সংগৃহীত ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দায়ের হওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ইতোমধ্যে ৪৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। সর্বশেষ সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, যিনি প্রসিকিউশনের ৪৭তম সাক্ষী। বর্তমানে তাকে জেরা করছেন আসামিপক্ষের রাষ্ট্রনিযুক্ত কৌঁসুলি।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) ও জেরা চলবে। এরপর তদন্ত কর্মকর্তা সাক্ষ্য দেবেন এবং তার জেরা সম্পন্ন হলে মামলাটি যুক্তিতর্ক পর্যায়ে প্রবেশ করবে। এরপরই বিচারপতি মো. গোলাম মূর্তজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ রায়ের দিন ধার্য করবেন।
সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের রায় ঘিরে ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে উত্তাল হয়ে ওঠে শিক্ষাঙ্গন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা সংগঠনগুলো সময় বেঁধে দেয় সরকারকে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার সময়মতো কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় আন্দোলন রূপ নেয় সরকার পতনের দাবিতে।
পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের ওপর হামলা চালায়। এতে বহু প্রাণহানি, ২৫ হাজারের বেশি আহত এবং নির্বিচারে ধরপাকড় চালানো হয়।
চূড়ান্ত গণআন্দোলনের মুখে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দেশত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের মন্ত্রী, এমপি ও নেতারাও দেশ ছাড়েন। এরপর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করে মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত শুরু হয়।
২০২৪ সালের ১৭ অক্টোবর শেখ হাসিনাসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল। তদন্ত শেষে গত ১২ মে তিন জনের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।
২০২৫ সালের ১০ জুলাই এ মামলায় বিচার শুরুর নির্দেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় ৩ আগস্ট। প্রথম সাক্ষী ছিলেন খোকন চন্দ্র বর্মন, যিনি ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হন।
আলোচিত এ মামলায় আসামি থেকে রাজসাক্ষী হয়েছেন সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। ট্রাইব্যুনালে তিনি ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও পরিকল্পনার অন্তর্গত তথ্য তুলে ধরেছেন বলে জানা গেছে।
সাক্ষীরা ট্রাইব্যুনালে দাবি জানিয়েছেন, জুলাই গণআন্দোলনকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি নিশ্চিত করা হোক।এ মামলার পরবর্তী ধাপ হলো যুক্তিতর্ক। এরপরই দেওয়া হবে বিচারিক রায়, যা হতে পারে বাংলাদেশের ইতিহাসে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।
ভোরের আকাশ/তা.কা
সংশ্লিষ্ট
আইন ও বিচার বিভাগের সচিব হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন লিয়াকত আলী মোল্লা। অতিরিক্ত সচিব লিয়াকত আলী আইন ও বিচার বিভাগের সচিবের চলতি দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।সোমবার (৬ অক্টোবর) জুডিসিয়াল সার্ভিসের এ কর্মকর্তাকে নিয়মিত সচিব নিয়োগ দিয়ে আইন ও বিচার বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব (চলতি দায়িত্ব) লিয়াকত আলী মোল্লাকে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব পদে পদায়ন করা হলো।এর আগে মানিকগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। এরপর তাকে গত আগস্টে আইন ও বিচার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব হিসেবে পদায়ন করা হয়। পরবর্তীতে তাকে আইন মন্ত্রণালয়ের সচিবের চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।ভোরের আকাশ/এসএইচ
কারও বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন হলে তিনি আর সংসদ সদস্য (এমপি), স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি বা কোনো সরকারি পদে থাকতে বা নিয়োগ পেতে পারবেন না। এ বিষয়ে নতুন বিধান সংযোজন করেছে সরকার।সোমবার (৬ অক্টোবর) জারি করা গেজেট অনুযায়ী, অভিযোগ গঠনের পর আসামি সংসদ সদস্য, মেয়র, চেয়ারম্যান, কমিশনার বা প্রশাসক পদে থাকতে পারবেন না। একই সঙ্গে সরকারি চাকরি বা অন্য কোনো সরকারি পদেও নিয়োগযোগ্য থাকবেন না।তবে, কেউ যদি ট্রাইব্যুনাল থেকে খালাসপ্রাপ্ত হন বা অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পান, তাহলে এই নিষেধাজ্ঞা তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না বলে গেজেটে উল্লেখ করা হয়েছে।এতে জানানো হয়, রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে প্রকাশিত এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে নতুন করে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক পদে যোগ্যতার সীমা নির্ধারণের বিধান কার্যকর হলো।ভোরের আকাশ/তা.কা
জুলাই-আগস্ট আন্দোলন ঘিরে আশুলিয়ায় ছয়জনের মরদেহ পোড়ানোসহ সাতজনকে হত্যার দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অষ্টম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ আজ। এ মামলায় সাবেক এমপি সাইফুল ইসলামসহ ১৬ জনকে আসামি করা হয়েছে।মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে বিচারিক প্যানেলে এ সাক্ষ্যগ্রহণ হবে। এদিন দুজন সাক্ষীর জবানবন্দি নেওয়ার কথা রয়েছে।এর আগে, ২৮ সেপ্টেম্বর সপ্তম দিনে নবম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেওয়া একাত্তর টিভির স্থানীয় সাংবাদিক জাহিদুল ইসলাম অনিকের জেরা শেষ হয়। পলাতক আট আসামির পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত স্টেট ডিফেন্স ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তাকে জেরা করেন।প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ ও সাইমুম রেজা তালুকদার। সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর আবদুস সোবহান তরফদার ও সহিদুল ইসলাম।২৫ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠ দিনে অনিকসহ দুজন জবানবন্দি দিয়েছেন। ২৪ সেপ্টেম্বর প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে সাক্ষ্য দেওয়া শফিকুল ইসলামের জেরা শেষ হলে আট নম্বর সাক্ষীর জবানবন্দি নেওয়া হয়। ২৩ সেপ্টেম্বর এ মামলায় সাত নম্বর সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন শফিকুল। একই দিন সাক্ষ্য দেন প্রত্যক্ষদর্শী মতিবর রহমান। ১৮ সেপ্টেম্বর এ মামলার তৃতীয় দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়। ১৭ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্য দেন দুজন সাক্ষী। ১৫ সেপ্টেম্বর প্রথম দিনের মতো এ মামলায় সাক্ষ্য দেন শহীদ আস সাবুরের ভাই রেজওয়ানুল ইসলাম ও শহীদ সাজ্জাদ হোসেন সজলের বাবা মো. খলিলুর রহমান।গত ১৪ সেপ্টেম্বর মামলার সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি গত বছরের ৫ আগস্ট আশুলিয়ার সেই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা তুলে ধরেন। ২১ আগস্ট এ মামলায় ১৬ আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। ওই সময় উপস্থিত আট আসামির সাতজনই নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। তবে দোষ স্বীকার করেছেন এসআই শেখ আবজালুল হক। একইসঙ্গে রাজসাক্ষী হতে চেয়ে মামলার ব্যাপারে যা জানেন সব আদালতের কাছে বলতে চেয়েছেন। পরে তার দোষ স্বীকারের অংশটুকু রেকর্ড করেন ট্রাইব্যুনাল। এছাড়া রাজসাক্ষী হতে চাওয়া নিয়ে লিখিত আবেদন করতে বলা হয়। লিখিত আবেদনের পর রাজসাক্ষী হয়েছেন তিনি।এ মামলায় গ্রেপ্তাররা হলেন- ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. আব্দুল্লাহিল কাফী, ঢাকা জেলা পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুল ইসলাম, পরিদর্শক আরাফাত হোসেন, এসআই মালেক, এসআই আরাফাত উদ্দিন, এএসআই কামরুল হাসান, আবজাল ও কনস্টেবল মুকুল। তবে সাবেক এমপি সাইফুলসহ আটজন এখনও পলাতক রয়েছেন।গত ২ জুলাই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দেয় প্রসিকিউশন। আনুষ্ঠানিক অভিযোগের সঙ্গে অন্যান্য তথ্যসূত্র হিসেবে ৩১৩ পৃষ্ঠা, সাক্ষী ৬২, দালিলিক প্রমাণাদি ১৬৮ পৃষ্ঠা ও দুটি পেনড্রাইভ যুক্ত করা হয়। পরে এ মামলায় ১৬ জনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল।গত বছরের ৫ আগস্ট সাভারের আশুলিয়ায় পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান ছয় তরুণ। এরপর পুলিশ ভ্যানে তাদের লাশ তুলে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। নৃশংস এ ঘটনার সময় একজন জীবিত ছিলেন। কিন্তু তাকেও বাঁচতে দেননি তারা। পেট্রোল ঢেলে জীবন্ত মানুষকেই পুড়িয়ে মারা হয়। এ ঘটনায় গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা করা হয়।ভোরের আকাশ/তা.কা
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) কারোর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল হলে তিনি সংসদ সদস্য হওয়ার বা থাকার যোগ্য হবেন না বলে জানিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়।সোমবার (৬ অক্টোবর) আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের মুদ্রণ ও প্রকাশনা শাখা এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের পর অভিযুক্ত ব্যক্তির তিনি নিম্নলিখিত অবস্থানসমূহে থাকার জন্য অযোগ্য বিবেচিত হবেন। তিনি জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়া বা থাকার যোগ্য হবেন না। স্থানীয় সরকার সংস্থাসমূহের সদস্য, কমিশনার, চেয়ারম্যান, মেয়র বা প্রশাসক হিসেবে নির্বাচিত বা নিয়োগপ্রাপ্ত হতে বা থাকতে পারবেন না। প্রজাতন্ত্রের কোনো চাকরিতে নিয়োগপ্রাপ্ত হতে পারবেন না। এছাড়া অন্য কোনো সরকারি পদে অধিষ্ঠিত হতে পারবেন না।এতে বলা হয়েছে, উপধারা (১) এ যা কিছুই থাকুক না কেন, ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক কোনো ব্যক্তি অব্যাহতি বা খালাসপ্রাপ্ত হলে, উক্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই ধারা প্রযোজ্য হইবে না।ভোরের আকাশ/মো.আ.