ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১২ আগস্ট ২০২৫ ১১:২৫ এএম
ছবি: সংগৃহীত
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা প্রবাসীরা দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোট দেওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত। দেশের মোট ভোটারের ১০ শতাংশের বেশি প্রবাসী হলেও তাদের ভোটাধিকার নিশ্চিতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
তবে এই প্রথমবারের মতো বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতের জন্য একটি ঐতিহাসিক উদ্যোগ নিয়েছে।
সে অনুযায়ী আগামী ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনেই প্রবাসীদের ভোট নিতে চায় নির্বাচন কমিশন। তারই অংশ হিসেবে প্রবাসীদের ভোট গ্রহণের বিষয়ে কার্যক্রম শুরু করেছে সংস্থাটি। বিদেশে অবস্থান করায় পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে প্রবাসীদের ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। আর ডাকযোগে প্রবাসীদের এই ভোট নেওয়া হবে দেশের নির্বাচনের আগেই।
অর্থাৎ দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগেই প্রবাসীরা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন। তবে আগে ভোট নেওয়া হলেও প্রবাসীদের ভোট গণনা করা হবে দেশে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের দিন। ভোট দেওয়ার আগে অবশ্যই নিবন্ধন করতে হবে। ভোট দিতে প্রবাসীদের নিবন্ধনের জন্য সময় দেওয়া হবে তিন সপ্তাহ। এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের তৈরি করা সফটওয়্যার বা মোবাইল অ্যাপে নিজেকে তালিকাভুক্ত করতে হবে।
নির্বাচন কমিশনের সফটওয়্যার বা মোবাইল অ্যাপে যারা নিবন্ধন করবেন নির্বাচনের আগেই তাদের কাছে ডাক বিভাগের মাধ্যমে ব্যালট পাঠাবে নির্বাচন কমিশন। ভোটসংবলিত ব্যালট ফেরতও আনা হবে ডাক বিভাগের মাধ্যমে। পরে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের মাধ্যমে ভোটসংবলিত খাম ফেরত আনার পর নিজ নিজ নির্বাচনী আসনের রিটার্নিং অফিসারের নিকট পাঠানো হবে। পোস্ট অফিসের মাধ্যমে পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ বলেন, প্রবাসী যারা ভোট দেওয়ার জন্য নিবন্ধন করবেন তাদের কাছে নির্বাচনের আগেই ব্যালট পেপার পাঠানো হবে এবং ভোট সংগ্রহ করা হবে। আর এই পুরো প্রক্রিয়াটি বাস্তবায়ন করবে ডাক বিভাগ। আমরা মূলত ব্যালটগুলো পোস্ট অফিসকে হ্যান্ডওভার করব, পোস্ট অফিস সেগুলো প্রবাসীদের কাছে পাঠাবে এবং ফেরত নিয়ে আসবে। পরে সেগুলো রিটার্নিং অফিসারের কাছে চলে যাবে এবং দেশের নির্বাচনের দিন একসঙ্গে গণনা হবে।
তিনি বলেন, প্রবাসীদের ভোট গ্রহণের জন্য আমরা মূলত তিনটি খাম ব্যবহার করব। একটা খামের মধ্যে দুটি এনভেলপ যাবে, একটা এনভেলপের মধ্যে একটি ব্যালট এবং একটি ইনস্পেকশন যাবে। ভোট দেওয়ার জন্য ভেতরে আরেকটি এনভেলপ থাকবে। যেহেতু এনভেলপের মধ্যে ব্যালট এবং ইনস্পেকশন থাকবে সেটা তো তাকে খুলতে হবে, সুতরাং সেটি পাঠাতে পারবেন না। ফেরত পাঠানোর জন্য আরেকটা খাম থাকবে, যেটাতে তারা ভোট দিয়ে পাঠাবেন।
যেভাবে ভোট দিতে পারবেন প্রবাসীরা
নির্বাচন কমিশন বলছে, প্রবাসীদের ভোট গ্রহণের বিষয়ে একটি ডিজিটাল ভোটিং প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হবে। যেখানে প্রবাসীরা নিজেদের মুখের ছবি ও এনআইডি যাচাইয়ের মাধ্যমে ভোটার হতে পারবেন। এরপর ব্যালট পাঠানো হবে ডাক বিভাগের মাধ্যমে এবং ভোট ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা থাকবে কিউআর কোড, ওটিপি ও নিরাপত্তা যাচাইয়ের মাধ্যমে।
ভোট দেওয়ার জন্য একজন ভোটারকে ইসির প্রস্তুতকৃত সফটওয়্যার বা মোবাইল অ্যাপে নিজেকে প্রথমে তালিকাভুক্ত করতে হবে। তালিকাভুক্তির জন্য প্রথমে গুগল প্লে-স্টোর কিংবা অ্যাপল অ্যাপ স্টোর থেকে মোবাইল অ্যাপটি ডাউনলোড করে নিজের মোবাইলে ইনস্টল করে নিতে হবে। মোবাইল অ্যাপটি ইনস্টল করার পর একটি বিস্তারিত ও পূর্ণাঙ্গ ই-কেওয়াইসি ফর্ম পূরণ করতে হবে।
উল্লিখিত তথ্য ই-কেওয়াইসি ফর্মে দেওয়ার পর সফটওয়্যার স্বয়ংক্রিয়ভাবে এনআইডি ডাটাবেজ থেকে প্রদত্ত তথ্য যাচাই করবে। যাচাই প্রক্রিয়া সফলভাবে সমাপ্তির পর তৎক্ষণাৎ ভোটারের মোবাইলে একটি মেসেজ পাঠানো হবে, মেসেজ প্রাপ্তির পর ভোটার নম্বর মোবাইল অ্যাপে প্রদান করবেন। ওটিপি যাচাইকরণ প্রক্রিয়া শেষে মোবাইল অ্যাপের ক্যামেরার মাধ্যমে ছবি তুলে ভোটারের প্রাণবন্ততা (Liveliness) যাচাই-বাছাই করা হবে।
এরই মধ্যে প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতে ভোটিং সিস্টেম উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এরই অংশ হিসেবে ভোটিং ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন ও বাস্তবায়নের জন্য একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। ‘দেশের বাহিরে ভোটদান সিস্টেম উন্নয়ন এবং বাস্তবায়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় তৈরি হবে একটি ডিজিটাল ভোটিং প্ল্যাটফর্ম। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা গেলে প্রবাসীরা প্রথমবারের মতো দেশের নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন বলে আশা করছে নির্বাচন কমিশন।
ভোরের আকাশ/মো.আ.