মাজাহারুল ইসলাম
প্রকাশ : ১৪ আগস্ট ২০২৫ ০৮:৩৯ এএম
ছবি: সংগৃহীত
২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে দীর্ঘ আকাঙ্ক্ষিত জনপ্রত্যাশায় ভোট। তবে, জুলাই সনদ, বিচার ও সংস্কারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে ভোটের পক্ষে-বিপক্ষে নিয়ে চলছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বাগযুদ্ধ। অর্ন্তবর্তী সরকারের ঘোষণা মতে, ফেব্রুয়ারিতেই ভোট মাথায় নিয়ে বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল নির্বাচনী মাঠে তৎপরতা শুরু করেছেন।
ইতোমধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্বাচনী মাঠে থাকা ৪২ দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। আরও ২২ দলের সঙ্গে অতিশিগরই বৈঠক করার কথা রয়েছে। অন্যদিকে, সংস্কার ও বিচার শেষে ‘জুলাই জাতীয় সনদ’-এর আইনগত স্বীকৃতি প্রদান ও এই সনদের ভিত্তিতে পিআরে ভোট করার দাবিতে অনড় জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
অর্ন্তবর্তী সরকার প্রধান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস ফেব্রুয়ারিতেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে বদ্ধপরিকর। অবাধ, সুষ্ঠু ও দেশ-বিদেশেসহ সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য ভোট অনুষ্ঠানে আইন, স্বরাষ্ট্র ও অর্থসহ নিবার্চন সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি নিয়ে এগুচ্ছে সরকার ও নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আইন শৃঙ্খলার পাশাপাশি নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে ইসি।
একইসঙ্গে ডিসেম্বরে তফসিল ঘোষণার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)। তারপরও নির্বাচন ঠেকাতে নানামুখী চক্রান্ত ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। ভোটবিরোধী সব চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করার জন্য নেতাকর্মীদের সজাগ ও সতর্ক থাকার নিদের্শ দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
মঙ্গলবার মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইবরাহিমের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরককারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ফেব্রুয়ারিতেই হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। আগামী ফেব্রুয়ারিতে নতুন সরকারের জন্য নির্বাচনের আয়োজন করব। প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণার বিপরীতে মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে এক কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেছেন, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে ফেব্রুয়ারিতে। নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হবে না।
এ বিষয়ে ফেব্রুয়ারিতে ভোট হওয়ার পক্ষের দলগুলো বলছে, অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যাহত করতে নানামুখী ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে গতকাল বুধবার অর্ন্তবর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, কোনো ব্যক্তি বা দলের কেউ বললেই নির্বাচন বন্ধ হয়ে যাবে না।
তিনি আরও বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর করার লক্ষ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় সব ধরনের সহায়তা করছে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সব ধরনের লজিস্টিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির নেতারা বলেন, কয়েকটি রাজনৈতিক দল দেশে এক ধরনের অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করছে। বর্তমান সরকারের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করা গেলে দেশে তাদের এক ধরনের কর্তৃত্ব থাকবে। নির্বাচন হলে তারা হয়তো ক্ষমতায় যেতে পারবে না- এমনটি ভেবে বিএনপিকে ঠেকানোর অংশ হিসেবে নানা ঘটনার পরিকল্পনা করছে তারা। এ কাজে নতুন একটি দলকে তারা ব্যবহার করছে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, নির্বাচন ঠেকানো। কারণ নির্বাচন ছাড়াই যারা ক্ষমতার স্বাদ পাচ্ছে, নির্বাচনের পর তাদের সেই ক্ষমতা না-ও থাকতে পারে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, একটি মহল দেখাতে চায়, দেশে নির্বাচনের পরিবেশ নেই। বিভিন্ন কায়দায় ইস্যু সৃষ্টি করে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে। সবকিছুর পেছনে একটি কারণ। তা হলো নির্বাচনকে বিলম্বিত করা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেছেন, ধমক দিয়ে যারা নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে চান, তারা জনগণের কথা ভাবেন না। তিনি বলেন, নির্বাচন হতে দেবে না বলে যারা হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন, তাদের বক্তব্যের মধ্য স্বৈরাচারের পদধ্বনিও শুনতে পাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন। পিআর পদ্ধতির সমালোচনা করেও তিনি আরও বলেন, পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় বসতে আগ্রহীরাই সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির ভোট চান।
এ বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, নির্বাচন নিয়ে জামায়াতের কোনো আপত্তি নেই। তবে সংসদের উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষে পিআর পদ্ধতিতে ভোট চাওয়ার দাবি দলটির।
জামায়াতে ইসলামী সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, প্রয়োজনীয় সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে তা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা হবে। নির্দলীয় সরকারের অধীনেই ‘জুলাই সনদের’ আইনি ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করে সেই আলোকে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানান তিনি।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ছাড়া নির্বাচনে অংশ নেবে না এনসিপি। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে বলতে চাই, যতগুলো অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে ক্ষমতায় বসেছেন, তার একটি হলো নির্বাচন। শুধু নির্বাচন দেওয়া আপনাদের অ্যাসাইনমেন্ট নয়। সংস্কার, নতুন সংবিধান আর হাসিনার বিচার ছাড়া নির্বাচন নয়।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি ও সনদের ভিত্তিতে ভোটের আয়োজন করতে হবে। একইসঙ্গে সংস্কার ও বিচারকে পাশ কাটিয়ে নির্বাচন দিলে, তা মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।
ভোরের আকাশ/এসএইচ