শেখপুর হাট, উপজেলা পৌর বাস টার্মিনাল হাটসহ বেশ কিছু হাট মিলছে।
সিংহ ভাগ হাট সাপ্তাহে একদিনে মিললেও কোরবানির ঈদ কে সামনে রেখে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সুবিধার্থে হাট, টানা তিন দিনের আজ শেষ দিন গভীর রাত পর্যন্ত চলবে বলে জানতে পারি। বৃষ্টি ও গরমের তীব্র তাপদাহ রক্ষার্থে এসব হাটগুলোতে প্যান্ডেন করে উপরে এিপলের সু-ব্যবস্তা রেখেছে হাট কতৃপক্ষ। হাটগুলোতে বিভিন্ন জাতের ছোট, বড় পশুসহ অসংখ্য মাঝারি সাইজের গরু উঠতে দেখা যায়।
বিভিন্ন ক্রেতারা বলেন,এবার কোরবানির পশু গতবারের চেয়ে তুলনামূলক ভাবে একটু বেশি দেখা যাচ্ছে। তাই গরুর দাম কিছুটা কম হবে বলে মনে করি। চারদিন আগে মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা বেশি থাকায়,দামও কিছুটা বেশি ছিল। শেষের দিকে এসে উপজেলার প্রতিটি হাটে পশুর চাহিদা বেশি থাকায় সারাদিনেই চওড়া দাম দেখা যায়।
শিবচর বাস টার্মিনাল হাটে আসা মহিউদ্দিন মোল্লা বলেন, সকালে বাজারে আইছি দুপুর প্রায় হাট ঘুরে নজর সই কালা চান নামে একটি ছোট গরু ১ লাখ ৩০ হাজার দিয়ে কিনলাম, দাম যাই হোক, আল্লাহুকে খুসীর আশায় কোরবানি দিমু। নজর সই গরু কিনছি। এতেই আলহামদুলিল্লাহ। দামে কি আইলো গেলো।
পৌরবাস টার্মিনালে সবচেয়ে বড় গরুর দাম সকাল থেকে হাকালেও অবশেষে ওই গরু পৌর ওয়্যার্ড কমিশনার শাহাদাত হোসেন সর্বোচ্চ ৪ লক্ষ ১০ হাজার টাকা দিয়ে কিনতে দেখা যায়।যার নাম হচ্ছে ব্লাক বেঙ্গল। যিনি ওই হাট ইজারাদার মালিক পক্ষ ছিলেন।
একাধিক পাইকারেরা জানান, বেশির ভাগ কাস্টমারদের মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা বেশি ছিল। কিন্তু দাম বেড়ে যাওয়ার কারনে ছোট আকারে গরু বিক্রি বেশি যায়। মাজারী সাইজের একটি গরু ২ লক্ষাধিক টাকা থেকে ২ লক্ষাধিক টাকা এবং বড় সাইজের একটি গরু ৩ লক্ষাধিক থেকে ৪ লক্ষাধিক দাম হাকাচ্ছে। ছাগলের দাম প্রতিবারই তুলনামূলক বেশি। এবারও তাই, মাঝারি সাইজের একটি ছাগল ২০ থেকে৩০ হাজার এবং বড় সাইজের ছাগল ৩০ থেকে ৫০ হাজারের ও অধিক দামে বিক্রি হচ্ছে। নজর সই বড় একটি ছাগল ৭০ হাজার টাকা দাম চাইতে দেখা যায়।
নিরাপত্তা ও সার্বিক ব্যবস্থা সম্পর্কে বিভিন্ন হাটের একাধিক ইজারাদার কতৃপক্ষ বলেন, এবার গরুর হাটে নিরাপত্তার কোনো কমতি নাই। সরকারী প্রশাসন ছাড়া ও ভলেন্টিয়ার সার্বক্ষণিক মাঠে কাজ করছে।টাকা পয়সা লেনদেন করতে কোনো ঝুঁকি নেই। জালটাকা ধরতে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি রয়েছে। এছাড়াও বড় হাট গুলোতে সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। এবার গরু প্রতি হাসিল পাইকারদের জন্য সর্বনিম্ম ১৫ শত টাকা ও গৃহস্থদের জন্য সর্বোচ্চ ৩ হাজার টাকা করে নির্ধারন করা হয়েছে। আবার কোনো কোনো হাটে খরজের পরিমান কমবেশি বুঝে হাসিলও কিছুটা কম বেশিও ধরা হয়েছে।
উপজেলা প্রানী সম্পদ অফিস সূত্রে জানতে পারি, ৭৭২ টি ছোট-বড় খামার মিলে, চলতি বছরে কোরবানির মৌসুম উপলক্ষে প্রায় ১০ হাজার ৯ শত ৭০টি গরু এবং ১০ হাজার ৭৭০টি ছাগল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তবে এদের মধ্যে প্রায় ১ হাজার ৫ শত ৪০ টি পশু উদ্ধিত থাকার আশঙ্কা রয়েছে।
উপজেলা প্রানী সম্পদ অফিস কর্মকর্তা, হরিশ চন্দ্র বোস বলেন,এবছর শিবচর উপজেলায় মোট ৭ টি হাট অনুমোদন রয়েছে। এছাড়া ছোট ছোট অস্থায়ী বেশ কিছু হাট বসেছে। স্থায়ী বড় হাট গুলোতে আমাদের মেডিকেল টিম কাজ করছে। বিভিন্ন খামারীদের পশু যত্নের জন্য সু-পরামর্শসহ সার্বক্ষণিক সেবা দিচ্ছে।
ভোরের আকাশ/এসএইচ