চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১১ মে ২০২৫ ০৫:৩৯ পিএম
টানা চারদিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
টানা চারদিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে দক্ষিন-পশ্চিমের সীমান্তবর্তী জেলা চুয়াডাঙ্গায়। তীব্র গরম ও কাঠফাটা রোদের তাপের কারণে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন শ্রমিক, দিনমজুর, ভ্যান ও রিকশাচালকরা। অতি তাপপ্রবাহে দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে জনজীবন। দাবদাহে প্রানীকূলেও স্বস্তি নেই। খাঁ খাঁ করছে চারদিক। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া সাধারণ মানুষ ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না। তীব্র গরমে সড়কের পিচ গলে যাচ্ছে। হাসপাতালে বাড়ছে ডায়রিয়াসহ গরমজনিত শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যা।
রোববার (১১ মে) বিকেল ৩ টার সময় চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এসময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ২৬ শতাংশ।
এর আগে শনিবার বিকেল ৩ টার সময় চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস। এসময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১৬ শতাংশ। শুক্রবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গায় এবং বৃহস্পতিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়।
তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের জেষ্ঠ কর্মকর্তা জামিনুর রহমান।
রোববার দুপুরে সরজমিনে দেখাযায়, রোদের প্রখর তেজ আর অসহ্য গরমে স্বাভাবিক জীবন যাত্রা মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জেলার মানুষ। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। ভ্যান চালক কোরবান আলী রোদে আর ভ্যান চালাতে না পেরে আম গাছের ছায়ায় ভ্যানের উপরেই শরীরটা এলিয়ে ঘুমিয়ে গেছেন। এ সময় প্যাসেঞ্জার হচ্ছে না। তার উপার্জনেও চারদিন ধরে ভাটা পড়ছে। বিক্রয় কর্মী সিয়াম ও শাকিল ডেলিভারি কাজ রেখে গাছতলায় বিশ্রাম নিচ্ছেন।
ইজিবাইক চালক হাবিবুর জানান, তীব্র রোদে মানুষ বাইরে বের হচ্ছে কম। গাড়ি নিয়ে স্ট্যান্ডে আছি। আয়-ইনকাম একদম কমে গেছে। সমিতির ঋণ নিয়ে গাড়ি কিনেছি। চলতি সপ্তায় কিস্তি দিতে পারিনি।
চুয়াডাঙ্গা পৌর শহরের রিকশাচালক হামিদুর রহমান জানান, আজ চার দিন যাবৎ গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি। তীব্র রোদে রিকশা চালাতে গিয়ে হাঁফিয়ে উঠছি। কিছুক্ষণ পরপর বিশ্রাম নিতে হচ্ছে।
শহরের মনোহারি ব্যবসায়ী চুন্নি মিয়া বলেন, ফ্যানের বাতাস যেন গায়ে লাগছে না। দিনে কাঠ ফটা বোদ আর রাতে ভ্যাপসা গরমে কাহিল হয়ে পড়ছে জীবন।
এদিকে কৃষি সমৃদ্ধ এ জেলায় তীব্র তাপপ্রবাহে ক্ষতিতে পড়েছেন কৃষকরা। প্রতিদিন সেচ দিতে হচ্ছে সবজি ক্ষেতে। আউশ ধান রোপণ মৌসুমের এ সময় অন্যান্য বছর বৃষ্টি হয়। এবার বৃষ্টির দেখা নেই। উল্টো তাপপ্রবাহ বইছে।
কৃষক আহমদ আলী বলেন, রোদ-গরমে মাঠে দাঁড়ানোর কায়দা নেই। ক্ষেতে পানি (সেচ) দিতে দিতে শেষ হয়ে গেলাম। অস্ত যাওয়ার আগ পর্যন্ত সুর্যের তীব্র তেঁজে পুড়ছে প্রকৃতি। দুপুরের রোদে যেন আগুনের ফুলকি ঝরছে। যেন মরুভূমির তাপমাত্রা।
চুয়াডাঙ্গার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক জামিনুর রহমান জানান, চুয়াডাঙ্গার উপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
এর আগে চলতি গ্রীষ্মে মৌসুমে ২৩ ও ২৪ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় যথাক্রমে ৩৬ দশমিক ৬ এবং ৩৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
অতি দাবদাহে খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এছাড়াও হীট স্ট্রক এড়াতে বেশি বেশি পানি পানসহ লেবুর শরবত খেতে বলছে। তবে রাস্তার পাশে খোলা শরবত খেতে বারন করছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
এ ছাড়াও চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন থেকেও অতি দাবদাহে সচেতনতামূলক প্রচার চালানো হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষনাগারের ইনচার্জ জামিনুর রহমান জানান, ১৩ মে পর্যন্ত এ রকম তাপমাত্রা অব্যাহত থাকবে। ১৪ তারিখ বৃষ্টিপাতের সম্ভবনা রয়েছে। তারপর তাপমাত্রা কমতে পারে। এজন্য জনসাধারণকে দুপুরের সময় অপ্রয়োজনীয়ভাবে বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
তবে এ মুহূর্তে এক পশলা বৃষ্টির প্রত্যাশা করছে এ জেলার মানুষের।
ভোরের আকাশ/এসআই