সাংবাদিকদের সুরক্ষা
ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩১ আগস্ট ২০২৫ ১০:৫৬ পিএম
সংগৃহীত ছবি
সাংবাদিকদের কল্যাণ ও স্বাধীনতার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি আদায় করার পরামর্শ দিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ।
তিনি বলেছেন, রাজনীতিবিদরা যখন ক্ষমতায় যাবেন, তখন আপনাদের কাছেই তো আসতে হবে। তাদের ধরেন এখনই। তাদের জিজ্ঞাসা করেন, সাংবাদিকদের কল্যাণে কী প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। এই অঙ্গীকারগুলো করতে বলুন।
রোববার গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ও পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। ঢাকায় দ্য ডেইলি স্টার ভবনে এ আলোচনা সভা আয়োজন করে ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার (বিজেসি)।
সাংবাদিক সংগঠনগুলোর উদ্দেশে আলী রীয়াজ বলেন, রাজনীতিবিদরা যখন ক্ষমতায় যাবেন, তখন আপনাদের কাছেই তো আসতে হবে। তাদের ধরেন এখনই। তাদের জিজ্ঞেসা করেন, সাংবাদিকদের কল্যাণে কী প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। এই অঙ্গীকারগুলো করতে বলুন।
তিনি বলেন, গণমাধ্যম কর্মীদের ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় যাওয়ার বিষয়ে কোনো প্রতিষ্ঠানই সুরক্ষা ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করে না। এর জন্য গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের দরকার হয় না।
আলী রীয়াজ বলেন, পেশাগত দায়িত্বের ক্ষেত্রে ওয়েজ বোর্ডের প্রশ্নটা ওঠে। অনেকে বলেছেন, ওয়েজ বোর্ড তো বাস্তবায়ন হয় না, তাহলে ওয়েজ বোর্ড করে লাভ কী? কোনো লাভ নেই। কেন হয় না ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন? কারণ, প্রতিষ্ঠানটি কোনোভাবেই ব্যবসায়িক লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়নি। একজন দোকানদার দোকান চালান, লাভজনক না হলে বন্ধ করে দেন। গণমাধ্যম মালিকরা লাভজনক না হওয়া সত্ত্বেও কেন গণমাধ্যম চালান? নিশ্চয়ই একটা কারণ থাকতে হবে। এই যে প্রতিষ্ঠানগুলো লাভজনক হবে কীভাবে- সেই প্রশ্নটা তুলুন।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাকে পেশাগত জায়গা থেকে যে সুবিধা দেওয়ার কথা, অর্থাৎ, দায়িত্ব পালনের জন্য যে সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার কথা- চাকরি দেওয়ার সাথে সাথে, সেই কাজটা মালিক করে না। কারণ মালিক জানে, আপনার সাথে এই আচরণ করার পরেও আপনি এই সরকার, রেজিম বা আদর্শকে সার্ভ করবেন অথবা আপনি থাকবেন। আর উনি (মালিক) এটা দিয়ে সুবিধা নেবেন। সেই কারণে মালিকানার যে ধরন তৈরি হয়েছে, সেটা অব্যাহত রেখে সংবাদপত্র বলেন, টেলিভিশন বলেন, রেডিও বলেন- স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করা দুরূহ।
দৈনিক ইত্তেফাকের নির্বাহী সম্পাদক সালেহউদ্দিন বলেন, আমাদের এখন যে সংকট, এতদিন ধরে যে সংকটগুলো আছে, আমাদের সাংবাদিকতার মান, মর্যাদা, রুটি-রুজিতে আঘাত করছে টাউট সাংবাদিকতা, ব্ল্যাকমেইলিং সাংবাদিকতা এবং দালালি সাংবাদিকতা। যেটা আমরা দীর্ঘদিন করে আসছি এবং এখনও করছি। এই দালালি সাংবাদিকতা করেই আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করেছি।
সরকার গণমাধ্যম কমিশনকে ফেলনা মনে করে মন্তব্য করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মিনহাজ উদ্দীন বলেন, সরকার গণমাধ্যম কমিশনই করবে না, সম্প্রচার কমিশন তো অনেক দূরের কথা। কারণ, এগুলো করলে সম্প্রচার মন্ত্রণালয় ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের কর্তৃত্ব খর্ব হবে।
গণমাধ্যমকে বাদ দিয়ে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়তে চাইলে সেটি দুর্বল হবে মন্তব্য করে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক হাসনাইন খুরশেদ বলেন, গণমাধ্যমকে সংস্কারে প্রাধান্য দিতে হবে। মালিকদের হস্তক্ষেপ থেকে গণমাধ্যমকে দূরে রাখতে হবে।
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশে ঘাটতি রয়েছে বলে মনে করেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, অংশীজনদের সঙ্গে কথা বলে সেই ঘাটতি দূর করতে হবে। ওয়েজ বোর্ড করে লাভ কি- যদি সেটি বাস্তবায়ন না হয়?
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাধারণ সম্পাদক মাইনুল সোহেল বলেন, আমাদের আগে ঠিক করতে হবে, আমি সাংবাদিক নাকি রাজনৈতিক ব্যক্তি। আমাদের আগে এই গোড়ায় হাত দিতে হবে।
ভোরের আকাশ/জাআ