× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বাজারই নির্ধারণ করবে ডলারের মূল্য

তাকী মোহাম্মদ জোবায়ের

প্রকাশ : ১৫ মে ২০২৫ ১০:২৪ এএম

বাজারই নির্ধারণ করবে ডলারের মূল্য

বাজারই নির্ধারণ করবে ডলারের মূল্য

ডলারের বিনিময় হারে ‘অদৃশ্য’ নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখে বাজারমুখী করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ঋণের দুই কিস্তির ১৩০ কোটি ডলার পাওয়ার শর্ত পূরণ করতে গিয়ে ডলারের বিনিময় হার বাজারমুখী করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলে আইএমএফের ঋণ সহ প্রায় সাড়ে ৩শ কোটি ডলার বিদেশি ঋণ প্রাপ্তি নিশ্চিত হয়েছে, যা আগামী জুনের মধ্যেই পাবে বাংলাদেশ। এই সুখবর জানাতে গতকাল বুধবার দুপুরে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন ডাকেন গভর্নর।

দুবাই থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে গভর্নর জানান, গতকালই আইএমএফের সঙ্গে কর্মকর্তা পর্যায়ের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। আগামী মাসের শেষে ঋণের কিস্তি ছাড়করণের প্রস্তাব আইএমএফের পর্ষদ সভায় উঠছে।

সংবাদ সম্মেলনের আগে গতকাল সকালে দেশের সকল ব্যাংকের (এডি) ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের ডেকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়ে ডলারের বিনিময় হার বাজারে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান গভর্নর।

তবে গতকাল দিনের লেনদেন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ডলারের বিনিময় হারে দৃশ্যমান কোনও পরিবর্তন আসেনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে গতকালের বিনিময় হার ১২২ টাকাই দেখা গেছে। এর আগের দিনেও একই হারে ডলার কেনা-বেচা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, বিনিময় হার নির্ধারণের নতুন এই পদ্ধতিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে স্বাধীনভাবে ডলার লেনদেনের অনুমতি দেওয়া হবে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি নির্দিষ্ট ঊর্ধ্ব ও নিম্ন সীমা বজায় রাখবে, যা বাজার পর্যবেক্ষণ কৌশলের অংশ হিসেবে প্রকাশ করা হবে না। পাশাপাশি বাজারে হস্তক্ষেপ করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একটি তহবিল ব্যবহার করবে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিনিময় হার নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করার উপক্রম হলে ওই তহবিল থেকে ডলার বিক্রি করে বাজারে হস্তক্ষেপ করবে।

বৈদেশিক মুদ্রার বাজার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কত ডলারের তহবিল করা হয়েছে জানতে চাইলে গভর্নর বলেন, আমরা ৫০ কোটি ডলারে ফান্ড তৈরি করেছি। যদি প্রয়োজন হয় তখন এই তহবিল ব্যবহার করে আমরা বাজারে হস্তক্ষেপ করবো যাতে কেউ ডলারের দাম নিয়ে খেলতে না পারে। 

সিন্ডিকেটদের সতর্ক করে দিয়ে গভর্নর বলেন, ডলারের বাজারে সিন্ডিকেশন করতে আসবেন না। তাহলে কিন্তু হাত পুড়ে যাবে।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমরা ডলার বাজারমুখী করেছি এর অর্থ এই নয় যে ডলার যেকোনো দামে বিক্রি করা যাবে। তিনি উল্লেখ করেন, আমরা আশা করি বাজারে পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ থাকায় বিনিময় হার বর্তমান হারের কাছাকাছি থাকবে। আশা করা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হবে না, তবে প্রয়োজনে তা করবে।

তিনি বলেন, প্রয়োজন হলে বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে অংশগ্রহণকারীর মতো ডলার ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে হস্তক্ষেপ করবে।  

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান জানান, আইএমএফের ১.৩ বিলিয়ন ডলার তহবিলের পাশাপাশি জুনের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক এবং জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সির মতো বিভিন্ন উন্নয়ন অংশীদার থেকে মোট প্রায় ৩৫০ কোটি ডলার পাবে।

এদিকে গতকাল ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরে বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের কাছ থেকে ১৪০ কোটি মার্কিন ডলারের বাজেট সহায়তা পাচ্ছে সরকার। আগামী জুনের মধ্যে এসব বাজেট সহায়তার ঋণ চুক্তি সই হবে। ইতোমধ্যে সংস্থা দুটি এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। আন্তজাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি  ছাড়ে অনিশ্চিয়তার মধ্যে এসব বাজেট সহায়তা কার্যক্রমও এতদিন আটকে ছিল। আইএমএফর কাছে থেকে জুনে দুই কিস্তি ছাড়ের আশ্বাস পেয়ে এডিবি ও বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাজেট সহায়তা আলোচনা পুনরায় শুরু হয়েছে।

ইআরডির কর্মকর্তারা জানান, আইএমএফের কাছ থেকে সবুজ সংকেট পেয়েই বাজেট সতায়তা নিশ্চিত করার প্রস্তুতি শুরু করেছে ইআরডি। এর অংশ হিসেবে গতকাল ‘রেজিলিয়েন্স আন্ড রিকভারি ডেভেলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিট-২’ শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় ৫০ কোটি ডলার সহায়তা নিয়ে আলোচনা সভা ইআরডিতে অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইআরডি, অর্থ বিভাগ এবং বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে মঙ্গলবার আলাদা দুটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় এডিবির সঙ্গে। এর মধ্যে ব্যাংকিং সেক্টর রিফর্মস সাবপ্রোগ্রাম-১ কর্মসূচির আওতায়  ৫০ কোটি ডলার এবং ক্লাইমেট রিসপন্সিভ ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম- সাবপ্রোগ্রাম-২ শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় ৪০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা নিশ্চিয়তা পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, ডলারের বিনিময় হার নিয়েই আইএমএফের তহবিল পাওয়ার বিষয়ে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল। বাংলাদেশে আইএমএফ মিশন ডলারের বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করার জন্য চাপ দিচ্ছিল। অন্যদিকে এই সুপারিশের বিরোধিতা করছিল এই যুক্তিতে যে, এটি বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।

আইএমএফের পরামর্শ অনুসরণ করে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর ক্রলিং পেগ প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করে একটি রেফারেন্স রেটভিত্তিক বিনিময় হার ব্যবস্থা চালু করে। কয়েক দিন পর, ব্যাংক নিয়ন্ত্রক সংস্থা আরও একটি নির্দেশনা জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলিকে প্রতিটি আমেরিকান ডলার ক্রয়-বিক্রয়ের সর্বোচ্চ ব্যবধান ১ টাকার মধ্যে রাখার নির্দেশ দেয়, যা আইএমএফের জন্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। কারণ তারা মনে করে, এই নির্দেশনা ব্যবহার করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইছে।

গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সংবাদ সম্মেলনের পরপরই কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি সার্কুলার জারি করে ডলার ক্রয়-বিক্রয়ের স্প্রেড বা তারতম্য সীমা বাতিল করে। আইএমএফ ২০২৩ সালে বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করে। এ পর্যন্ত তিন কিস্তিতে মোট ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বেশ কিছু কর্মকর্তা নিয়ে গভর্নরের বর্তমানে দুবাইতে অবস্থানের কারণ জানতে চাইলে আহসান এইচ মনসুর বলেন, দুটো লক্ষ্য নিয়ে আমি দুবাইতে এসেছি। মুদ্রাবাজারের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। মানি চেঞ্চারদের সাথেও আলোচনা হবে। বিভিন্ন প্রতিনিধি ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা হবে। বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের যারা বিনিয়োগকারী এবং যারা বিনিয়োগ করতে চায় তাদের সাথেও আলোচনা হবে। আমরা বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সাথে আলোচনা করার জন্য এখানে এসেছি।

১৮টি ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন আটকে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে গভর্নর বলেন, প্রথমত এখানে বাংলাদেশ ব্যাংক বিদ্যমান নীতিমালা প্রয়োগ করেছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই নীতিমালা প্রয়োগ করতে গিয়ে ব্যাংকগুলোর অসুবিধা হচ্ছে। তারা সময় চেয়েছে। আমরা এক মাস সময় দিয়েছি।

এখন যাদের প্রতিবেদন আটকে গেছে, তাদের মধ্যে কোন কোন ব্যাংক সামনে অবলোপনে যাবো। সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন সেটা জানে। এখানে আমানতকারীদের স্বার্থে আমাদের যা করণীয় তা করবো। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ দেখার কাজ বাংলাদেশ ব্যাংকের নয়। পুঁজিবাজার সবসময়ই ঝুঁকিপূর্ণ। এখানে বুঝে শুনেই বিনিয়োগ করতে হবে। এখানে স্পন্সর শেয়ারহোল্ডারদের অপরাধের কারণে যদি প্রতিষ্ঠান ক্ষতির মুখে পড়ে সেটার দায় তাদেরই নিতে হবে। কিন্তু ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী, তারা ওই ব্যাংকের অবস্থা জেনে শুনেই বিনয়োগ করেছেন। তবে আমি মনে করি, দিন শেষে আমাদের উদ্যোগ সবার জন্যই ভালো হবে। কিন্তু এস আলম, সাইফুজ্জামানদের মতো বিনিয়োগকারীদের জন্য ভালো হবে না। এখানে এরা ক্ষতির শিকার হবেই।

ভোরের আকাশ/এসএইচ

  • শেয়ার করুন-
বাংলাদেশ ব্যাংকে ঝুলে আছে শেয়ারধারীদের ভাগ্য

বাংলাদেশ ব্যাংকে ঝুলে আছে শেয়ারধারীদের ভাগ্য

অর্থসংস্থানে দুশ্চিন্তা কাটল

অর্থসংস্থানে দুশ্চিন্তা কাটল

রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে স্বস্তি

রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে স্বস্তি

রেমিট্যান্সে রেকর্ড, নেপথ্যে কী

রেমিট্যান্সে রেকর্ড, নেপথ্যে কী

‘নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য ৯০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন’

‘নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য ৯০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন’

 আসন্ন বাজেটকে গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ দেখছে পলিসি এক্সচেঞ্জ

আসন্ন বাজেটকে গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ দেখছে পলিসি এক্সচেঞ্জ

সংশ্লিষ্ট

আসন্ন বাজেটকে গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ দেখছে পলিসি এক্সচেঞ্জ

আসন্ন বাজেটকে গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ দেখছে পলিসি এক্সচেঞ্জ

রাজস্ব অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের কলমবিরতি

রাজস্ব অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের কলমবিরতি

পরিবেশবান্ধব কারখানায় শীর্ষে বাংলাদেশ

পরিবেশবান্ধব কারখানায় শীর্ষে বাংলাদেশ

বাজারই নির্ধারণ করবে ডলারের মূল্য

বাজারই নির্ধারণ করবে ডলারের মূল্য