মুস্তাফিজুর রহমান
প্রকাশ : ০১ জুন ২০২৫ ১২:১৬ পিএম
মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ
শেষ স্টেশন
আমার সহকর্মী অনিম আরাফাত
বুদ্ধিমান তরুণ, চৌকস, সদা হাস্যজ্জ্বল
সে প্রায়ই বলে আমি নাকি একশ বছর বাঁচবো
তার ব্যাখ্যাও দেয়-
আমি গ্রিন টি পান করি, তেল-ঝাল খাই না, গরুর মাংসও না
বিড়ি-সিগারেট ছুঁইও দেখিনা কখনো, খুব আস্তে কথা বলি
তার ইচ্ছেমতো নানা বিশেষণ যুক্ত করে!
একটা মানুষ দীর্ঘদিন বাঁচার জন্য যা যা দরকার তা আমার মধ্যে আছে।
অনিমের কথা শুনে একশ বছর বাঁচতে সাধ জাগে
সুস্থভাবে একশ বছর বেঁচে গেলে মন্দ কী!
জীবন থাকলেই কেবল পৃথিবীর সৌন্দর্য দেখা যায়
আকাশ, পাহাড়, সমুদ্র, আলো ঝলমল শহর, নির্ভীত পল্লি
এক জীবনে যার সৌন্দর্য দেখে সাধ মেটে না।
জীবন থাকলেই কেবল ভালোবাসার স্পর্শ মেলে
প্রেম, মমতা, স্নেহ জীবনকে স্পর্শ করে বারবার
সবার মতো আমিও এসব চাই।
অনিম আরাফাত
আমাদের কেউ একশ বছর পৃথিবী ভ্রমণ করিনি
আমাদের বেঁচে থাকার ইতিহাস খুব ভালো নয়
বাবা টেনেটুনি সত্তর পার করেছিলেন
দাদুভাই তাও পাননি, ছাব্বিশে থেমে যায় কাকার জীবন
আমার মা ও বেশিদিন বাঁচেননি, মামা-খালারাও না
ফুফু মরেছিলেন এগারোতে
পরিবারের আরো অনেকে ত্রিশের আগেই চলে গেছে।
অনিম আরাফাত আপনার মুখে ফুল চন্দন পড়ুক
সত্যিই একশ বছর বাঁচার সাধ হয় আমার.
আহা, মানুষ যদি হাজার বছর বাঁচত কিংবা তারও বেশি!
তারপর একদিন নেমে যেত শেষ স্টেশনে
তাতে কার কী ক্ষতি হতো অনিম আরাফাত? হত না।
বরণ জিতে যেতো মানুষ
আহা, জীবন এতো ছোট কেন?
বট-পাকুড়ের বিয়ে
বট-পাকুড়ের এ কেমন বিয়ে দিলে মানুষ?
কমলাপুরে রাস্তার ধারে ঠাঁই দাঁড়িয়ে বট
পাকুড় থাকে নলাবিলের মাঝে
বর-কনের দূরত্ব মাইল তিনেক
একজনমে কারো সাথে দেখা হবে না কোনোদিন
অথচ তোমরা তাদের ধুমধাম করে বিয়ে দিলে
ঢাক বাজলো, শঙ্খ বাজলো, উলুধ্বনি হলো
ধুতি পরালে, সিঁদুর টানলে, সাতপাকে ঘুরলে
ভোজ হলো, এরপর যে যার পথ ধরলে।
মানুষ, এ বিয়ে আমাদের জন্য নয়
আমাদের বিয়ে তোমাদের মঙ্গলকামনায়
তোমাদের সন্তান লাভ, সঙ্গমে দ্বিগুণ সময়
কিংবা অন্য কারণে এত আয়োজন, এত গীতবাদ্য।
মানুষ, তোমরা কেবল তোমাদের কথাই ভাবলে
আমরা এলাম স্বার্থের খাতিরে
কী অদ্ভুত! আমাদের বিয়ে হলো
অথচ কখনোই আমাদের মিলন হবে না
আমাদের গল্প বলা হবে না
কোনোদিন ভাগাভাগি হবে না রাগ কিংবা অভিমান
কী কাম, কী ক্রোধ, কী ভালোবাসা
আমাদের চাহিদাগুলো অপূরণ থেকে যাবে চিরদিন
এত আয়োজন করে, এত চিন্তাসভা করে
এতটা শাস্তি কেবল মানুষেই দিতে পারে
কেবল মানুষেই দিতে পারে।
বিয়োগ উৎসব
ইদানীং কিছুই যুক্ত হয় না
শুধুই বিয়োগ
একটু একটু করে ভুলে যাই
জমাটবাধা স্মৃতি
অতি চেনা বানানটিও ভুল হয়
শুকনো পাতার মতো
ঝরে পড়ে প্রিয় মানুষ
উজানে যারা কাছে টেনেছিলো
ভাটিবেলায় যত্নে এড়িয়ে চলে তারা
যে যার পথ ধরে।
আর আমি?
খুব নীরবে সযত্নে
একলা থাকার অভ্যাসটি রপ্ত করি
শুধু আমাকেই আমি ছেড়ে যাই না।