ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে ছাত্র-রাজনীতি নিষিদ্ধ
শহীদুল ইসলাম
প্রকাশ : ১০ আগস্ট ২০২৫ ০৮:৫৯ এএম
ছবি: সংগৃহীত
শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের ঘোষণা দিয়েছেন উপযার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান। শুক্রবার (৮ আগস্ট) দিবাগত রাত ২টার দিকে ভিসির বাসভবনের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি এই ঘোষণা দেন।
উপযার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ বলেন, ২০২৪ সালের ১৭ জুলাই হলে ছাত্র-রাজনীতি নিষিদ্ধ করার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, সেটিই বহাল থাকবে এবং প্রত্যেক হল প্রশাসন এই নীতিমালার আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
এছাড়া ছাত্রদলের সদ্য ঘোষিত হল কমিটি নিয়েও সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে আলোচনার আশ্বাস দেন তিনি। তবে শিক্ষার্থীরা ভিসির এই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে হলে ছাত্র-রাজনীতির সম্পূর্ণ অবসান দাবি করেন। এসময় তারা ছয় দফা দাবি তুলে ধরে।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হচ্ছে- ছাত্রদল কেন কমিটি দিল ভিসিকে জবাব দিতে হবে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ছাত্রদল, শিবির, বাগছাস, বামসহ হলে এক্সিসটিং গুপ্ত কমিটি বিলুপ্ত করতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের হল একাডেমিক এরিয়ায় রাজনীতির সকল কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করে ছাত্র-রাজনীতির পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা দিতে হবে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সব হল কমিটি বিলুপ্ত করতে হবে, হল প্রভোস্টদের ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে ক্ষমা চাইতে হবে, দ্রুত ডাকসু বাস্তবায়ন করতে হবে।
এর আগে ঢাবি শাখা ছাত্রদলের বিভিন্ন হল ইউনিটে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে গত শুক্রবার দুপুর থেকেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ে হল পর্যায়ে ছাত্র-রাজনীতি নিষিদ্ধ রয়েছে, সেখানে ছাত্রদলের প্রকাশ্য কমিটি ঘোষণা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দেয়। বিশেষ করে রোকেয়া হলের শিক্ষার্থীরা প্রথমে আন্দোলনে নামেন। সন্ধ্যার পর আন্দোলনের মাত্রা বাড়তে থাকে এবং রাত ১২টার পর টিএসসির রাজু ভাস্কর্যে বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা একত্রিত হন। রাত ২টার দিকে ঢাবি ভিসি অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান ও প্রক্টর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে বাসভবনের সামনে আসেন। এ সময় তাদের সঙ্গে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের প্রায় এক ঘণ্টা আলাপ-আলোচনা হয়।
পরে ভিসি বলেন, ‘হল পর্যায়ে ছাত্র-রাজনীতির বিষয়ে ২০২৪ সালের ১৭ জুলাই হল প্রভোস্টের নেওয়া সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে।’ পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘হল পর্যায়ে ছাত্র-রাজনীতি নিয়ন্ত্রিত থাকবে।’
ভিসির ওই বক্তব্যে শিক্ষার্থীরা ‘না, না’ বলে আপত্তি জানান এবং হলগুলোতে সম্পূর্ণভাবে ছাত্র-রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি করেন। তারা হলে হলে শিবিরের ‘গুপ্ত কমিটি’ প্রকাশ ও ছাত্রদল কমিটির সদস্যদের শাস্তির দাবিও জানান। পরে প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ স্পষ্টভাবে ঘোষণা দেন যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে প্রকাশ্য ও গুপ্ত রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকবে।
এই ঘোষণার পর শিক্ষার্থীরা হাততালি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন এবং স্লোগান দেন— ‘এই মুহূর্তে খবর এল, হল পলিটিকস নিষিদ্ধ হলো। পরে রাত ৩টার দিকে শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ হলে ফিরে যান।
এর আগে শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে নতুন করে ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণাকে ‘জুলাই অভ্যুত্থানের সঙ্গে বেঈমানি’ বলে আখ্যা দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও মুখপাত্র উমামা ফাতেমা ফেসবুকে একটি আবেদন পোস্ট করেন।
তিনি লেখেন, গত বছর ১৬ জুলাই আবু সাঈদের শাহাদাতের পর ছাত্ররা ক্যাম্পাস ছাত্রলীগমুক্ত করার সাহস পেয়েছিল। কিন্তু বছর না ঘুরতেই গুপ্ত রাজনীতি ও প্রকাশ্য কমিটির চর্চা শুরু হয়েছে। যা স্পষ্টত জুলাই অভ্যুত্থানের সঙ্গে বেঈমানি। আজ রাতের মধ্যে কমিটি স্থগিত না হলে শিক্ষার্থীরা কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
এদিকে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান লেখেছেন, ‘হলে ছাত্র সংগঠনগুলো কমিটি দিতে পারবে না বুঝলাম, কিন্তু ডাকসু নির্বাচনে হল সংসদে প্যানেল দিতে পারবে? তখন আবার আরেক দফা আন্দোলন হবে যে, ছাত্র সংসদে রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের প্যানেল বাতিল চাই। অন্যথায় এরা ডাকসু রুপে ফিরে এসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নির্যাতন চালাবে... এরপর? এরপর দাবি উঠবে কেন্দ্রীয় সংসদে ছাত্র সংগঠনগুলোর প্যানেল দিতে পারবে না! শুধুমাত্র সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্যানেল দিতে পারবে!’
অন্যদিকে গতকাল শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের সভাপতি ফরহাদ বলেন, ‘শিবির হল এলাকায় কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি চালায় না। শিবির দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে, হলে রাজনীতি না হোক। আমরা চাই, হলের বাইরে শিক্ষার্থীরা স্বেচ্ছায় রাজনীতি করুক। অথচ বাম সংগঠনগুলো হলে কমিটি গঠন করলেও কেউ প্রশ্ন তোলে না।
ফরহাদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এখন উচিত সকল স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বসে ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে একটি লিখিত নিতিমালা তৈরি করা। যার মাধ্যমে যে রাজনীতি করতে চাইবে না তার অধিকার যেমন হরণ হবে না, একইভাবে যে রাজনীতি করতে চাইবে তারও যাতে অধিকার হরণ না হয়।
গতকাল শনিবার ফেসবুক পোস্টে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের ঢাবি আহ্বায়ক আব্দুল কাদের বলেছেন, আন্দোলনের সময় ৯ দফার মধ্যে একটিতে শিবির সভাপতি ফরহাদ ক্যাম্পাসে ছাত্র-রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি রাখতে চেয়েছিলেন। এটা নিয়ে তার সঙ্গে আধাঘণ্টার বেশি সময় তর্ক-বিতর্ক হয়।
অবশেষে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র-রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে গিয়ে তর্কবিতর্কের অবসান ঘটাতে হয়। আমি তখনো তাকে স্পষ্ট করে বলেছি, ছাত্র-রাজনীতি বন্ধ করা আসল সমাধান নয়, আর রাজনীতি বন্ধ করলে কার লাভ, সেটাও তাকে ধরিয়ে দিয়েছি।
ভোরের আকাশ/এসএইচ