প্রক্রিয়া মেনে পুশইন হচ্ছে, দাবি বিএসএফ ডিজির
বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের টানাপোড়েন অব্যাহত রয়েছে। বেড়ে গেছে দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি। তীব্রতর হচ্ছে স্নায়ুযুদ্ধ। এর মধ্যে চলছে বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) পুশইন। চলতি বছরেই পুশইনের আক্রান্তের সংখ্যা তিন হাজার ছাড়িয়ে গেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এমন প্রেক্ষাপটে ঢাকা অনুষ্ঠিত হয়েছে চারদিনের বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের ৫৬তম সীমান্ত সম্মেলন।বৃহস্পতিবার ছিল সম্মেলনের সমাপনী দিন। এদিন পুশইনের বিষয়ে বিএসএফ মহাপরিচালক শ্রী দালজিৎ সিং চৌধুরী দাবি করেছেন,‘বাংলাদেশে পুশইন প্রক্রিয়া যথাযথ আইনগত চ্যানেল অনুসরণ করেই সম্পন্ন করা হচ্ছে। শুধুমাত্র অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদেরই পুশইন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৫৫০ জনকে বিজিবির হাতে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং আরও ২ হাজার ৪০০ মামলার যাচাই প্রক্রিয়া চলছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ হাইকমিশন সহযোগিতা করছে।’বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর পিলখানাস্থ বিজিবি সদর দপ্তরের শহীদ ক্যাপ্টেন আশরাফ হলে অনুষ্ঠিত যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীসহ উভয় বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।ভারতীয় ও রোহিঙ্গাদেরও পুশইন: সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা প্রশ্ন তোলেন, বিএসএফ মাঝে মাঝে বাংলাদেশি ছাড়াও ভারতীয় ও রোহিঙ্গা নাগরিকদের পুশইন করছে-যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। জবাবে বিএসএফ ডিজি বলেন, ‘আমরা সম্পূর্ণ আইনের মধ্য থেকেই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করছি। যদি কেউ ভারতীয় নাগরিক হয়ে থাকে এবং তা প্রমাণিত হয়, ভারত তাকে তাৎক্ষণিক গ্রহণ করবে।’সীমান্তে হত্যাকাণ্ড নিয়ে মতবিরোধ : সীমান্তে হত্যাকাণ্ড বন্ধে দুই বাহিনী সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করেছে বলে জানালেও উভয় মহাপরিচালকের বক্তব্যে ভিন্নতা দেখা গেছে। বিএসএফ ডিজি বলেন, ‘চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ৩৫ জন বিএসএফ সদস্য অনুপ্রবেশকারীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত হয়েছেন। আমাদের সদস্যরা প্রথমে সতর্ক করে, পরে বাধা দেয়। সর্বশেষ উপায় হিসেবে গুলি ছোড়া হয়।’তবে এ বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন বিজিবি মহাপরিচালক। তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, ‘সম্প্রতি প্রকাশ্য দিবালোকে এক বাংলাদেশি কিশোরকে বিএসএফ গুলি করে হত্যা করেছে। সে শিশুটি কীভাবে সীমান্ত নিরাপত্তার জন্য এতটা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল? চার দিনব্যাপী এ সম্মেলনে সীমান্ত নিরাপত্তা, মাদক, অস্ত্র ও মানবপাচার, অনুপ্রবেশ, সীমান্ত হত্যাকাণ্ড এবং সীমান্তবর্তী উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়। মাদক ও পাচার রোধ: উভয় পক্ষই মাদক, অস্ত্র ও মানবপাচার বন্ধে দৃঢ় প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে।সীমান্তে স্থাপনা ও অনুপ্রবেশ : সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ, পাচারকারীদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ এবং সীমান্ত অতিক্রম প্রতিরোধের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।রোহিঙ্গা ইস্যু : বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, সম্প্রতি ভারতে নিবন্ধিত ৪৮ জন রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের শামিল।সীমান্ত হত্যাকাণ্ড রোধ : মারাত্মক অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধ, রাতে টহল জোরদার, যৌথ সচেতনতামূলক কর্মসূচি এবং সীমান্তবর্তী এলাকার সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নয়নে যৌথ উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়ে সম্মতি হয়েছে।পানি ও সম্পদ বণ্টন : নদী ও পানিবণ্টন, অবৈধ নির্মাণ এবং সীমান্তবর্তী উন্নয়ন প্রকল্প যাতে প্রতিরক্ষা ঝুঁকি তৈরি না করে সে বিষয়ে উভয়পক্ষ মতবিনিময় করে।সম্মেলনে বাংলাদেশের ২১ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী। প্রতিনিধি দলে বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছাড়াও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র, নৌপরিবহন, সড়ক বিভাগ, ভূমি জরিপ অধিদফতর, যৌথ নদী কমিশন ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের প্রতিনিধি ছিলেন।অন্যদিকে, বিএসএফ মহাপরিচালক শ্রী দালজিৎ সিং চৌধুরী (আইপিএস) নেতৃত্ব দেন ১১ সদস্যের ভারতীয় প্রতিনিধি দলকে। সেখানে ভারতের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনের কর্মকর্তারাও ছিলেন।যৌথ সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সীমান্ত হত্যা, অনুপ্রবেশ ও পাচার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ এবং পানি ও সম্পদ ভাগাভাগির ন্যায্য সমাধান হলে দুদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে।ভোরের আকাশ/এাসএইচ