স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশ : ০৬ জুন ২০২৫ ১১:২৮ এএম
৯ গোলে ফ্রান্সকে হারিয়ে ফাইনালে স্পেন
স্পেনের তরুণ বিস্ময় লামিন ইয়ামালের দুর্দান্ত নৈপুণ্যে ফ্রান্সকে ৫-৪ গোলে হারিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো নেশন্স লিগের ফাইনালে উঠেছে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। রোমাঞ্চে ভরা এই সেমিফাইনাল জয়ে স্পেনের সামনে এখন প্রতিবেশী পর্তুগাল।
জার্মানির স্টুটগার্টে এমএইচপি অ্যারেনায় বৃহস্পতিবার প্রথমার্ধেই দারুণ ঝলকে ২৫ মিনিটের মধ্যে ২-০ গোলের লিড নেয় ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন স্পেন। দারুণ দুটি গোল করেন নিকো উইলিয়ামস ও মিকেল মেরিনো।
দ্বিতীয়ার্ধের ৫৪ মিনিটে পেনাল্টি থেকে স্পেনের হয়ে তৃতীয় গোলটি করেন ১৭ বছর বয়সী ইয়ামাল। এক মিনিট না যেতেই দুর্দান্ত এক ফিনিশিংয়ে চতুর্থ গোলটি করেন তার বার্সেলোনা সতীর্থ পেদ্রি।
ম্যাচের আগে আলোচনায় ছিল তরুণ তারকাদের লড়াই এবং ব্যালন ডি’অর প্রত্যাশীদের দ্বৈরথ। কিন্তু মিউনিখে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার ক্লান্তি ফ্রান্সের পারফরম্যান্সে স্পষ্ট। বিশেষ করে পিএসজি তারকা দেজিরে দোয়ে ও উসমান দেম্বেলে ছিলেন একেবারেই ফ্লপ।
তবে গোলের বন্যা এখানেই শেষ হয়নি। ঘণ্টা পার হওয়ার আগেই ফ্রান্সের হয়ে পেনাল্টি থেকে গোল করেন কিলিয়ান এমবাপে। এরপর ৬৭ মিনিটে ইয়ামাল নিজের দ্বিতীয় এবং দলের পঞ্চম গোলটি করে ম্যাচকে করে তোলেন আরও জমজমাট।
তবে এরপরই শুরু হয় ফ্রান্সের অবিশ্বাস্য কামব্যাকের চেষ্টা। রায়ান শারকির অসাধারণ গোল, দানি ভিভিয়ানের আত্মঘাতী গোল এবং বদলি খেলোয়াড় র্যান্ডাল কলো মুয়ানির গোল স্পেনের জয় নিয়ে তৈরি করেছিল শঙ্কা। তবে শেষ পর্যন্ত ৫-৪ ব্যবধানে জয় তুলে নেয় লুইস ডে লা ফুয়েন্তের দল।
ডে লা ফুয়েন্তের কৌশলে দুই উইঙ্গার নিকো উইলিয়ামস ও ইয়ামাল বড় ভূমিকা রাখেন। ম্যাচের শুরুতেই এমবাপে দারুণ একটি সুযোগ নষ্ট করেন, এরপর থিও হার্নান্দেজের শট লাগে বারপোস্টে। তখনই উইলিয়ামসের গোলে লিড নেয় স্পেন।
মাত্র তিন মিনিট পর আরেকটি দারুণ পাস থেকে মেরিনোর গোল, স্পেন ২-০ তে এগিয়ে যায়। কোচ দিদিয়ের দেশমের ১৩ বছরের দায়িত্বকালে এটাই মাত্র দ্বিতীয়বার, যখন ফ্রান্স প্রথম ৩০ মিনিটেই দুটি গোল হজম করে। ফ্রান্স এরপরও কিছু সুযোগ তৈরি করে, কিন্তু কাজে লাগাতে পারেনি। এরই মাঝে ইয়ামাল, যিনি ব্যালন ডি’অরের দৌড়ে অন্যতম আলোচিত নাম, পেনাল্টি থেকে স্পেনের তৃতীয় গোলটি করেন।
ইয়ামালের বয়স এখনও ১৮ না হলেও বার্সেলোনার হয়ে ইতোমধ্যেই ১০০’র বেশি ম্যাচ খেলে ফেলেছেন। পেদ্রির দারুণ গোলের পর তিনি দ্বিতীয়বারের মতো ফ্রান্সের জালে বল পাঠান, দারুণ শান্তিতে গোলরক্ষক মাইক মেনিয়ঁকে পরাস্ত করেন। লিয়নের তরুণ তারকা শারকির গোলটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারত, কিন্তু তার কিছু পরই ভিভিয়ানের আত্মঘাতী গোল স্পেন সমর্থকদের কিছুটা চিন্তায় ফেলে।
শেষদিকে বদলি খেলোয়াড় কলো মুয়ানির গোল অতিরিক্ত সময়ের সম্ভাবনা তৈরি করেছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি। তবে তার গোলই এই সেমিফাইনালকে নেশন্স লিগ ইতিহাসের প্রথম ৯ গোলের ম্যাচ বানিয়েছে। আর ১৯৬৯ সালের পর এবারই প্রথমবার ফ্রান্স এক ম্যাচে ৫ গোল হজম করল।
ম্যাচ শেষে স্প্যানিশ টেলিভিশন টেলেদেপোর্তেকে ইয়ামাল বলেন, “আমি সবসময় মা’কে বলি, আমি নিজের সবটা দিয়ে খেলি। এটাই আমার ফুটবল খেলার প্রেরণা, এজন্যই আমি সকালে ঘুম থেকে উঠি।”
তিনি আরও বলেন, “ফ্রান্স দারুণ একটি দল, বিশ্বমানের খেলোয়াড়ে ভরা। ৬০ মিনিটে স্কোরলাইন অনেক বড় হয়ে গেলেও তারা এমন খেলোয়াড় নিয়ে মাঠে নামে, যারা যেকোনো সময় ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারে।” “পর্তুগাল আর আমরা, দুই দলই শক্তিশালী, দুই দলেরই আছে বিশ্বমানের খেলোয়াড়। সেরা দলই জিতবে। আমি চাই ট্রফিটা স্পেনে আনতে।”
গত দুই বছরে একবার ছাড়া আর হারেনি স্পেন, আর সেই ধারাবাহিকতারই ফল ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে শিরোপা জয়।
ম্যাচ শেষে ফ্রান্স অধিনায়ক এমবাপে বলেন, “কিছু সময় আমরা খুব ভালো খেলেছি, অনেক দিন পর এমন কিছু দেখেছি। কিন্তু প্রথমার্ধে মাত্র ১০ মিনিটেই আমরা দুই গোল খেয়ে বসেছি। একই চিত্র দ্বিতীয়ার্ধেও।”
“পুরো ৯০ মিনিট ধরে আমরা ধারাবাহিক ছিলাম না। অবশ্য কিছু উন্নতি হয়েছে। তবে জয় না এলে নেতিবাচক দিকগুলোই সামনে চলে আসে। তবে সব কিছুই যে খারাপ ছিল, তা নয়।”
ভোরের আকাশ/আজাসা