শহীদুল ইসলাম
প্রকাশ : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০১:০৩ এএম
ছবি: সংগৃহীত
আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। নির্বাচনের ওপর হাইকোর্টের স্থগিতাদেশে স্থগিত করেছিলেন চেম্বার জজ আদালত। সেই আদেশ বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্ট আপিল বিভাগ। গতকাল বুধবার প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ৭ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আপিল বিভাগ তার আদেশে বলেছেন, চেম্বার আদালতের আদেশ বহাল রাখছি এবং স্থগিতাদেশ আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত বহাল রাখছি। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। এদিকে রিটকারীর পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম ও ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া। ফরহাদের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার ইমরান এ সিদ্দিক।
এর আগে, গত ১ সেপ্টেম্বর দুপুরে ডাকসু নির্বাচন আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত করেছিলেন হাইকোর্ট। ডাকসু নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনবিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী বি এম ফাহমিদা আলমের রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি হাবিবুল গণি ও বিচারপতি শেখ তাহসিন আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
হাইকোর্ট তার অপর আদেশে ডাকসু নির্বাচনে ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ মনোনীত ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদের বিরুদ্ধে আনা রিটকারী ও ডাকসু নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনবিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী বি এম ফাহমিদা আলমের সব অভিযোগ আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ডাকসুর নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
পাশাপাশি ওই ট্রাইব্যুনালকে অভিযোগ আমলে নিতে এবং এ বিষয়ে সবার উপস্থিতিতে শুনানি ও অনুসন্ধান করে আগামী ২১ অক্টোবরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। রুলও জারি করেছিলেন আদালত। ওই আদেশের কয়েক মিনিটের মধ্যেই হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে করা বিবিধ আপিল আবেদনের শুনানি নিয়ে ডাকসু নির্বাচন আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত করা হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন চেম্বার জজ আদালত। বিচারপতি ফারাহ মাহবুবের নেতৃত্বাধীন চেম্বার জজ আদালত এ আদেশ দেন।
হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের হাতে লেখা একটি আবেদনের শুনানি নিয়ে চেম্বার আদালত তাৎক্ষণিক এ আদেশ দেন। ওই আদেশের ধারাবাহিকতায় পুনরায় মামলাটির বিষয়ে গত ২ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আবেদন নিয়ে চেম্বার জজ আদালতে গেলে এ বিষয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে বুধবার শুনানির জন্য মামলার দিন নির্ধারণ করা হয়েছিলো। আপিল বিভাগের বিচারপতি ফারাহ মাহবুবের নেতৃত্বাধীন চেম্বার জজ আদালত এ আদেশ দিয়েছিলেন।
জানা গেছে, নির্বাচনি তফসিল অনুযায়ী আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিন নির্ধারণ করা হয়। নির্বাচনে কেন্দ্রীয় এবং হল সংসদ মিলিয়ে মোট ৪৭১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। চূড়ান্ত তালিকা অনুযায়ী ভিপি পদে ৪৫ জন, জিএস পদে ১৯ জন এবং এজিএস পদে ২৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক পদে ১৭ জন, কমনরুম, রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে ১১ জন, আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে ১৪ জন, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে ১৯ জন এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে ১২ জন, গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ৯ জন, ক্রীড়া সম্পাদক পদে ১৩ জন, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক পদে ১২ জন, সমাজসেবা সম্পাদক পদে ১৭ জন, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক পদে ১৫ জন, মানবাধিকার ও আইনবিষয়ক সম্পাদক পদে ১১ জন এবং ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সম্পাদক পদে ১৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সবচেয়ে বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে সদস্য পদে। এবার ১৩টি সদস্য পদের বিপরীতে মোট ২১৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ডাকসু নির্বাচন উপলক্ষে ছুটি আরও একদিন কমল: ডাকসু নির্বাচন উপলক্ষে দেওয়া তিনদিনের ছুটি কমিয়ে একদিন করা হয়েছে। ৮ ও ১০ তারিখের ছুটি প্রত্যাহার করেছে নির্বাচন কমিশন। গতকাল ডাকসু নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. জসিম উদ্দিন এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, কেবল নির্বাচনের দিন ৯ তারিখ ছুটি থাকবে।
এর আগে নির্বাচন উপলক্ষে ৭ তারিখ থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত ক্লাস ও পরীক্ষা ছুটি ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। পরে প্রার্থীদের আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে ৭ তারিখের ছুটি বাতিল করে কমিশন। এরপরও একাধিক প্রার্থী নির্বাচনের সময় নিয়ে আপত্তি জানায়। গতকাল ৮ এবং ১০ তারিখের ছুটিও বাতিল করল নির্বাচন কমিশন। ছুটি বাতিল করলেও কেন্দ্র পুনর্বিন্যাসের কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মো. জসিম উদ্দিন।
তিনি বলেন, প্রার্থীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৫০০ বুথ থেকে ৭১০টি করা হয়েছে। নির্বাচনের দিন আমাদের শাটলগুলো চালু থাকবে। আশা করি কোনো সমস্যা হবে না।
ফরহাদের ছাত্রলীগ বিতর্ক, ভিডিও বার্তা দিলেন আসল ফরহাদ : এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি এস এম ফরহাদ ও কবি জসীমউদদীন হল ছাত্রলীগের সহসভাপতি এস এম ফরহাদ হোসাইনের নামের মিল থাকলেও তারা এক ব্যক্তি নন জানিয়ে ভিডিও বার্তা দিয়েছেন আসল ফরহাদ। বুধবার এক ভিডিও বার্তায় ছাত্রলীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে মুখ খুলেছেন ফরহাদ হোসাইন।
ভিডিও বার্তায় এসএম ফরহাদ হোসাইন বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছাত্রলীগের প্যাডে যে ফরহাদকে দেখানো হচ্ছে সহসভাপতি, সে ছাত্রশিবিরের ফরহাদ নয়। ওটা আমার। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে যে গণঅভ্যুথান হয়েছে, সে সময় ১৪ জুলাই আমরা যারা ছাত্রলীগের প্যাডে ছিলাম সবাই বিদ্রোহী হয়ে একযোগে পদত্যাগ করি এবং একই দিন আমরা আন্দোলন করি। সেখানে আমরা ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’ বলে ক্যাম্পাসে প্রদক্ষিণ করি। এ ছাড়া রাজু ভাস্কর্যে গিয়ে আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকে।
তিনি বলেন, ওইদিন রাত ৩টায় সময় আমি হলে ফিরি। পরে ১৫, ১৬ ও ১৭ তারিখে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ ও বহিরাগত দ্বারা হয়েছিল। এরপর ১৭ তারিখে ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে আমি আন্দোলনে অংশগ্রহণ করি। ব্যাপারটা হচ্ছে ছাত্রলীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ও ছাত্রলীগের সহসভাপতির ব্যাপারটা আমার সঙ্গে। ছাত্রশিবিরের ফরহাদের সঙ্গে নয়। বিষয়টি আগেও বলেছি।
তিনি আরও বলেন, ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একটি রিট হয়েছে ফরহাদের বিরুদ্ধে। সেটা হতে পারে। যে কোনো মানুষ সেটা (রিট) করতে পারেন। কিন্তু ব্যক্তি আমার সঙ্গে তার মিশিয়ে ফেলা কিংবা তার সঙ্গে অন্যকে মিশিয়ে ফেলে কিছু করা মনে হয় সুখকর কিছু নয়। এজন্যই ভিডিওটি করেছি। আমি ব্যক্তি ফরহাদ আর ওই ফরহাদ এক নয়। এটাই হচ্ছে আসল কথা। প্রত্যাশা থাকবে যে কোনো বিষয়ে সুষ্ঠু এবং সুন্দর সমাধান হোক।
জুলিয়াস সিজারের প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল : ভিপি পদে প্রার্থী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জুলিয়াস সিজার তালুকদারের প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল রেখেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের তদন্তে গঠিত তিন সদস্যের কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বুধবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমদ।
তিনি বলেন, সিন্ডিকেটের গঠিত কমিটি প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল রাখার সুপারিশ করেছে। ফলে জুলিয়াস সিজার ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। এর আগে গত ২৭ আগস্ট সিন্ডিকেট সভায় ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি সিজারের ব্যপারে এ সিদ্ধান্তের কথা জানায়।
ডাকসু নির্বাচন স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেছেন জুলিয়াস সিজার : ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেছেন ভিপি পদে প্রার্থী মো. জুলিয়াস সিজার তালুকদার। একইসঙ্গে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় তার নাম ও ব্যালট নম্বর পুনর্বহালের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে রিটে।
রিট আবেদনে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত চূড়ান্ত তালিকায় ভিপি প্রার্থী হিসেবে জুলিয়াস সিজারের নাম ছিল এবং তার ব্যালট নম্বর ছিল ২৬। কিন্তু পরে তার বিরুদ্ধে ‘নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা’ অভিযোগ এনে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের হাউজ টিউটর ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নির্বাচন কমিশনে আপত্তি তোলেন। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে শুনানি হয় নির্বাচনী আপিল ট্রাইব্যুনালে, তবে ট্রাইব্যুনাল কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না নিয়ে বিষয়টি আবার নির্বাচন কমিশনে পাঠায়। কমিশন এরপরই জুলিয়াস সিজারের প্রার্থিতা বাতিল করে এবং তার নাম ও ব্যালট নম্বর চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ দেয়।
জুলিয়াস সিজার দাবি করেছেন, অভিযোগের বিষয়ে তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে গত ২৭ আগস্ট চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তাকে আইনি নোটিশ পাঠানো হলেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় তিনি হাইকোর্টে রিট করেন। রিটে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্তকে ‘আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত’ ঘোষণা চেয়ে রুল জারির আবেদন করা হয়েছে। এ বিষয়ে হাইকোর্ট আদেশ দেয়নি, তবে রিটের শুনানি শিগগিরই অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রতিটি ভোটকেন্দ্র সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে : ডাকসু নির্বাচনে সুষ্ঠুভাবে ভোট সম্পন্ন করতে প্রতিটি ভোটকেন্দ্র সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে। এ বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন। বুধবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে নিজের কার্যালয়ের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা এ কথা বলেন। এ সময় রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক গোলাম রব্বানী উপস্থিত ছিলেন।
অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ও ভোট গ্রহণের সময় নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কিছুটা সংশয় কাজ করছে বলে অনেকে জানিয়েছেন। তবে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি দূর করতে ভোটকেন্দ্রে বুথের সংখ্যা আগের চেয়ে বাড়ানো হয়েছে।
ভোট গ্রহণের সময় বাড়ানো হয়েছে উল্লেখ করে প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, প্রতি ভোটারের জন্য আট মিনিট করে সময় রাখা হয়েছে। প্রায় ৪০ হাজার ভোটার ভোট দিতে আসবেন, তা ধরেই প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ভোটের সময় এক ঘণ্টা বাড়ানো হয়েছে। সকাল ৮টা থেকে বিরতিহীনভাবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলবে। এই সময়ের মধ্যে যদি কেউ ভোটকেন্দ্রের আঙিনায় উপস্থিত হন, তাদেরও ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
ডাকসু নির্বাচনে আর কোনো বাধা নেই জানিয়ে অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন হলেন, এক প্রার্থীর রিটের প্রেক্ষিতে গতকাল হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চের শুনানি হয়েছে। রায় অনুযায়ী ৯ সেপ্টেম্বর নির্বাচন চালিয়ে যেতে আর কোনো বাধা নেই। কোনো শিক্ষার্থী বা প্রার্থীর বিরুদ্ধে নারী প্রার্থীদের সাইবার বুলিং করার অভিযোগ পেলে সাইবার বুলিং টাস্কফোর্সের আওতায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নারী প্রার্থীকে ধর্ষণের হুমকির ঘটনা নিয়ে টাস্কফোর্স কমিটির প্রধান অধ্যাপক গোলাম রব্বানী বলেন, একজন প্রার্থীকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অসৌজন্যমূলক কথা লিখেছিল। এ নিয়ে তথ্যানুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটি প্রতিবেদন দিয়েছে। তা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। এখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যথাযথ ফোরামে আলোচনা করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। তবে প্রক্টরের ক্ষমতাবলে ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
ধর্ষণের হুমকিদাতার রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পায়নি তদন্ত কমিটি : ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া এক নারী প্রার্থীকে গণধর্ষণের হুমকি দেওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আলী হোসেনকে ৬ মাসের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃত এই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি তার রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কোনো প্রমাণ পায়নি। বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বহিষ্কারের বিষয়টি জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রীকে কুরুচিপূর্ণ ভাষায় আক্রমণ ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আলী হোসেনকে ৬ মাসের জন্য বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
এ বিষয়ে গঠিত প্রক্টরিয়াল সত্যানুসন্ধান কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বহিষ্কারের পাশাপাশি আলী হোসেনের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নিয়েও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা চলছিল। পুরাতন কিছু ছবি ও ফেসবুক স্ট্যাটাসের ভিত্তিতে কেউ কেউ তাকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাথে যুক্ত বলে অভিযোগ করেন।
তবে এ বিষয়ে তদন্তকারী সত্যানুসন্ধান কমিটির সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর শেহরীন আমিন ভূঁইয়া জানান, ‘আলী হোসেন কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত এমন কোনো প্রমাণ আমরা পাইনি। তিনি নিজেও স্বীকার করেছেন যে, তার কোনো রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা নেই। তদন্তেও তেমন কোনো তথ্য উঠে আসেনি। তার যে ছবিগুলো দেখিয়ে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ করা হয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে তিনি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। আর যে স্ট্যাটাসটি তিনি দিয়েছিলেন, তা ক্ষোভের বশে দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন এবং তার জন্য তিনি ক্ষমা চেয়েছেন।
এর আগে, ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে অপরাজেয় ৭১অদম্য ২৪ প্যানেলের মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক প্রার্থী বি এম ফাহমিদা আলমকে গণধর্ষণের হুমকি দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেন আলী হোসেন। এই ঘটনায় সমালোচনার ঝড় ওঠে এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত শেষে তার বিরুদ্ধে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ভোরের আকাশ/এসএইচ