লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশ : ০৫ মে ২০২৫ ০৭:০৯ পিএম
৩০ মিনিটেই অনেক সমস্যা থেকে মুক্তি!
আমাদের জীবন এখন ভুলে ভরা। কোমরে ব্যথা, পায়ে ব্যথা এখন আর শুধু বয়সকালে হয় না। টানা আট-দশ ঘণ্টা চেয়ারে বসে কাজ করার ফলে ঘাড়ে, কোমরে ব্যথা কমবয়সিদের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে। বদলে যাওয়া জীবন, কাজের চাপ, ব্যস্ততার প্রভাব পড়ছে শরীরে। ডায়াবিটিস, আর্থ্রাইটাইটিসের মতো রোগে কাবু হচ্ছে তরুণ প্রজন্মও। অনিয়ন্ত্রত জীবনযাপন, ভাজাভুজি খাওয়ার প্রবণতার ফলে বাড়ছে স্থূলত্বের সমস্যা।
সেই সকালে ওঠা হয়। তারপর অফিসের কাজ। সারাদিন একজায়গায় বসে চলছে হাত, চলছে মাথা। তারপর দিনের শেষে একটু ফ্রি হওয়া যায়। তবে সেই দৌড়ে কোনওভাবেই যোগ থাকে না শারীরের। কারণ আমরা এখন কেবল মাথা খাটাই। শারীরিক পরিশ্রম করতে হয় খুব কম। পাশাপাশি চিন্তা হয়ে গিয়েছে আমাদের নিত্যসঙ্গী। এই চিন্তার কারণে রাতের ঘুমও উড়ে যাচ্ছে। এই সব বিষয় মিলিয়েই দেখা দিচ্ছে মারাত্মক সমস্যা। হচ্ছে মানসিক থেকে শারীরিক রোগ। মন ভালো নেই থেকে শরীরে ভালো নেই! তাই এমন জীবনযাত্রার বদলের প্রয়োজন।
দিনে ১০-১২ ঘণ্টা কাজ করার পর ঘুমের সময় বাদ দিলে এক্সারসাইজ বা জিমে যাওয়ার সময় থাকে না। সমস্যার সমাধান লুকিয়ে দৈনন্দিন যাপনেই। স্বাস্থ্যকর খাওয়া, পর্যাপ্ত ঘুম, নিয়মিত শরীরচর্চা এই সমস্যার সমাধান কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে। খাওয়াদাওয়া না হয় নিয়ন্ত্রণ করা গেল, কিন্তু শরীরচর্চার জন্য আর কোন সময় পড়ে থাকে না।
তবে সাম্প্রতিক একাধিক গবেষণা বলছে, জটিল এক্সারসাইজ বা জিমের ভারী ওয়ার্কআউট না করেও সুস্থ থাকা যায় শুধু নিয়মিত হাঁটার মাধ্যমেই। প্রতিদিন মাত্র ৩০ মিনিট হাঁটা শরীর ও মন দুটোর ওপরই আশ্চর্যজনক প্রভাব ফেলতে পারে। হার্টের অসুখ থেকে হাইপার টেনশন, অ্যাসিডিটির মতো হরেক সমস্যা দূরে থাকবে। এই অভ্যাসে লুকিয়ে আছে স্বাস্থ্য রক্ষার ৭টি গোপন চাবিকাঠি।
হদ্যন্ত্রের অসুখ: চিকিৎসকেরা বলছেন, নিয়মিত হাঁটাহাটি রক্তচাপ বশে রাখতে সাহায্য করে। কোলেস্টেরল, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকলে হার্টের অসুখের ঝুঁকি কমে অনেকটাই।
সুরক্ষিত থাকবে হৃদয়: নিয়মিত হাঁটা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সহায়তা করে। এর ফলে হৃদপিণ্ড আরও ভালোভাবে কাজ করে, আর কমে আসে হৃদরোগ, স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি।
ওজন থাকে নিয়ন্ত্রণে : অতিরিক্ত ওজন এখন বিশ্বজুড়ে এক বড় সমস্যা। হাঁটার মাধ্যমে ক্যালোরি পোড়ানো সহজ হয় এবং বিপাক হার বাড়ে, ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়। যারা স্বাস্থ্যকরভাবে ওজন কমাতে চান, তাদের জন্য হাঁটা একটি দারুণ উপায়।
মানসিক চাপ কমে: হাঁটা কেবল শরীর নয়, মনকেও করে হালকা। এটি শরীরে কর্টিসল নামক স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা কমায় এবং মুড ভালো রাখতে সাহায্য করে এমন হরমোনের (যেমন-এন্ডোরফিন) নিঃসরণ বাড়ায়। প্রতিদিনের ব্যস্ততা ও চাপ সামলাতে চাইলে হেঁটে আসা হতে পারে চমৎকার এক টোটকা।
বাড়ে শক্তি ও উদ্যম: দিনের শুরুতেই কিছুক্ষণ হাঁটলে শরীর ও মনের মধ্যে এক ধরনের প্রাকৃতিক উদ্দীপনা আসে। ক্লান্ত লাগলেও হাঁটা রক্ত চলাচল সক্রিয় রাখে ও পেশিগুলো জাগিয়ে তোলে, ফলে আপনি সারাদিন থাকেন ফুরফুরে।
মন হয় সতেজ ও একাগ্র: নিয়মিত হাঁটার ফলে মস্তিষ্কে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ে, যা স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগে উন্নতি ঘটায়। এটি মানসিক স্বচ্ছতা আনে এবং বুড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ধরে রাখতে সহায়তা করে।
উন্নত হয় রক্তসঞ্চালন: হাঁটা আমাদের শরীরে রক্ত চলাচল বাড়িয়ে দেয়, যার ফলে বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে পর্যাপ্ত পুষ্টি ও অক্সিজেন পৌঁছায়। এর ফলে শরীরের কোষগুলো আরও কর্মক্ষম হয়ে ওঠে।
শরীরে জমে থাকা চর্বি কমে: একটানা বসে থাকা জীবনের জন্য হাঁটা এক উত্তম ও সহজ প্রতিকার। এটি অতিরিক্ত চর্বি গলাতে সাহায্য করে, ক্ষুধার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং দেহের চর্বি বিপাকের গতি বাড়ায়-যা স্থূলতা প্রতিরোধে কার্যকর।
ফুসফুসের কার্যদক্ষতা বৃদ্ধি করে: হাঁটার সঙ্গে শরীরে যথেষ্ট পরিমাণে অক্সিজেন যায়। হাঁটার সঙ্গে তাল মিলিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার অভ্যাস ফুসফুসের জন্যেও ভাল। শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে পর্যাপ্ত মাত্রায় শরীরে অক্সিজেন পৌঁছয় যা মস্তিষ্কের ক্লান্তি দূর হয়।
ঘুম ভাল হয়: নিয়মিত হাঁটলে যেহেতু শারীরিক শ্রম হয়, তাই ঘুম ভাল হয়। পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের জন্য অত্যন্ত জরুরি। ঠিকমতো ঘুম না হলে যেমন হজমের সমস্যা হতে পারে তেমনই হরমোনের ভারসাম্য বিগড়ে যেতে পারে। ঘুমের সময় ক্ষতিগ্রস্ত কোষ মেরামতির কাজ সারে শরীর।
ভিটামিন ডি: হাড়ের জন্য জরুরি হল ভিটামিন ডি। এই ভিটামিনটি ত্বক সূর্যালোকের সংস্পর্শে এলে সরাসরি তৈরি করে নিতে পারে। ভোরের দিকে কেউ হাঁটাহাটি করলে শরীরে রোদ লাগবে। ইদানীং দেরি করে ঘুম থেকে ওঠা, এসি ক্যাবে অফিস যাওয়া, দীর্ঘ ক্ষণ অফিসে কাজের ফলে শরীর সূর্যালোকের সংস্পর্শে আসতে পারে না। যা ভিটামিন ডি কমে যাওয়ার একটি কারণ।
ডায়াবিটিস: ডায়াবিটিসের রোগীদের রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য নিয়মিত হাঁটার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। টাইপ ২ ডায়াবিটিস বশে রাখতে হাঁটাচলা অত্যন্ত জরুরি।
৩০ মিনিট জোরে পা ফেলে টানা হাঁটলে অবশ্যই তা ওজন ঝরাতে সাহায্য করবে। তবে যদি টানা হাঁটা সম্ভব না হয়, তা হলে নিজের ছন্দে হাঁটলেও হবে। হাঁটার কারণ শুধু ওজন কমানো না হলে, যে ভাবেই হাঁটুন না কেন, সুফল কম-বেশি মিলবেই। প্রতিদিন মাত্র ৩০ মিনিট হাঁটার এই সহজ অভ্যাস আপনার জীবনধারায় আনতে পারে এক ইতিবাচক পরিবর্তন, সুস্থ শরীর, সতেজ মন আর আনন্দময় দিন।
ভোরের আকাশ/এসআই