আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ১৪ জুলাই ২০২৫ ১২:২৭ এএম
গাজায় পানি আনতে গিয়ে ইসরায়েলি হামলায় ৬ শিশুসহ নিহত ১০
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার মধ্যাঞ্চলে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় ছয় শিশুসহ অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন। রোববার (১৩ জুলাই) স্থানীয় সময় সকালে নুসিরাত শরণার্থীশিবিরে পানি সংগ্রহের সময় এ হামলা চালানো হয় বলে জানিয়েছে গাজার জরুরি পরিষেবা সংস্থা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আল-নুসিরাত শরণার্থীশিবিরের কেন্দ্রস্থলে পানির একটি ট্যাংকারের পাশে খালি জেরিকেন হাতে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের ভিড় লক্ষ্য করে ইসরায়েলি ড্রোন থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়। হামলায় ঘটনাস্থলেই হতাহতের ঘটনা ঘটে। নিহতদের মরদেহ স্থানীয় আল আওদা হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও ১৬ জন, যাদের মধ্যে সাতজনই শিশু।
এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, "হামলার পরপরই রক্তাক্ত শিশুদের কান্না, মানুষের চিৎকার, চারদিকে শুধু বিভীষিকা—প্রথমে বুঝতেই পারিনি কী ঘটছে।"
আহতদের স্থানীয় বাসিন্দারা ব্যক্তিগত গাড়ি ও গাধার গাড়িতে করে হাসপাতালে পৌঁছে দেন।
এ হামলার কয়েক ঘণ্টা আগে গাজার সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি জানিয়েছে, মধ্য গাজা ও গাজা সিটির আবাসিক ভবন লক্ষ্য করে চালানো পৃথক তিনটি হামলায় আরও ১৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের সীমান্ত-অভিযানের জবাবে ইসরায়েল গাজায় যে সামরিক অভিযান শুরু করে, তা এখন পর্যন্ত চলছে। হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলমান সংঘাতে গাজায় মৃতের সংখ্যা ৫৭ হাজার ৮৮২ জনে পৌঁছেছে। একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে প্রায় সব বাসিন্দা। ৯০ শতাংশের বেশি বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
সংঘাতের ফলে গাজায় স্বাস্থ্যসেবা, পানি, স্যানিটেশন ব্যবস্থা প্রায় সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। চরম ঘাটতি দেখা দিয়েছে খাদ্য, জ্বালানি, ওষুধ ও আশ্রয়ের।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ১৩০ দিনের মধ্যে এই সপ্তাহে প্রথমবারের মতো গাজায় ৭৫ হাজার লিটার জ্বালানি প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত অপ্রতুল।
জাতিসংঘের ৯টি সংস্থা শনিবার এক যৌথ বিবৃতিতে হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছে, জ্বালানির ঘাটতি এখন মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে।
জ্বালানি সংকটের কারণে গাজার হাসপাতালগুলো অন্ধকারে ডুবে গেছে, বন্ধ হয়ে যাচ্ছে প্রসূতি, নবজাতক ও নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট। চলতে পারছে না অ্যাম্বুল্যান্সও।
গাজায় প্রতিদিনের জীবন হয়ে উঠেছে যুদ্ধ ও সংকটের প্রতিচ্ছবি। পানি সংগ্রহ করতে গিয়েও প্রাণ হারাতে হচ্ছে শিশুদের। আন্তর্জাতিক মহল একে মানবিক বিপর্যয় হিসেবে বিবেচনা করলেও বাস্তব পদক্ষেপ বা কার্যকর শান্তি এখনো অধরাই থেকে যাচ্ছে।
ভোরের আকাশ//হ.র