নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০১:৫৯ পিএম
সংগৃহীত ছবি
রাজস্ব খাতে চাকরি স্থানান্তর এবং ১৪ মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে অল্টারনেটিভ মেডিকেল কেয়ার (এএমসি) প্রকল্পে নিয়োগ পাওয়া ৩৫৪ জন চিকিৎসক ও শিক্ষকদের মানববন্দন অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে।
অল্টারনেটিভ মেডিকেল কেয়ার (এএমসি) প্রকল্পে নিয়োগ পাওয়া ৩৫৪ জন চিকিৎসক ও শিক্ষক টানা ১৪ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। ২০২৪ সালের জুলাই থেকে আজ পর্যন্ত কোনো বেতন না পেলেও তারা দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা সদর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ, ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বিনা বেতনে দীর্ঘদিন কাজ করায় এ প্রকল্পে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এখন মানবিক ও আর্থিক সংকটে পড়েছেন।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা জানান, সরকারের প্রতিশ্রুতি এবং স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এই প্রকল্পের কর্মকর্তাদের দ্রুত ক্যারিড ওভার করে রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করার কথা ছিল। কিন্তু সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সভায় আউটসোর্সিংয়ের সুপারিশ করা হয়েছে, যা তাদের কাছে শুধু অবমাননাকর নয়, বরং অনিশ্চিত ভবিষ্যতের ইঙ্গিত বহন করছে।
এএমসি প্রকল্পের আন্দোলনরত এই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ফোকাল পার্সন ডা. মীর্জা লুতফর রহমান লিটন বলেন, ২০১৪ সাল থেকে আমরা সুনামের সঙ্গে চিকিৎসা ও শিক্ষা কার্যক্রমে নিয়োজিত আছি। সরকার আমাদের লিখিত ও মৌখিকভাবে নিয়োগ দিয়েছে। অথচ আজ ১৪ মাস ধরে বেতন পাচ্ছি না। আমরা কারও কাছে হাত পাতিনি, তবুও জনগণের সেবায় নিরলসভাবে কাজ করেছি। কিন্তু এখন আমাদের চাকরি আউটসোর্সিংয়ে পাঠানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, যা আমাদের জন্য অপমানজনক এবং অযৌক্তিক। আমরা সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলতে চাই, অবিলম্বে আমাদের প্রাপ্য বেতন পরিশোধ ও চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করতে হবে।
মানববন্ধনের সমন্বয়ক ডা. মুস্তাফিজুর রহমান সোহান বলেন, হোমিওপ্যাথি, ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা বিশ্বজুড়ে বিকল্প চিকিৎসা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশেও এই তিন চিকিৎসা ব্যবস্থা দেশের সাধারণ মানুষের চাহিদা মেটাতে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। ইতোমধ্যে এই প্রকল্প থেকে অনেক চিকিৎসক ও কর্মচারী রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করা হয়েছে। অথচ আমাদের মতো ৩৫৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আজও বেতন থেকে বঞ্চিত রেখে অনিশ্চয়তায় ফেলে রাখা হয়েছে। পরিবার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি, ঋণে জর্জরিত হচ্ছি। আমাদের সন্তানদের পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। আমরা চাই সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হোক।
চিকিৎসক ও শিক্ষকদের দাবিগুলো হলো— ১৪ মাসের বকেয়া বেতন দ্রুত দেওয়া, প্রকল্পের কর্মকর্তাদের ক্যারিড ওভার করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রাজস্ব খাতে স্থানান্তর, আউটসোর্সিং পরিকল্পনা বাতিল, বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতিকে জাতীয় স্বাস্থ্যনীতিতে যথাযথ স্বীকৃতি এবং ভবিষ্যতে তাদের চাকরির নিশ্চয়তা নিশ্চিত করা।
বক্তারা সতর্ক করে বলেন, তাদের ন্যায্য দাবি পূরণ না হলে চিকিৎসা সেবায় বিপর্যয় নেমে আসবে। কারণ বিনা বেতনে দীর্ঘদিন কাজ করা কোনো চিকিৎসকের পক্ষে আর সম্ভব নয়। বিকল্প চিকিৎসার বিকাশ বাধাগ্রস্ত হলে জনগণই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ভোরের আকাশ/তা.কা