মো. মিরাজ, তালতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১১ জুন ২০২৫ ১০:৩২ পিএম
৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে মধ্যরাতেই সাগরে যাচ্ছেন জেলেরা
মাছের বংশবিস্তার, বেড়ে ওঠা ও টেকসই আহরণের জন্য বঙ্গোপসাগরে সব ধরনের মাছ ধরার ওপর ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে আজ বুধবার মধ্যরাতে। গত ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত ৫৮ দিন বঙ্গোপসাগরে সব ধরনের মাছ ধরা, পরিবহন ও সংরক্ষণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল সরকার। বিগত বছরগুলোতে এই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ ছিল ৬৫ দিন। এরই মধ্যে নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বরগুনার তালতলী উপজেলার জেলেরা।
ইতোমধ্যে সাগরে যাওয়াকে কেন্দ্র করে কর্মচাঞ্চল্য ফিরেছে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ও জেলে পল্লীগুলোতে। আজ রাত ১২টার পর থেকেই মাছ ধরার জন্য ফের সাগরে যাওয়া শুরু করেছেন উপকূলের জেলেরা।
মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, তালতলী উপজেলায় সরকারী ভাবে নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন ৮ হাজার ৭৯৯ জন। এর ভেতরে ৫ হাজার ২শ জন জেলে সাগরে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন। নিবন্ধিত জেলেদের দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষ ভিজিএফের মাধ্যমে ৫৬ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে।
তালতলীর জেলে পল্লী ঘুরে দেখা যায়, সাগরে মাছ ধরতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন জেলেরা। ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। কেউ জাল ট্রলারে উঠাচ্ছেন, কেউবা ট্রলারে থাকাকালীন খাদ্য সামগ্রী ও প্রয়োজনীয় বাজারের কাজ সেরে ফেলছেন। এসব কাজ সেরে দীর্ঘ নিষেধাজ্ঞা শেষে সমুদ্রে নামার আগ মূহূর্তে জেলেদের চোখে-মুখে নতুন আশা, জালে ধরা পড়বে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। ফের প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠবে উপজেলার ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে।
নিদ্রা জেলে পল্লীর জেলে মো. আলতাফ হাওলাদার বলেন, 'দীর্ঘ প্রায় দু’মাস পর নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেদের কিছুটা উৎসাহ-উদ্দীপনা থাকলেও পাশাপাশি ঋণ নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছে। অনেকের ঋণ রয়েছে। কিন্তু প্রায় দু’মাস মাছ ধরা বন্ধ থাকায় পরিশোধ সম্ভব হয়নি। এখন মাছ ধরে নিজেও চলতে হবে, ঋণও পরিশোধ করতে হবে। এবার অনেক আশায় নিয়ে আমরা সাগরে নামবো। কারণ গত বছর আশানুরূপ ইলিশ পাওয়া যায়নি। আশা করছি এ বছর প্রচুর ইলিশ পাওয়া যাবে।'
ট্রলার মালিক ও আড়তদার জালাল উদ্দিন বলেন, 'প্রতি মৌসুমে তারা লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন লাভের আশায়। কিন্তু মৌসুমের শেষ ভাগে বিপুল টাকা বিনিয়োগে অনেকেরই অনীহা। এছাড়াও মাত্র দুমাস পরই ফের মা-ইলিশের ২২ দিনের জন্য সাগর এবং নদীতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।'
তালতলী উপজেলা জেলে শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সেলিম মাতুব্বর বলেন, 'এই উপজেলার জেলেরা ৫৮ দিনের সরকারি নির্দেশনা পালন করেছে। নিষেধাজ্ঞার সময় কোনো ট্রলার সাগরে যেতে দেওয়া হয়নি। তাই রাত ১২ টার পরপরই জেলেরা গভীর সাগরে মাছ শিকার করতে যাচ্ছেন।'
বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মহসীন বলেন, 'সাগরে ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞা সফলভাবে পালন করা হয়েছে। স্থানীয় বরফকলগুলো বন্ধ রাখায় হয়েছিলো। নিষেধাজ্ঞাকালে জেলেদের সরকারিভাবে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে।'
ভোরের আকাশ/জাআ