লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশ : ২৮ এপ্রিল ২০২৫ ০২:০৩ পিএম
একাকীত্ব থেকে বেরিয়ে আসবেন যেভাবে
মানুষ সামাজিক জীব, সঙ্গ তার চাই-ই চাই। জন্মের পর থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত একজন মানুষ নানা সম্পর্কে জড়িয়ে থাকে-পরিবার, বন্ধু, সহকর্মী কিংবা প্রতিবেশী। কিন্তু জীবনের নানা পর্যায়ে কোনো না কোনো কারণে সেই সম্পর্কগুলোতে ফাঁক তৈরি হয়, কিছু সম্পর্ক ভেঙে যায়, কেউ কেউ দূরে সরে যায়। নিঃসঙ্গতা বা একাকিত্ব মানসিক চাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
একাকিত্ব শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এটি আমাদের মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও বিষণ্নতা বাড়িয়ে দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার পর ডিজিস কন্ট্রোল বা সিডিসি বলছে, একাকীত্বের কারণে হার্টের অসুখের ঝুঁকি বাড়ে ২৯ শতাংশ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে- ৩২ শতাংশ। দীর্ঘদিনের একাকীত্ব মস্তিষ্কের কিছু মনে রাখতে না পারার মারাত্মক অসুখ ডিমেনশিয়ার সম্ভাবনা ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়। তাই একাকিত্ব দূর দূর করা উচিত।
তবে আশার কথা হলো, একাকীত্ব কোনো চিরস্থায়ী অবস্থা নয়। চাইলে সচেতনভাবে কিছু পদক্ষেপ নিয়ে এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা যায়। জেনে নিন এমন কিছু কার্যকর উপায়-
পছন্দের কাজ করুন: ভালো লাগে এমন কিছু করার মতো খুঁজে বের করুন। এমন কিছু করুন যাতে খারাপ চিন্তা থেকে মনোযোগ সরে যায়।
বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলুন: একাকীত্ব দূর করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো অন্যদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করা। বন্ধু তৈরি করা, পরিবারকে সময় দেওয়া কিংবা পুরনো কোনো বন্ধুর সঙ্গে নতুন করে যোগাযোগ করা মানসিকভাবে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। চেষ্টা করুন সপ্তাহে অন্তত একদিন কোনো প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটাতে।
অচেনা মানুষকে চেনা মানুষে পরিনত করুন: অনেক সময়েই আমাদের পড়াশোনা বা কাজের জন্য কাছের মানুষদের কাছ থেকে দূরে থাকতে হয়। সে ক্ষেত্রে কোনো ধরনের হিসাব-নিকাশ ছাড়া, অচেনা মানুষজনের সঙ্গে কথা বলাটা বেশ কার্যকর। নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচয় হলে কথা বললে একাকিত্ব সহজেই দূর হয়ে যায়।
অনুভূতি প্রকাশ করুন: কথা চেপে না রেখে কথা বলার চেষ্টা করুন, আপনার অনুভূতি সম্পর্কে বন্ধুবান্ধব, পরিবারের সাথে কথা বলুন।
নতুন অভ্যাস গড়ে তুলুন: শখ মানুষের মনকে প্রশান্ত রাখে। আপনি যদি বাগান করা, ছবি আঁকা, গান গাওয়া, রান্না করা কিংবা অন্য কোনো সৃজনশীল কাজে আগ্রহী হন, তাহলে তা নিয়মিতভাবে চর্চা করুন। এগুলো মনকে ব্যস্ত রাখে এবং মানসিক প্রশান্তি দেয়।
বই পড়ুন: বইকে বলা হয় নীরব বন্ধু। একাকীত্বের সময় বই পড়া হতে পারে আপনার সঙ্গী। আত্মউন্নয়নমূলক, কল্পকাহিনি, ইতিহাস কিংবা প্রিয় লেখকের বই পড়ে আপনি নিজেকে মানসিকভাবে সমৃদ্ধ করতে পারেন।
ঘুরতে যান: বেশিরভাগ সময় যারা একাকীত্বে ভোগে তারা কাজের বাহিরে তেমন কোথাও ঘুরতে যান না। কিন্তু আপনি যখন কোথাও ঘুরতে যাবেন তা আপনার মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। তাই চেষ্টা করবেন সময় পেলেই ঘুরতে যাওয়ার। এতে করে আপনি একা থাকলেও প্রকৃতির সঙ্গে আপনার সুন্দর সম্পর্ক গড়ে উঠবে।
সৃজনশীল কাজ করুন : অন্যের উপকারে নিজেকে নিয়োজিত করলে আত্মতৃপ্তি আসে এবং নিজের গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায়। বিভিন্ন সংগঠন বা সমাজসেবামূলক কাজে অংশ নিলে আপনি নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হতে পারবেন এবং নিজেকে আরো মূল্যবান মনে হবে।
বেশি পরিশ্রম করুন : মানুষ যখন কাজে খুব ব্যস্ত থাকে তখন সে এমনিতেই কাজের বাহিরে অন্য কোন কিছুতে মনোযোগ দিতে পারে না। তাই আপনি আপনার একাকীত্ব দূরীকরণে নিজের পেশাগত কাজের প্রতি বেশি মনোযোগ দিতে পারেন ।
মনোচিকিৎসকের সহায়তা নিন: যদি আপনি একাকীত্ব থেকে নিজে বেরিয়ে আসতে ব্যর্থ হন, তবে দ্বিধা না করে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন। মানসিক সুস্থতা ঠিক রাখার জন্য এটি একটি বুদ্ধিমানের কাজ।
একাকীত্বকে উপেক্ষা করলে তা ধীরে ধীরে মানুষের আত্মাকে নিঃশেষ করে দিতে পারে। তাই সময় থাকতে এর প্রতিকার করা প্রয়োজন। নিজের যত্ন নেয়া, আত্মবিশ্বাস বজায় রাখা এবং অন্যদের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করা – এই কয়েকটি অভ্যাস গড়ে তুললে একাকীত্ব আপনাকে কাবু করতে পারবে না।
ভোরের আকাশ/এসআই
লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশ : ১ দিন আগে
আপডেট : ১ দিন আগে
একাকীত্ব থেকে বেরিয়ে আসবেন যেভাবে
মানুষ সামাজিক জীব, সঙ্গ তার চাই-ই চাই। জন্মের পর থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত একজন মানুষ নানা সম্পর্কে জড়িয়ে থাকে-পরিবার, বন্ধু, সহকর্মী কিংবা প্রতিবেশী। কিন্তু জীবনের নানা পর্যায়ে কোনো না কোনো কারণে সেই সম্পর্কগুলোতে ফাঁক তৈরি হয়, কিছু সম্পর্ক ভেঙে যায়, কেউ কেউ দূরে সরে যায়। নিঃসঙ্গতা বা একাকিত্ব মানসিক চাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
একাকিত্ব শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এটি আমাদের মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও বিষণ্নতা বাড়িয়ে দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার পর ডিজিস কন্ট্রোল বা সিডিসি বলছে, একাকীত্বের কারণে হার্টের অসুখের ঝুঁকি বাড়ে ২৯ শতাংশ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে- ৩২ শতাংশ। দীর্ঘদিনের একাকীত্ব মস্তিষ্কের কিছু মনে রাখতে না পারার মারাত্মক অসুখ ডিমেনশিয়ার সম্ভাবনা ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়। তাই একাকিত্ব দূর দূর করা উচিত।
তবে আশার কথা হলো, একাকীত্ব কোনো চিরস্থায়ী অবস্থা নয়। চাইলে সচেতনভাবে কিছু পদক্ষেপ নিয়ে এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা যায়। জেনে নিন এমন কিছু কার্যকর উপায়-
পছন্দের কাজ করুন: ভালো লাগে এমন কিছু করার মতো খুঁজে বের করুন। এমন কিছু করুন যাতে খারাপ চিন্তা থেকে মনোযোগ সরে যায়।
বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলুন: একাকীত্ব দূর করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো অন্যদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করা। বন্ধু তৈরি করা, পরিবারকে সময় দেওয়া কিংবা পুরনো কোনো বন্ধুর সঙ্গে নতুন করে যোগাযোগ করা মানসিকভাবে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। চেষ্টা করুন সপ্তাহে অন্তত একদিন কোনো প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটাতে।
অচেনা মানুষকে চেনা মানুষে পরিনত করুন: অনেক সময়েই আমাদের পড়াশোনা বা কাজের জন্য কাছের মানুষদের কাছ থেকে দূরে থাকতে হয়। সে ক্ষেত্রে কোনো ধরনের হিসাব-নিকাশ ছাড়া, অচেনা মানুষজনের সঙ্গে কথা বলাটা বেশ কার্যকর। নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচয় হলে কথা বললে একাকিত্ব সহজেই দূর হয়ে যায়।
অনুভূতি প্রকাশ করুন: কথা চেপে না রেখে কথা বলার চেষ্টা করুন, আপনার অনুভূতি সম্পর্কে বন্ধুবান্ধব, পরিবারের সাথে কথা বলুন।
নতুন অভ্যাস গড়ে তুলুন: শখ মানুষের মনকে প্রশান্ত রাখে। আপনি যদি বাগান করা, ছবি আঁকা, গান গাওয়া, রান্না করা কিংবা অন্য কোনো সৃজনশীল কাজে আগ্রহী হন, তাহলে তা নিয়মিতভাবে চর্চা করুন। এগুলো মনকে ব্যস্ত রাখে এবং মানসিক প্রশান্তি দেয়।
বই পড়ুন: বইকে বলা হয় নীরব বন্ধু। একাকীত্বের সময় বই পড়া হতে পারে আপনার সঙ্গী। আত্মউন্নয়নমূলক, কল্পকাহিনি, ইতিহাস কিংবা প্রিয় লেখকের বই পড়ে আপনি নিজেকে মানসিকভাবে সমৃদ্ধ করতে পারেন।
ঘুরতে যান: বেশিরভাগ সময় যারা একাকীত্বে ভোগে তারা কাজের বাহিরে তেমন কোথাও ঘুরতে যান না। কিন্তু আপনি যখন কোথাও ঘুরতে যাবেন তা আপনার মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। তাই চেষ্টা করবেন সময় পেলেই ঘুরতে যাওয়ার। এতে করে আপনি একা থাকলেও প্রকৃতির সঙ্গে আপনার সুন্দর সম্পর্ক গড়ে উঠবে।
সৃজনশীল কাজ করুন : অন্যের উপকারে নিজেকে নিয়োজিত করলে আত্মতৃপ্তি আসে এবং নিজের গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায়। বিভিন্ন সংগঠন বা সমাজসেবামূলক কাজে অংশ নিলে আপনি নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হতে পারবেন এবং নিজেকে আরো মূল্যবান মনে হবে।
বেশি পরিশ্রম করুন : মানুষ যখন কাজে খুব ব্যস্ত থাকে তখন সে এমনিতেই কাজের বাহিরে অন্য কোন কিছুতে মনোযোগ দিতে পারে না। তাই আপনি আপনার একাকীত্ব দূরীকরণে নিজের পেশাগত কাজের প্রতি বেশি মনোযোগ দিতে পারেন ।
মনোচিকিৎসকের সহায়তা নিন: যদি আপনি একাকীত্ব থেকে নিজে বেরিয়ে আসতে ব্যর্থ হন, তবে দ্বিধা না করে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন। মানসিক সুস্থতা ঠিক রাখার জন্য এটি একটি বুদ্ধিমানের কাজ।
একাকীত্বকে উপেক্ষা করলে তা ধীরে ধীরে মানুষের আত্মাকে নিঃশেষ করে দিতে পারে। তাই সময় থাকতে এর প্রতিকার করা প্রয়োজন। নিজের যত্ন নেয়া, আত্মবিশ্বাস বজায় রাখা এবং অন্যদের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করা – এই কয়েকটি অভ্যাস গড়ে তুললে একাকীত্ব আপনাকে কাবু করতে পারবে না।
ভোরের আকাশ/এসআই