ডাকসু নির্বাচন
শহীদুল ইসলাম
প্রকাশ : ২৩ আগস্ট ২০২৫ ০৮:৪৮ এএম
ছবি: সংগৃহীত
এশিয়া শীর্ষ ১০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় জায়গা করে নেওয়া দেশের প্রধান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ অংশ নিতে না পারলেও বাকি সব ছাত্র সংগঠনের মনোনয়ন সংগ্রহ ও জমা প্রদান করেছে। ইতিমধ্যে প্রার্থীরা টকশো থেকে শুরু করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে তাদের প্রতিপক্ষের যৌক্তিক সমালোচনা ও তাদের পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলছেন।
গতকাল শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে শামসুন নাহার হলের প্রার্থীদের একটি বড় অংশের সমন্বয়ে ১১ জনের প্যানেল ঘোষণা করা হয়। এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের আটটি কেন্দ্রে প্রায় ৩৭ হাজার শিক্ষার্থী ভোট প্রদান করবেন। ভোট অনুষ্ঠিত হবে ৯ সেপ্টেম্বর।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আগামী ২৬ আগস্ট থেকে প্রার্থীরা তাদের প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারবেন। কিন্তু এর আগে প্রচারণামূলক বিলবোর্ড-ব্যানার সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে ডাকসু নির্বাচন কমিশন। শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দীনের সই করা এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়।
এর আগে, ২২ আগস্ট থেকে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রচারণা চালানো আচরণবিধি লঙ্ঘনের মধ্যে পড়বে বলে জানায় কমিশন।
বিবৃতিতে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থী ও সংশ্লিষ্ট পক্ষের উদ্দেশে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যেসব প্রচারণামূলক বিলবোর্ড/ব্যানার টানানো রয়েছে কিংবা এরই মধ্যে টানানো হয়েছে, সেগুলো অবিলম্বে সরিয়ে ফেলতে হবে। প্রচারণা শুরুর নির্ধারিত দিন থেকে আচরণবিধি অনুযায়ী প্রচারকাজ চালানো যাবে।
এদিকে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের প্রাথমিক প্রার্থীতা যাদের বাতিল হয়েছে তারা শুক্রবার ও শনিবার প্রার্থীতার জন্য আপিলের সুযোগ পাচ্ছেন। বৃহস্পতিবার ডাকসু নির্বাচনের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত প্রার্থিতা ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম। কমিশন ৪৬২ জনের একটি বৈধ তালিকা প্রকাশ করেন।
এর মধ্যে ৪৮ জন ভিপি প্রার্থী, ১৯ জন জিএস প্রার্থী ও ২৮ জন এজিএস প্রার্থী চূড়ান্ত বৈধ তালিকা প্রকাশ করা হয়। যারা প্রার্থী হতে পারেননি তাদের মধ্যে অনেকে শুক্রবার নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে রিটানিং অফিসারের কার্যালয়ে প্রার্থিতা ফিরে পেতে আপিল করেন।
চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ত্রুটিপূর্ণ মনোনয়নপত্র জমা দেয়ায় অযোগ্য ১২ জন প্রার্থী সকাল ১১টা পর্যন্ত পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করে। আগামী ২৪ আগস্ট এসব আপিলের নিষ্পত্তি করে প্রার্থীরা ফেরত পাবেন কি না তা জানিয়ে দেবে কমিশন।
অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, ডাকসুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈধ শিক্ষার্থীরা মনোনয়ন ফরম কোনো দলীয় পরিচয়ে নেননি। ভোট গ্রহণের আগের দিন পর্যন্ত কোনো প্রার্থীর নাম অপরাধীর তালিকায় পাওয়া গেলে প্রার্থিতা থেকে বাদ দেওয়ার সুযোগ আছে।
সরেজমিন দেখা যায়, শুক্রবার জুমার নামাজের পর বিভিন্ন পদপ্রার্থীরা ভোটের প্রচারণায় নামেন। তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
এর মধ্যে শহীদুল্লাহ হলে নামাজ আদায় করেন ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান, এসময় আন্তর্জাতিক সম্পাদক প্রার্থী মেহেদি হাসানসহ একাধিক প্রার্থী সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
বিজয় একাত্তর হলে জুমার নামাজ আদায় করেন ভিপি প্রার্থী সাদিক কায়েম ও জিএস প্রার্থী এসএম ফরহাদ। ফজলুল হক মুসলিম হলে নামাজ আদায় করেন গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের জিএস প্রার্থী আবু বাকের মজুমদারসহ তার প্যানেলের অনেকেই।
মুক্তিযোদ্ধা জিয়া হলে নামাজ আদায় করেন স্বতন্ত্র জিএস প্রার্থী মাহিন সরকার, এছাড়া ইয়ামিন মোল্লার ‘ডাকসু ফর চেঞ্জ’ ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’, অপরাজেয় ৭১, অদম্য ২৪ সহ বিভিন্ন প্যানেল, স্বতন্ত্র ও দলীয় প্রার্থীরা বিভিন্ন হলে নামাজ আদায় করে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
জুমার নামাজ শেষে ডাকসুতে জিতে আসলে কি কি কাজ করবেন জানিয়ে শুক্রবার মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করেন শিবির সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’।
এ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের সাবেক সভাপতি আবু সাদিক কায়েম বলেন, ডাকসুর কাজ নেতা তৈরি করা নয়, বরং শিক্ষার্থীদের স্বার্থ হাসিল করা। শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো প্রশাসনের কাছে পৌঁছে দেওয়া এবং সেগুলো বাস্তবায়ন করা। সেই জায়গা থেকে আমরা আমাদের প্যানেল সম্পাদকীয় পদগুলো স্পেশালাইজেশন আনার চেষ্টা করছি। আমাদের ইশতেহার শিগগিরই প্রকাশ করা হবে।
তার পরিকল্পনা জানিয়ে বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীদের এখনো খাবার নিয়ে চিন্তা করতে হয়। অথচ বিদেশি বিশ্ববিদ্যালগুলোতে শিক্ষার্থীদের এ ধরনের দুশ্চিন্তা নেই, আমরা এ সমস্যা নিরসনে কাজ করবো। পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা চিকিৎসার অভাবে ভোগে, এ বিষয়েও পদক্ষেপ নেবো। ১০৪ বছর পেরিয়ে গেলেও শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট এখনো রয়ে গেছে। অনেক শিক্ষার্থী গ্রাম থেকে বড় স্বপ্ন নিয়ে ঢাবিতে এসে আবাসন সমস্যার কারণে হতাশায় ভোগেন। নির্বাচিত হলে আবাসন সংকটসহ শিক্ষার্থীদের মৌলিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে কাজ করবো।
সাদিক কয়েম বলেন, রেজিস্ট্রার ভবনের কাজ এখনো মান্ধাতার আমলের মতো চলে, শিক্ষার্থীদের এক কাজের জন্য বারবার দৌড়াতে হয়। শিক্ষার্থীদের পার্ট-টাইম চাকরি, আধুনিক লাইব্রেরি ব্যবস্থা, মসজিদের আধুনিকায়ন, নারী শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসনের প্রসারসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক সমস্যা সমাধান করা হবে।
জুমার নামাজ শেষে কার্জন হলে ছাত্রদল মনোনিত ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ’ সহ সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রুপে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ছাত্রদলের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এটি নিঃসন্দেহে নির্বাচনী পরিবেশের জন্য হুমকি। ছাত্রদল প্যানেল অন্যদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। কারণ, দলের অভ্যন্তরীণ ভোটের মাধ্যমে সবাই প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছে।
এই বক্তব্য নিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। মিথ্যা প্রচারণা না চালিয়ে রাজনৈতিকভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে মোকাবিলা করার আহবান জানাচ্ছি। পাশাপাশি নির্বাচনী পরিবেশ বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচিছ। তিনি, কার্জন হল, মোতাহার হোসেন ভাবন, মোকাররম ভবনে ক্যানটিন সমস্যা থেকে শুরু করে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা সমস্যা সমাধানের ব্যপারে প্রতিজ্ঞা করেন।
জিএস প্রার্থী আবু বাকের মজুমদার বলেন, পবিত্র জুমার দিন, হলের মসজিদে নামাজ পড়লাম। আমি এই ফজলুল হক হলের শিক্ষার্থী। ফলে আমার বন্ধু, ছোট ভাই, বড় ভাই সবার সঙ্গে এমনিতেই দেখা হয়, কথা হয়। এরই অংশ হিসেবে কুশল বিনিময় করছি। এটা আমার স্বাভাবিক জীবনের অংশ, প্রচারের অংশ নয়। নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা যখন শুরু হবে, তখনই আমরা আনুষ্ঠানিক প্রচারে নামবো।
এদিকে শুক্রবার ডাকসুতে আটটি কেন্দ্রের কথা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কার্জন হল, বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্র, ছাত্র শিক্ষাক কেন্দ্র (টিএসসি), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব, নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন, উদয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগ, ইউল্যাব স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্র।
এবছর ডাকসুতে নির্বাচনী প্যানেলগুলো হচ্ছে-(জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল), বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ (গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ) এবং অপরাজেয় ৭১-অদম্য ২৪ (বামপন্থী তিন সংগঠনের যৌথ প্যানেল)। এর আগে প্যানেল ঘোষণা করেছিল প্রতিরোধ পর্ষদ (বামপন্থী সাত ছাত্রসংগঠনের যৌথ প্যানেল), ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট (ইসলামী ছাত্রশিবির), ডিইউ ফার্স্ট (মাহিন সরকার নেতৃত্বাধীন স্বতন্ত্র প্যানেল), ডাকসু ফর চেঞ্জ, ভোট ফর চেঞ্জ (ছাত্র অধিকার পরিষদ), ছাত্র ফেডারেশন, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন এবং সম্মিলিত ছাত্র ঐক্য (স্বতন্ত্র প্যানেল)।
ভোরের আকাশ/এসএইচ