নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৩ জুলাই ২০২৫ ১১:৩০ পিএম
সিআরআই ও সূচনা ফাউন্ডেশনের অনুদান নথি চেয়ে এনবিআরের কাছে দুদকের চিঠি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের প্রতিষ্ঠিত সূচনা ফাউন্ডেশন এবং তার পুত্র সজিব ওয়াজেদ জয়ের নেতৃত্বাধীন সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) অনুদান ও দানের নথিপত্র চেয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের উপ-পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, সূচনা ফাউন্ডেশনকে ২০১৬ ও ২০২৩ সালের দুটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে আয়কর ও দানের ওপর করমুক্ত সুবিধা প্রদান করা হয়েছিল। ওই সুবিধাসংক্রান্ত নথি, বিশেষ করে এসআরও নং-৮৭-আইন/২০১৬ অনুযায়ী দান ও অনুদান মওকুফ সংক্রান্ত মূল নথি (নোটশিটসহ) ১৪ জুলাইয়ের মধ্যে জমা দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, নথিগুলো যাঁরা সংরক্ষণ করেন, তাঁদের নাম, পিতার নাম, বয়স, পদবি, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা এবং মোবাইল নম্বরসহ কর্মবণ্টন তালিকার সত্যায়িত কপিও জমা দিতে হবে।
এ বিষয়ে দুদক মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, অনুসন্ধানের স্বার্থে নথি তলব করা দুদকের একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া। অনুসন্ধান কর্মকর্তা প্রয়োজনে যেকোনো নথি চেয়ে নিতে পারেন।
এ অনুসন্ধানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপ-পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম। তার সঙ্গে রয়েছেন সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া, মুবাশ্বিরা আতিয়া তমা, এস এম রাশেদুল হাসান, এ কে এম মুর্তুজা আলী সাগর, মো. মনিরুল ইসলাম (অন্য এক সদস্য) ও উপসহকারী পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সূচনা ফাউন্ডেশনের করমুক্ত সুবিধা বাতিল করে এনবিআর। এরপর থেকেই ফাউন্ডেশনটির অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।
২০ মার্চ এক অভিযোগের ভিত্তিতে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ও এক্সিম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের বিরুদ্ধে ৩৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ-এর অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়। অভিযোগে বলা হয়, ২০১৭ সালের মে মাসে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসভুক্ত ২০টি ব্যাংককে সূচনা ফাউন্ডেশনের সিএসআর ফান্ডে ৩৩ কোটি ৫ লাখ টাকা দিতে চাপ দেওয়া হয়। এই অর্থ কীভাবে খরচ হয়েছে—তা জানতে দুদক সূচনা ফাউন্ডেশনে চিঠি দিলেও কোনো নথি পাওয়া যায়নি। এমনকি এক অভিযানে ফাউন্ডেশনের অফিসের অস্তিত্বও মেলেনি।
একই দিনে আরেকটি মামলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক পদে ভুয়া যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়ার অভিযোগ আনা হয় সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে। অভিযোগে বলা হয়, বিএসএমএমইউ-তে শিক্ষকতার ভুয়া অভিজ্ঞতা দেখিয়ে তিনি ২০২৩ সালে ডব্লিউএইচও-তে আবেদন করেন এবং নিয়োগ পান।
চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি দুদকের একটি দল সূচনা ফাউন্ডেশনে অভিযান চালায়। সে সময় অফিসের কোনো অস্তিত্ব না পাওয়ার পাশাপাশি ব্যাংক হিসাবে সন্দেহজনক লেনদেন ও প্রাথমিক দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া যায় বলে জানায় দুদক।
২০১৪ সালে স্বেচ্ছাসেবী ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সূচনা ফাউন্ডেশন গঠিত হয়। মানসিক ও স্নায়ুবিক প্রতিবন্ধিতা, অটিজম এবং মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করে এই প্রতিষ্ঠান। সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ছিলেন এর প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন।
ভোরের আকাশ//হ.র