চট্টগ্রাম টেস্ট
রাজীব দাস
প্রকাশ : ২৯ এপ্রিল ২০২৫ ১১:০৬ এএম
তাইজুল-নাঈমের আঘাতে বাংলাদেশের কামব্যাক
চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিনের প্রথম সেশনে দারুণ শুরু করেছিল বাংলাদেশ। টস জিতে ব্যাট করতে নামা জিম্বাবুয়ের ৭২ রানের মধ্যে দুটি উইকেট তুলে নিয়ে সফরকারীদের ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছিল স্বাগতিকরা। তবে দ্বিতীয় সেশনে দৃঢ় ব্যাটিংয়ে পরিস্থিতি নিজেদের অনুকূলে আনে জিম্বাবুয়ে। বিশেষ করে নিক ওয়েলস ও শন উইলিয়ামসনের ব্যাটে কিছুটা চাপে পড়ে বাংলাদেশ। তবে দিনের শেষ সেশনটা যেন রূপ নেয় বাংলাদেশের স্পিন জাদুর প্রদর্শনীতে।
এক সেশনে সাত উইকেটের ধস : ম্যাচ ঘুরিয়ে দিল বাংলাদেশ- তৃতীয় সেশনের শুরুতেই বড় ধাক্কা খায় জিম্বাবুয়ে। ফিফটি করা নিক ওয়েলস ক্যাম্পের কারণে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে মাঠ ছাড়তেই বাংলাদেশের স্পিন আক্রমণ ঝাঁপিয়ে পড়ে জিম্বাবুয়ের ব্যাটিং লাইনে। এক সেশনেই মাত্র ৪০ রানের ব্যবধানে সাতটি উইকেট তুলে নেয় স্বাগতিকরা। ১৮ ওভারে নাঈম হাসান ও তাইজুল ইসলামের দুর্দান্ত স্পিন জুটিতে চূর্ণ হয়ে যায় সফরকারীরা। অধিনায়ক ক্রেগ আরভিন ১৭৭ রানে আউট হন, এরপর দ্রুতই জিম্বাবুয়ের নবম উইকেট পড়ে ২১৭ রানে। শেষ উইকেটে উইকেটরক্ষক তাফাদওয়া সিগা কিছুটা প্রতিরোধ গড়লেও দিন শেষে ৯ উইকেটে ২২৭ রান করে থামে জিম্বাবুয়ে। এই সেশনে তাইজুল একাই নেন চারটি উইকেট, নাঈম তুলে নেন দুইটি। এই দুই স্পিনারের দাপটেই ম্যাচের রাশ আবার নিজেদের হাতে নেয় বাংলাদেশ।
ওয়েলস ও উইলিয়ামসনের সাহসী লড়াই : টপ অর্ডারে জিম্বাবুয়ের ব্যাটিংয়ের মূল ভরসা হয়ে ওঠেন নিক ওয়েলস ও শন উইলিয়ামসন। ৫৪ রানে অপরাজিত থাকার সময় ক্যাম্পের কারণে মাঠ ছাড়েন ওয়েলস। পরে আবার মাঠে ফিরলেও আর রান যোগ করতে পারেননি। তার ইনিংসে ছিল তিনটি চার ও দুটি ছক্কার মার। শন উইলিয়ামসন বরং দীর্ঘ সময় লড়াই চালিয়ে যান। ১৬৬ বল মোকাবিলা করে সাতটি চার ও একটি ছক্কায় ৬৭ রানের এক ধীরস্থির ইনিংস খেলে ফেরেন। তার উইকেট তুলে নেয় নাঈম হাসান, যা বাংলাদেশের জন্য ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্রেকথ্রু।
টার্নিং পয়েন্ট : ওয়েলসের রিটায়ার্ড হার্ট- ৫৬তম ওভারের পর চা বিরতিতে যাওয়ার সময় জিম্বাবুয়ের অবস্থা ছিল নিয়ন্ত্রিত। তবে দ্বিতীয় সেশনের ঠিক পরপরই নিক ওয়েলসের হঠাৎ মাঠ ছেড়ে যাওয়া ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। ওয়েলসের বিদায়ের পর দ্রুত উইকেট হারাতে থাকে সফরকারীরা। ক্রেগ আরভিন আউট হওয়ার পর যেন আর থামানো যায়নি বাংলাদেশের স্পিন আক্রমণ। বলা চলে, ওয়েলসের ক্যাম্পই হয়ে দাঁড়ায় বাংলাদেশের প্রত্যাবর্তনের মূল সূত্র।
অভিষেকে তানজিমের উজ্জ্বল মুহূর্ত : চট্টগ্রাম টেস্ট দিয়ে বাংলাদেশের টেস্ট দলে অভিষেক হয়েছে তরুণ ফাস্ট বোলার তানজিম হাসান সাকিবের। প্রথম দিন নিজের ১১তম ওভারেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম উইকেটের স্বাদ পান তিনি। উইকেটের পেছনে ক্যাচে পরিণত করে ফেরান ব্রায়ান বেনেটকে। যদিও তানজিম খানিকটা খরুচে ছিলেন ১০ ওভারে ৪৯ রান দেন তবে নতুন বলে উইকেট নেওয়ার মতো সুইং ও লাইন-লেংথে ধারাবাহিকতা দেখিয়েছেন, যা ভবিষ্যতের জন্য আশাব্যঞ্জক।
তাইজুলের ফাইফারে চট্টগ্রামে স্পিন সাম্রাজ্যের নতুন পালক : বাংলাদেশের বাঁ-হাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম আবারও প্রমাণ করলেন কেন তিনি দেশের অন্যতম সেরা টেস্ট বোলার। প্রথম ইনিংসে মাত্র ৬০ রান দিয়ে তুলে নেন পাঁচটি মূল্যবান উইকেট। চট্টগ্রামে এটি তার টানা দ্বিতীয় ফাইফার। ৫৩তম টেস্ট খেলতে নামা তাইজুলের টেস্ট উইকেট সংখ্যা দাঁড়াল ২২৪। এ নিয়ে ক্যারিয়ারে ১৬ বার পাঁচ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করলেন তিনি। এর মধ্যে দুইবার ম্যাচে ১০ উইকেট নেওয়ার রেকর্ডও আছে তার নামের পাশে। তাইজুলের স্পিন দুর্দশায় বিধ্বস্ত হয়ে পড়া জিম্বাবুয়ের ব্যাটিং লাইনআপ এখন বাংলাদেশের জয়ের স্বপ্ন আরও উজ্জ্বল করে তুলেছে।
চট্টগ্রাম টেস্ট ১ম দিন সংক্ষিপ্ত স্কোর : জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংস: ৯০ ওভারে ২২৭/৯ (উইলিয়ামসন ৬৭, ওয়েলস ৫৪, বেনেট ২১; তাইজুল ৫/৬০, নাঈম ২/৪২, তানজিম ১/৪৯)।
ভোরের আকাশ/এসএইচ
চট্টগ্রাম টেস্ট
রাজীব দাস
প্রকাশ : ২৩ ঘন্টা আগে
আপডেট : ৪২ মিনিট আগে
তাইজুল-নাঈমের আঘাতে বাংলাদেশের কামব্যাক
চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিনের প্রথম সেশনে দারুণ শুরু করেছিল বাংলাদেশ। টস জিতে ব্যাট করতে নামা জিম্বাবুয়ের ৭২ রানের মধ্যে দুটি উইকেট তুলে নিয়ে সফরকারীদের ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছিল স্বাগতিকরা। তবে দ্বিতীয় সেশনে দৃঢ় ব্যাটিংয়ে পরিস্থিতি নিজেদের অনুকূলে আনে জিম্বাবুয়ে। বিশেষ করে নিক ওয়েলস ও শন উইলিয়ামসনের ব্যাটে কিছুটা চাপে পড়ে বাংলাদেশ। তবে দিনের শেষ সেশনটা যেন রূপ নেয় বাংলাদেশের স্পিন জাদুর প্রদর্শনীতে।
এক সেশনে সাত উইকেটের ধস : ম্যাচ ঘুরিয়ে দিল বাংলাদেশ- তৃতীয় সেশনের শুরুতেই বড় ধাক্কা খায় জিম্বাবুয়ে। ফিফটি করা নিক ওয়েলস ক্যাম্পের কারণে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে মাঠ ছাড়তেই বাংলাদেশের স্পিন আক্রমণ ঝাঁপিয়ে পড়ে জিম্বাবুয়ের ব্যাটিং লাইনে। এক সেশনেই মাত্র ৪০ রানের ব্যবধানে সাতটি উইকেট তুলে নেয় স্বাগতিকরা। ১৮ ওভারে নাঈম হাসান ও তাইজুল ইসলামের দুর্দান্ত স্পিন জুটিতে চূর্ণ হয়ে যায় সফরকারীরা। অধিনায়ক ক্রেগ আরভিন ১৭৭ রানে আউট হন, এরপর দ্রুতই জিম্বাবুয়ের নবম উইকেট পড়ে ২১৭ রানে। শেষ উইকেটে উইকেটরক্ষক তাফাদওয়া সিগা কিছুটা প্রতিরোধ গড়লেও দিন শেষে ৯ উইকেটে ২২৭ রান করে থামে জিম্বাবুয়ে। এই সেশনে তাইজুল একাই নেন চারটি উইকেট, নাঈম তুলে নেন দুইটি। এই দুই স্পিনারের দাপটেই ম্যাচের রাশ আবার নিজেদের হাতে নেয় বাংলাদেশ।
ওয়েলস ও উইলিয়ামসনের সাহসী লড়াই : টপ অর্ডারে জিম্বাবুয়ের ব্যাটিংয়ের মূল ভরসা হয়ে ওঠেন নিক ওয়েলস ও শন উইলিয়ামসন। ৫৪ রানে অপরাজিত থাকার সময় ক্যাম্পের কারণে মাঠ ছাড়েন ওয়েলস। পরে আবার মাঠে ফিরলেও আর রান যোগ করতে পারেননি। তার ইনিংসে ছিল তিনটি চার ও দুটি ছক্কার মার। শন উইলিয়ামসন বরং দীর্ঘ সময় লড়াই চালিয়ে যান। ১৬৬ বল মোকাবিলা করে সাতটি চার ও একটি ছক্কায় ৬৭ রানের এক ধীরস্থির ইনিংস খেলে ফেরেন। তার উইকেট তুলে নেয় নাঈম হাসান, যা বাংলাদেশের জন্য ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্রেকথ্রু।
টার্নিং পয়েন্ট : ওয়েলসের রিটায়ার্ড হার্ট- ৫৬তম ওভারের পর চা বিরতিতে যাওয়ার সময় জিম্বাবুয়ের অবস্থা ছিল নিয়ন্ত্রিত। তবে দ্বিতীয় সেশনের ঠিক পরপরই নিক ওয়েলসের হঠাৎ মাঠ ছেড়ে যাওয়া ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। ওয়েলসের বিদায়ের পর দ্রুত উইকেট হারাতে থাকে সফরকারীরা। ক্রেগ আরভিন আউট হওয়ার পর যেন আর থামানো যায়নি বাংলাদেশের স্পিন আক্রমণ। বলা চলে, ওয়েলসের ক্যাম্পই হয়ে দাঁড়ায় বাংলাদেশের প্রত্যাবর্তনের মূল সূত্র।
অভিষেকে তানজিমের উজ্জ্বল মুহূর্ত : চট্টগ্রাম টেস্ট দিয়ে বাংলাদেশের টেস্ট দলে অভিষেক হয়েছে তরুণ ফাস্ট বোলার তানজিম হাসান সাকিবের। প্রথম দিন নিজের ১১তম ওভারেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম উইকেটের স্বাদ পান তিনি। উইকেটের পেছনে ক্যাচে পরিণত করে ফেরান ব্রায়ান বেনেটকে। যদিও তানজিম খানিকটা খরুচে ছিলেন ১০ ওভারে ৪৯ রান দেন তবে নতুন বলে উইকেট নেওয়ার মতো সুইং ও লাইন-লেংথে ধারাবাহিকতা দেখিয়েছেন, যা ভবিষ্যতের জন্য আশাব্যঞ্জক।
তাইজুলের ফাইফারে চট্টগ্রামে স্পিন সাম্রাজ্যের নতুন পালক : বাংলাদেশের বাঁ-হাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম আবারও প্রমাণ করলেন কেন তিনি দেশের অন্যতম সেরা টেস্ট বোলার। প্রথম ইনিংসে মাত্র ৬০ রান দিয়ে তুলে নেন পাঁচটি মূল্যবান উইকেট। চট্টগ্রামে এটি তার টানা দ্বিতীয় ফাইফার। ৫৩তম টেস্ট খেলতে নামা তাইজুলের টেস্ট উইকেট সংখ্যা দাঁড়াল ২২৪। এ নিয়ে ক্যারিয়ারে ১৬ বার পাঁচ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করলেন তিনি। এর মধ্যে দুইবার ম্যাচে ১০ উইকেট নেওয়ার রেকর্ডও আছে তার নামের পাশে। তাইজুলের স্পিন দুর্দশায় বিধ্বস্ত হয়ে পড়া জিম্বাবুয়ের ব্যাটিং লাইনআপ এখন বাংলাদেশের জয়ের স্বপ্ন আরও উজ্জ্বল করে তুলেছে।
চট্টগ্রাম টেস্ট ১ম দিন সংক্ষিপ্ত স্কোর : জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংস: ৯০ ওভারে ২২৭/৯ (উইলিয়ামসন ৬৭, ওয়েলস ৫৪, বেনেট ২১; তাইজুল ৫/৬০, নাঈম ২/৪২, তানজিম ১/৪৯)।
ভোরের আকাশ/এসএইচ