ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল
ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৭:২০ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এক ছাত্রীকে ফেসবুকে ‘গণধর্ষণের’ হুমকি দেওয়ার ঘটনায় তীব্র সমালোচনা ও প্রতিবাদ প্রকাশ অব্যাহত রয়েছে। এ ঘটনায় এক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। মঙ্গলবারও হুমকিদাতা আলী হোসেনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি ও ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে টিএসসি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। প্রতিবাদ জানিয়েছে সংবাদ সম্মেলন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে শিবির প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী এসএম ফরহাদের প্রার্থিতা নিয়ে হাইকোর্টে রিট করা ছাত্রীকে ‘গণধর্ষণের’ হুমকি দেয় আলী হুসেইন নামের এক শিক্ষার্থী। তিনি ফেসবুকে ওই ছাত্রীকে উদ্দেশ্য করে লেখেন, ‘হাইকোর্টের বিপক্ষে এখন আন্দোলন না করে আগে একে গণধর্ষণের পদযাত্রা করা উচিত।’
ঢাবি প্রশাসনের তদন্ত কমিটি গঠন
মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর দপ্তরের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ১ সেপ্টেম্বর আসন্ন ডাকসু নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী এসএম ফরহাদের প্রার্থিতা চ্যালেঞ্জ করে রিটকারী শিক্ষার্থী বিএম ফাহমিদা আলমকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কুরুচিপূর্ণ ভাষায় আক্রমণ করে হুমকি দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২০২১ সেশন ও শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আলী হুসেন। ঘটনায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী এসএম ফরহাদ ও অপরাজেয় ৭১-অদম্য ২৪ প্যানেলের সহ-সভাপতি পদপ্রার্থী মো. নাইম হাসান প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রক্টর বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি সত্যানুসন্ধান তদন্ত কমিটি গঠন করেন। এ কমিটিতে সহকারী প্রক্টর মুহাম্মদ মাহবুব কায়সারকে আহ্বায়ক করা হয়। সদস্য হিসেবে আছেন সহকারী প্রক্টর শেহরীন আমিন ভূইয়া ও মো. রেজাউল করিম সোহাগ। উক্ত ঘটনায় সত্যানুসন্ধান তদন্ত কমিটিকে সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করে দ্রুত প্রতিবেদন জমাদানের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়।
ঢাবি শিক্ষক নেটওয়ার্কের সংবাদ সম্মেলন
‘গণধর্ষণের’ হুমকি দেওয়া ছাত্রের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। এসময় প্রশাসনের কাছে ১৩ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মধুর ক্যান্টিনের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান শিক্ষক নেটওয়ার্কের সদস্যরা।
মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, সহকারী অধ্যাপক মার্জিয়া রহমান, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা এবং তাহমিনা খানম।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘হাইকোর্টে একজন প্রার্থীর রিটের বিষয়কে কেন্দ্র করে সেই নারীপ্রার্থীকে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের একজন শিক্ষার্থী ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে ‘গণধর্ষণের’ হুমকি দিয়েছেন বলে জানা গেছে। হুমকিদাতা আলী হোসেনকে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে, যেন এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়।’
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের ১৩টি দাবির মধ্যে রয়েছে- ডাকসু নির্বাচনের জন্য মোট ভোটারের অনুপাতে যথেষ্ট সংখ্যক বুথ নিশ্চিত করা; ভোটদানের সময়সীমা বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত বর্ধিত করা; ভোট গণনার প্রক্রিয়াকে কার্যকর ও স্বচ্ছ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করা; নির্বাচনী প্রক্রিয়ার প্রস্তুতি হিসেবে আচরণবিধি ও এর লঙ্ঘনসংক্রান্ত সব কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গ্রহণ করা ও সেগুলো যেন কোনো পক্ষের প্রতি বৈষম্যমূলক না হয়, তা নিশ্চিত করা; সাইবার বুলিং বন্ধ করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া, বিশেষত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সম্পর্কে অরুচিকর পোস্ট করা ফেসবুক গ্রুপ বা পেজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া; অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের ভোটদানের উদ্দেশ্যে ক্যাম্পাসে নিরাপদে আগমন নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজন অনুসারে বাস ও ট্রিপের সংখ্যা বাড়ানো; সংবাদমাধ্যমকর্মী ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সংবাদ সংগ্রাহকদের আচরণবিধি মেনে চলার ব্যবস্থা নেওয়া; যৌন হয়রানিবিষয়ক যেকোনো ঘটনা সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়নবিরোধী সেলের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা।
সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক জানায়, যেভাবে ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচন তারা পর্যবেক্ষণ করেছিল, একইভাবে আসন্ন নির্বাচনেও তারা স্বতন্ত্র ও স্বাধীনভাবে পর্যবেক্ষকের ভূমিকা পালন করবে।
প্রতিবাদে ছাত্রদলের বিক্ষোভ
ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রশিবির-সমর্থিত প্যানেলের জিএস প্রার্থী এসএম ফরহাদের প্রার্থিতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদনকারী ছাত্রীকে ‘গণধর্ষণের’ হুমকির প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।
মঙ্গলবার দুপুরে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা টিএসসিতে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন। মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে আন্দোলনকারীরা উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। ওই ছাত্রী ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’- এর জিএস পদপ্রার্থী এসএম ফরহাদের প্রার্থিতা নিয়ে রিট করেন। পরে হাইকোর্ট ডাকসু নির্বাচন স্থগিতের আদেশ দিলে আলী হোসেন নামের এক শিক্ষার্থী ফেসবুকে তাকে গণধর্ষণের হুমকি দেন।
ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিলে নেতা-কর্মীরা ‘এসো ভাই, এসো বোন, গড়ে তুলি অঙ্গীকার’, ‘আলী হোসেনের ছাত্রত্ব, বাতিল করো, করতে হবে’, ‘নিপীড়কের ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না’ বলে স্লোগান দেন। বিক্ষোভ মিছিলে ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ও হল শাখা ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মী অংশগ্রহণ করেন।
অবস্থান কর্মসূচিতে রোকেয়া হলের আহ্বায়ক শ্রাবণী আক্তার বলেন, ‘রাজনীতিতে, সামাজিক কার্যকলাপে আমাদের কম অংশগ্রহণের পেছনে আমাদের ভাইয়েরা দায়ী। ডাকসুর মতো একটি নির্বাচনে মাত্র ৩০ শতাংশ নারী অংশগ্রহণ করছেন। সেটি কেন?’ এ সময় তিনি নারীদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিতে সবার প্রতি আহ্বান জানান।
শামসুন্নাহার হল ছাত্রদলের আহ্বায়ক বীথি হাসান বলেন, ‘আমরা যখন কোনো বিষয়ে প্রতিবাদ করি, তখন আমাদের হেনস্তা করা হয়। আমাদের নিয়ে সাইবার বুলিং করা হয়। আমাদের গণধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়। একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী আমাদের সব সময় আটকে রাখতে চায়।’
ওই ছাত্রীকে হুমকি দেওয়া শিক্ষার্থী আলী হোসেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। আলী হোসেন ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘হাইকোর্টের বিপক্ষে এখন আন্দোলন না করে আগে একে গণধর্ষণের পদযাত্রা করা উচিত।’
আলী হোসেনের এ বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান ডাকসুর ভিপিপ্রার্থী ও গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের নেতা আবদুল কাদের। তিনি ফেসবুকে লেখেন, ‘রিটকারী নারীপ্রার্থীকে লিগ্যালি এবং পলিটিক্যালি ডিল না করে গণধর্ষণের হুমকি দেওয়ার মতো জঘন্য কাজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলতে দেওয়া হবে না।’
ভোরের আকাশ/এসএইচ