বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ১ম টেস্ট
রাজীব দাস
প্রকাশ : ১৮ জুন ২০২৫ ০৮:৪৫ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
শ্রীলঙ্কার গলে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে তুলে ফেলেছে দলীয় ৪৮৪ রান গল টেস্ট ইতিহাসে এটি ১৪তম সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। এত বড় স্কোর, একাধিক ব্যাটারের বিশাল ইনিংস সব মিলিয়ে ইনিংসটি হতে পারত বাংলাদেশের ইতিহাসে অনন্য এক অধ্যায়। কিন্তু দিনের শেষভাগে হঠাৎ ছন্দপতনে ব্যাটিংয়ের এই মহোৎসব কিছুটা ম্লান হয়ে যায়। বিশেষ করে দিনের শেষ ৬১ রানে ৫ উইকেট হারানো টাইগারদের ছন্দ পতনের গল্পই তুলে ধরছে বৃষ্টির পরের সেই বিপর্যয়। গল টেস্টের দ্বিতীয় দিনের শেষভাগে আলো স্বল্পতায় খেলা বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত ৯ উইকেটে ৪৮৪ রানে পৌঁছায় বাংলাদেশ। ব্যাট হাতে ঝলক দেখানো শান্ত, মুশফিক ও লিটন তিনজনই তাদের ব্যক্তিগত মাইলফলকের খুব কাছ থেকে ফিরে যান।
শান্ত-মুশফিকের অবিচ্ছিন্ন জুটি ঘুরিয়ে দেয় ম্যাচের রং : টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুর ধাক্কা সামাল দিতে বেশ বেগ পেতে হয় টাইগারদের। প্রথম সেশনে মাত্র ৪৫ রানেই হারিয়ে বসে ৩ উইকেট। কিন্তু এরপর বাংলাদেশ ব্যাটিংকে টেনে তোলেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ও অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম। তারা গড়েন ২৪৭ রানের অবিচ্ছিন্ন এক মহাকাব্যিক জুটি। প্রথম দিন শেষে শান্ত ১৩৬ ও মুশফিক ১০৫ রান করে অপরাজিত ছিলেন। দ্বিতীয় দিনের সকালে ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির স্বপ্ন নিয়ে ব্যাট করতে নামেন শান্ত। তবে ১৪৮ রানে থেমে যান তিনি ২৭৯ বলের ইনিংসে ছিল ১৫টি চার ও একটি ছক্কা।
মুশফিকের সপ্তম দেড়শ, লিটনের ধারাবাহিকতা তারপর হঠাৎ ধস : শান্তের বিদায়ের পর লিটন দাসকে সঙ্গে নিয়ে মুশফিক আবারও ইনিংস মেরামত করেন। দু’জন মিলে যোগ করেন ১৪৯ রান। মুশফিক তুলে নেন তার টেস্ট ক্যারিয়ারের সপ্তম দেড়শ। ৩৫০ বল মোকাবিলা করে করেন ১৬৩ রান, ইনিংসটি ছিল ধীরস্থির ও ধৈর্যশীল মাত্র ৯টি চারে সাজানো। অপরপ্রান্তে লিটন দাস খেলেন ছন্দময় ইনিংস। ১২৩ বলে ৯০ রানে শেষ হয় তার ইনিংস, যেখানে ছিল ১১টি চার ও একটি ছক্কা। কিন্তু এরপরই নামে বৃষ্টি। বৃষ্টির পরেই যেন বদলে যায় গলের আবহ। একের পর এক উইকেট হারাতে থাকে বাংলাদেশ। মুশফিক, লিটন, জাকের আলী (৮), নাঈম হাসান (১১) ও তাইজুল ইসলাম (৬) সবাই ফিরে যান দ্রুত। শেষ বেলায় বাংলাদেশ হারায় ৫ উইকেট মাত্র ৬১ রানে। দিন শেষে অপরাজিত থাকেন হাসান মাহমুদ ও নাহিদ রানা। তৃতীয় দিনে তারা ব্যাট করবেন নাকি ইনিংস ঘোষণা করে ফিল সিমন্স লঙ্কানদের ব্যাট করতে পাঠাবেন তা জানা যাবে সকালে।
শ্রীলঙ্কার বোলিংয়ে শেষ বেলার উল্লাস : বাংলাদেশের ইনিংসে বল হাতে নিয়ন্ত্রিত বোলিং উপহার দেন তিন লঙ্কান বোলার। পেসার আসিথা ফার্নান্দো ৩ উইকেট তুলে নেন। বাঁহাতি-ডানহাতি দুই হাতেই স্পিন করতে পারা থারিন্ডু রত্নায়েকে-ও নিয়েছেন ৩ উইকেট। তবে শেষ বেলায় রীতিমতো ঝড় তোলেন মিলান রত্নায়েকে পিছিয়ে থাকা ম্যাচে হঠাৎ ৩ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে ধসিয়ে দেন তিনি।
বড় স্কোর, তবুও অশনি সঙ্কেত : যদিও ইনিংসের স্কোরবোর্ডে চোখ রাখলে বোঝা যাবে না, বাংলাদেশ কী ভয়ংকর পতনের মধ্য দিয়ে গেছে দিনের শেষ অংশে। গল টেস্টে নিজেদের ইতিহাসে অন্যতম বড় ইনিংস গড়ে টাইগাররা ম্যাচে এগিয়ে থাকলেও, শেষবেলার ছন্দপতন লঙ্কানদের ম্যাচে ফিরিয়ে এনেছে। এখন দেখার বিষয়, বাংলাদেশ বোলাররা কিভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায় সেই নির্ভর করেই ম্যাচের গতিপথ।
গল টেস্টের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের স্কোর
৯ উইকেটে ৪৮৪ রান (শান্ত ১৪৮, মুশফিক ১৬৩, লিটন ৯০)
লঙ্কান বোলারদের সেরা
আসিথা ফার্নান্দো ৩/৮৫, থারিন্ডু রত্নায়েকে ৩/৯৭, মিলান রত্নায়েকে ৩/৬৫
ভোরের আকাশ/এসএইচ