স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশ : ০৭ আগস্ট ২০২৫ ১০:৫২ এএম
সংগৃহীত ছবি
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)-এর আসন্ন আসর সামনে রেখে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ নিয়ে বিসিবি পরিচালক মণ্ডলীতে চাঙা হয়েছে মতবিরোধ। এ নিয়ে বোর্ডের অভ্যন্তরে দুই ধরনের মত উঠে এসেছে।
একপক্ষ চান পুরো ইভেন্ট পরিচালনার প্যাকেজ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে বিক্রি করে দেওয়া হোক, অন্যপক্ষ চান নির্দিষ্ট নিট ফি দিয়ে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থা নিয়োগ দেওয়া হোক। সহজ চোখে প্যাকেজ বিক্রির মাধ্যমে বিসিবির জন্য লাভজনক মনে হলেও বোর্ড কর্তারা আশঙ্কা করছেন; লাভের নিশ্চয়তা না থাকলে টেন্ডারজয়ী প্রতিষ্ঠান চুক্তি বাতিল করে সরে যেতে পারে, এতে বিপিএল পড়তে পারে অনিশ্চয়তার মুখে।
পরামর্শক ও প্যাকেজ: দুই ধরনের প্রস্তাবনা - এই অনিশ্চয়তা মাথায় রেখেই বিপিএলের গভর্নিং কাউন্সিল আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে দুটি ধরনের প্রস্তাবনা চেয়েছে একটি পূর্ণাঙ্গ ইভেন্ট প্যাকেজ, অন্যটি কনসালট্যান্সি ভিত্তিক সহযোগিতা। সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত প্রার্থীরা নিজেদের প্রস্তাবনা জমা দেওয়ার পাশাপাশি আর্থিক মডেলও উপস্থাপন করে।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভারতীয় প্রতিষ্ঠান রিয়াল ইমপ্যাক্ট এবং অ্যাবসুলেট লেজেন্ডস এরা যৌথভাবে ২০২৫-২৬ বিপিএলের পুরো প্যাকেজ নিতে চেয়েছে ২০ লাখ ডলারের বিনিময়ে। তারা বাংলাদেশি কোনো ব্যাংকের মাধ্যমে বিসিবিকে ২০ লাখ ডলারের ব্যাংক গ্যারান্টির আশ্বাসও দিয়েছে। বাকী চার প্রতিষ্ঠান ব্যাংক গ্যারান্টি দিতে নারাজ, যা বোর্ডের কিছু পরিচালকের কাছে প্যাকেজ বিক্রির পক্ষে একটি বড় যুক্তি হিসেবে দেখা দিয়েছে। কারণ এতে ঝুঁকি হ্রাস পায়।
অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান ও অভিজ্ঞতা: বিসিবি যে বিজ্ঞাপন দিয়েছে, তাতে মার্কেটিং, ব্র্যান্ডিং ও কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আগ্রহী পরামর্শক চেয়ে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এতে সাড়া দেয় পাকিস্তানের অ্যাপেক্স স্পোর্টস কনসালটিং, ইংল্যান্ডের আইএমজি, ভারতের রিয়াল ইমপ্যাক্ট ও অ্যাবসুলেট লেজেন্ডস, আমেরিকার আইপিজি গ্রুপ ও বাংলাদেশের মাইন্ড ট্রি লিমিটেড, এবং ট্র্যান্সপোর্ট গ্রুপ।
এসব প্রতিষ্ঠান বিপিএলের সম্প্রচার, ব্র্যান্ডিং, প্রয়োজনে অনলাইন স্ট্রিমিংসহ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে আগ্রহী। ভারতীয় রিয়াল ইমপ্যাক্ট শুরু থেকেই বিপিএলে টিভি প্রডাকশনের কাজ করছে, এমনকি বিসিবির আন্তর্জাতিক সিরিজেরও সম্প্রচার ব্যবস্থা তারাই দেখে। দেশীয় অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবার তারা অ্যাবসুলেট লেজেন্ডের সঙ্গে কনসোর্টিয়াম গড়েছে। অনলাইন ব্রডকাস্টে চারকে (৪কে) সুবিধা থাকবে বলে অ্যাবসুলেট লেজেন্ড বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে।
পরিচালকরা বেশিরভাগই প্যাকেজ বিক্রির পক্ষে ঝুঁকছেন, কারণ ব্যাংক গ্যারান্টি গ্রহণযোগ্য হলে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। তবে স্থানীয় ফ্র্যাঞ্চাইজি, স্পন্সর, ব্র্যান্ডিংসহ গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে বিসিবির অনুমতি বাধ্যতামূলক রাখার সুপারিশও এসেছে, যাতে ভবিষ্যৎ বিতর্ক এড়ানো যায়। এর পেছনে বিদ্যমান গেম অন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে পূর্বের ক্ষতিকর অভিজ্ঞতা অন্যতম কারণ বিসিবি চেয়ারম্যান মাহাবুবুল আনাম বলেছেন, বিপিএলের ইমেজ পুনরুদ্ধার, আর্থিকভাবে লাভবান ও টেকসই মডেল গড়ার লক্ষ্যেই সঠিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করা হবে। আগের ফাঁদে যেন আর না পড়ি।
চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়: পরিশেষে, ৯ আগস্ট বিসিবির বোর্ড সভায় শেষ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে—বিপিএল ইভেন্ট পরিচালনার পুরো প্যাকেজ বিক্রি করা হবে, না কি নিট ফি ভিত্তিক ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়া হবে। বোর্ডের এই সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে বিপিএলের ভবিষ্যত আর্থিক ও পরিচালন কাঠামো।
ভোরের আকাশ/তাকা