ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৫ আগস্ট ২০২৫ ১০:২৬ পিএম
সংগৃহীত ছবি
বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে আসন্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে ব্রেইল পদ্ধতিতে কিছু সংখ্যক ব্যালট পেপার ছাপানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনের চিফ রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন রোববার (২৪ আগস্ট) রাতে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যে সব শিক্ষার্থী বা ভোটার ব্রেইলে ভোট দিতে ইচ্ছুক, তারা ডাকসু নির্বাচনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন বরাবর এবং হল সংসদের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আবাসিক হলের রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে আগামী ২৬ আগস্টের মধ্যে আবেদন বা সরাসরি যোগাযোগ করতে পারবেন।
ভোটার তালিকা প্রদর্শনে গোপনীয়তা : নির্বাচনের চূড়ান্ত ভোটার তালিকা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ছিল। তবে শিক্ষার্থীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সর্বসাধারণের জন্য চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রদর্শন বন্ধ করা হয়েছে। রোববার ডাকসু নির্বাচন কমিশনের চিফ রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক জরুরি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
উল্লেখ্য, কেবলমাত্র সংশ্লিষ্ট হল ও দপ্তরগুলোর জন্যই চূড়ান্ত ভোটার তালিকা উন্মুক্ত থাকবে।
এর আগে, রোববার সকালে সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিনকে বিবাদী করে রিট দায়ের করেন।
বিধি অমান্য করে প্রচারণা : ডাকসু নির্বাচন সামনে রেখে প্রার্থীদের জন্য আনুষ্ঠানিক প্রচারণা কাগজে কলমে এখনো শুরু হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্দেশনা ও ‘নির্বাচন আচরণ বিধিমালা’ অনুযায়ী প্রার্থীরা আগামী ২৫ আগস্ট পর্যন্ত কোনো ধরনের প্রচারণা চালাতে পারবেন না। ২৬ আগস্ট থেকে ৭ সেপ্টেম্বর রাত ১১টা পর্যন্ত নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রচারণা করা যাবে। এই সময়ও সামাজিক,আর্থিক সহায়তা, মজলিশ-মাহফিল আয়োজন কিংবা ধর্মীয় প্রাঙ্গণে প্রচারণা চালানো যাবে না। এসব কর্মকাণ্ড ‘নির্বাচন আচরণ বিধিমালা’ ধারা-১৭ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। কিন্তু বাস্তবে এ নিয়মের তোয়াক্কাই করছে না ছাত্রদল, শিবির, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদসহ বাকি ছাত্র সংগঠন, স্বতন্ত্র প্যানেল এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
সরজমিনে দেখা যায়, ক্যাম্পাসের বিভিন্ন হলে হলে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে দেখা করছেন ভিপি, জিএস, এজিএস এবং অন্য সম্পাদক ও সদস্য প্রার্থীরা। তবে অবাক করার বিষয় কোনো ছাত্র নেতাই ভোট চাচ্ছেন না। তারা সালাম দিয়ে চাচ্ছেন দোয়া।
এ বিষয় কথা হয় ছাত্রদল মনোনীত ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খানের সঙ্গে। তিনি বলেন, হলগুলোতে ছাত্রদলের প্যানেল রয়েছে। প্যানেল থেকে যারা নির্বাচন করবে তাদের সঙ্গে কথা বলা এবং সমন্বয় করার জন্যও তো হলে হলে যেতে হচ্ছে। শিবির-বাগছাসসহ সবাই ক্যাম্পাসে ঘুরছেন, দেখা করছেন। কারোর সঙ্গে দেখা হলে সালাম দিয়ে দোয়া চাওটা কী আচারবিধি লঙ্ঘন? আমি কী একজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলতে পারবো না? এটাকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে।
এদিকে, ব্যবসায় অনুষদের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় শেষে সাংবাদিকদের কাছে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে শিবির সমর্থিত সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবির সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন খান বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচন উপলক্ষ্যে এক ধরনের সাজ-সাজ আমেজ বিরাজ করলেও নির্বাচন কমিশনের নমনীয় আচরণের কারণে কিছু প্যানেল ও প্রার্থীরা নিয়মিত আচরণবিধি লঙ্ঘন করে যাচ্ছেন। আশা করি, কমিশনের পক্ষে যে ধরনের নির্দেশনা ছিল তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে যারা আচরণ বিধি লঙ্ঘন করছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
২১ প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাহার : ডাকসু নির্বাচনে ২১ জন প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেুন। আজ দুপুরে সিনেট ভবনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ডাকসু নির্বাচনের চিফ রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন এ তথ্য জানান।
ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, মেজর কোনো আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা এখন পর্যন্ত ঘটেনি। এমনটি যেন ভবিষ্যতেও না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে চিফ রিটার্নিং অফিসার ও তার টিম কাজ করছে। কোনো ধরনের বৈষম্য বা অসমতা দেখা দিলে, লিখিতভাবে জানালে আমরা বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেব।
তিনি বলেন, ভোট প্রদানে জটিলতা এড়াতে হলে হলে হল কার্ড, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড, লাইব্রেরি কার্ড অথবা পে-ইন স্লিপ দেখিয়ে ভোট দেয়া যাবে। আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল ১১টায় সিনেট হলে সকল ভিপি, জিএস ও এজিএস প্রার্থীদের সাথে বৈঠকে বসে আচরণবিধি নিয়ে আলোচনা করা হবে বলেও জানান ড. জসীম উদ্দিন।
ভোরের আকাশ/এসএইচ