তাকী মোহাম্মদ জোবায়ের
প্রকাশ : ৩০ জুন ২০২৫ ১২:০২ এএম
আন্দোলন প্রত্যাহার, স্বাভাবিক হলো রাজস্ব কার্যক্রম
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) চলমান আন্দোলন ও সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে অবশেষে সৃষ্ট অচলাবস্থার অবসান হয়েছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকের পর আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছে আন্দোলনকারীরা। এর পরেই চট্টগাম বন্দরের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত কয়েকদিনে রাজস্ব খাতে যে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, তা পূর্বে বাংলাদেশে কখনো দেখা যায়নি। আন্দোলনকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টতা ও সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীদের ইন্ধনের অভিযোগে উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে সরকার এনবিআরকে ‘অত্যাবশ্যকীয় সেবা’ ঘোষণা করে হার্ডলাইনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মক্ষেত্রে না গেলে কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণের ঘোষণা দেয় সরকার। এমনকি আন্দোলন বন্ধ না করলে আলোচনায় বসতেও অস্বীকৃতি জানায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। পাশাপাশি আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের নেতাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরপরও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল ছিল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এই অচলাবস্থার ফলে দীর্ঘায়িত হওয়া শাটডাউন কর্মসূচিতে চট্টগ্রামসহ সকল সমুদ্র, নৌ, স্থল ও বিমান বন্দরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। সৃষ্টি হয় বিশাল জট। এতে অর্থনীতির মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়।
এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক অনির্ধারিত সভা শেষে অর্থ উপদেষ্টা জানান, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় পাঁচ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এর আগে নিকট অতীতে ২০০৪ সালে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এমন আন্দোলন তৈরি হয়েছিল আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকে। তখন নন-পারফর্মার বা নিষ্ক্রিয় কর্মীদের অবসরে পাঠানোর একটি বিধান অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করেছিলেন তৎকালীন গভর্নর ড. ফখরুদ্দীন আহমদ। এর প্রেক্ষিতে অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃত্বে আন্দোলনে নেমেছিলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আন্দোলন দমাতে তখন দুটি সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বসহ ১০ জনকে চাকরিচ্যুত করেছিলেন ফখরুদ্দীন আহমদ। আন্দোলনকারীদের চাকরিচ্যুত করার পাশাপাশি শ্রমিক ইউনিয়ন বা সিবিএর কার্যক্রমও বন্ধ করে দিয়েছিলেন তিনি। এরপরও ওই বিধান সংযুক্ত করতে পারেননি তিনি। পিছু হটতে হয়েছিল ফখরুদ্দীনকে, যিনি পরবর্তীতে সেনাসমর্থিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হয়েছিলেন।
আন্দোলন দমনে হার্ডলাইনে সরকার : জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সব শ্রেণির চাকরিকে অত্যাবশ্যক সেবা ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্র্বর্তী সরকার। একই সঙ্গে সংস্থাটির আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্থলে ফেরার আহ্বান জানিয়ে সরকার বলেছে, কাজে যোগ না দিলে দেশের জনগণ ও অর্থনীতির সুরক্ষায় সরকার কঠোর হবে। গতকাল রোববার সরকার এক বিবৃতিতে এমনটা জানিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, অতি জরুরি আমদানি-রপ্তানি ও বৈদেশিক বাণিজ্যের কার্যক্রম চলমান রাখার জাতীয় স্বার্থে সরকার এনবিআরের আওতাধীন সব কাস্টম হাউস, আইসিডি, বন্ড কমিশনারেট এবং শুল্ক স্টেশনগুলোর সব শ্রেণির চাকরিকে অত্যাবশ্যক সেবা ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকার আশা প্রকাশ করে বলেছে, অনতিবিলম্বে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মস্থলে ফিরে যাবেন এবং আইনবিরোধী ও জাতীয় স্বার্থবিধ্বংসী কর্মকাণ্ড থেকে সরে আসবেন। অন্যথায় দেশের জনগণ ও অর্থনীতির সুরক্ষায় সরকার কঠোর হতে বাধ্য হবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বাজেট ব্যবস্থাপনায় উন্নয়নমুখী কার্যক্রম পরিচালনার সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা হলো দুর্বল রাজস্ব সংগ্রহ ব্যবস্থা। রাষ্ট্রের প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের রাজস্ব সংগ্রহ অনেক কম। এর মূল কারণ হচ্ছে, রাজস্ব আহরণ ব্যবস্থাপনার নানা দুর্বলতা, অনিয়ম ও দুর্নীতি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্র্বর্তী সরকার সব অংশীজনের পরামর্শ অনুযায়ী এনবিআর পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু সরকার গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে, রাজস্ব সংস্কারের কাজকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী নজিরবিহীনভাবে ২ মাস ধরে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রপ্তানি এবং রাজস্ব আদায় কার্যক্রম অন্যায় ও অনৈতিকভাবে ব্যাহত করে আন্দোলনের নামে চরম দুর্ভোগ তৈরি করেছে, যা সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সংস্কারের বিরোধিতা ছাড়াও অর্থবছরের শেষ ২ মাসে আন্দোলনকারীরা রাজস্ব আদায় কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত করেছেন। এই তথাকথিত আন্দোলন পরিকল্পিত ও দুরভিসন্ধিমূলক, যা জাতীয় স্বার্থ এবং নাগরিক অধিকারের চরম পরিপন্থী। সরকারের পক্ষ থেকে রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি বিবেচনায় নেওয়ার সুস্পষ্ট ঘোষণা দেওয়া হয় এবং আলোচনায় আসার আহ্বান জানালেও তারা তা অগ্রাহ্য করেন। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার গ্রহণযোগ্য সমাধান না করে তারা আন্দোলনের নামে অনমনীয় অবস্থান নিয়ে ক্রমাগত দেশের অর্থনীতির ক্ষতি করে চলেছেন।
এনবিআর সংস্কারে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন : জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় পাঁচ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের একথা বলেন। তবে কমিটিতে কারা আছেন এবং কমিটির কার্য পরিধি কী হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত জানাননি অর্থ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, এনবিআর কীভাবে সংস্কার করা যায় সে বিষয়ে কমিটি আলাপ-আলোচনা করবে। তারা সবার কথা শুনবে। ৫ সদস্যের কমিটিতে কারা কারা আছেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, কমিটিতে কারা আছেন তাদের নাম আমি এখন বলবো না। এনবিআরর ৬ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক, যারা আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ওটা আমার কনসার্ন ডিপার্টমেন্ট না। রোববার পৌনে ছয়টার দিকে সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন অর্থ উপদেষ্টা। সন্ধ্যা ৭টার দিকে বৈঠক শেষ হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশের (আইসিসিবি) সভাপতি মাহবুবুর রহমান, আইসিসিবির সহ-সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এলএফএমইএবি) সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান, বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী, মেট্রো পলিটন চেম্বারের (এমসিসিআই) সভাপতি কামরান টি রহমান, এমসিসিআইর সহ-সভাপতি ও ট্রান্সকম গ্রুপের সিইও সিমিন রহমান, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতির তাসকিন আহমেদ প্রমুখ। বৈঠকে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানও উপস্থিত ছিলেন।
সভাপতিসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু দুদকের : এদিকে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রাজস্ব বোর্ডের ৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। যাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে তাদের বেশিরভাগই এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সদস্য। যাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে তারা হলেনÑ এনবিআরের সদস্য (আয়কর নীতি) এ কে এম বদিউল আলম, অতিরিক্ত কর কমিশনার ও এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি মির্জা আশিক রানা, যুগ্ম কর কমিশনার ও এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ মোরশেদ উদ্দীন খান, যুগ্ম কর কমিশনার ও এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সহ-সভাপতি মোনালিসা শাহরীন সুস্মিতা, অতিরিক্ত কমিশনার ও এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি হাছান তারেক রিকাবদার ও অতিরিক্ত কমিশনার ও সংস্কার ঐক্য পরিষদের সদস্য সাধন কুমার কুণ্ডু। গতকাল রোববার দুপুরে এই বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে দুদক।
দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কতিপয় অসাধু সদস্য ও কর্মকর্তারা কর ও শুল্ক আদায়ের ক্ষেত্রে মোটা অংকের ঘুসের বিনিময়ে করদাতাদের কর ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছেন এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তারা নিজেরা লাভবান হওয়ার জন্য নির্ধারিত পরিমাণ কর আদায় না করে তাদের করের পরিমাণ কমিয়ে দিতেন মর্মে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। রাজস্ব বোর্ডের সংস্কারে চলমান আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া কর্মকর্তাদের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধানের সিদ্ধান্তটি সরকারের চাপ কি না এমন প্রশ্নে দুদক মহাপরিচালক বলেন, শুধু তাদের নয় এনবিআরের আরও অনেক কর্মকর্তার বিষয়ে দুদক অনুসন্ধান করছে। চলমান অনুসন্ধানে অংশ হিসেবে দুদক এটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে সরকারের কোনো চাপ নেই।
অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে ঐক্য পরিষদের বৈঠক বাতিল : গতকাল বিকেল ৪টায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে আন্দোলনরত এনবিআর কর্মকর্তাদের বৈঠক নির্ধারিত থাকলেও সেটি অনুষ্ঠিত হয়নি। অর্থ উপদেষ্টা বৈঠকটি বাতিল করেছেন। গতকাল এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের যুগ্ম মহাসচিব শফিউল বাসার বাদল বলেছেন, আমাদের অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বসার কথা ছিল। এজন্য আমরা মার্চ টু এনবিআর কর্মসূচি স্থগিত করি। আমাদের একটা প্রতিনিধি দল বৈঠকে অংশ নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অর্থ উপদেষ্টা বলেছেন, কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি স্থগিত না করলে তিনি আলোচনায় বসবেন না। আমরাও কর্মসূচি স্থগিত করে আলোচনায় বসব না। তিনি বলেন, আবার ষড়যন্ত্রের মধ্যে পড়তে চাই না। কর্মসূচি চলমান অবস্থায় আমাদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।
শুল্কায়ন বন্ধ, বন্দরে বাড়ছে জট : এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচিতে চট্টগ্রাম কাস্টমসসহ দেশের সকল কাস্টমসে বন্ধ রয়েছে শুল্কায়ন। একই সঙ্গে বন্দরে আমদানিপণ্য খালাস বন্ধ থাকায় কনটেইনারের জটলা তৈরি হচ্ছে। গত দুইদিনে চট্টগ্রাম বন্দর ইয়ার্ডে দুই হাজার কনটেইনার বেড়েছে। এদিকে জাহাজে পণ্য ওঠানো-নামানো কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকলেও চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য সরবরাহসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে চলছে স্থবিরতা। কাস্টমের কর্মীরা আন্দোলনে থাকায় পণ্যের শুল্কায়ন, বিল অব এন্ট্রি দাখিলসহ অন্যান্য কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে করে আমদানি কার্যক্রম স্থবির হওয়ার পাশাপাশি রপ্তানি পণ্যের জাহাজিকরণেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। বন্দরের গেট ও স্ক্যানিং বিভাগে কাস্টম কার্যক্রম বন্ধ থাকায় গতকাল সকাল থেকেই ডিপোগুলো থেকে রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার বন্দরে পাঠানো যায়নি। ফলে সময়মতো জাহাজে পণ্য তুলে দিতে না পারায় হুমকির মুখে পড়েছে রপ্তানি। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, কাস্টমসের কর্মসূচি অব্যাহত থাকলে নতুন করে বন্দরের বার্থে জাহাজ ভেড়ানোর সুযোগ থাকবে না। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক গণমাধ্যমকে বলেছেন, বন্দর কাস্টমসের পণ্যের কাস্টডিয়ান। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ যদি শুল্কায়ন না করে তাহলে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমের স্থবিরতা কাটবে না। কাস্টমসের যাচাই কাজ বন্ধ থাকায় শনিবার থেকে রপ্তানিপণ্যবাহী কনটেইনার বন্দরের ভেতর ঢুকতে পারেনি।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কার্যক্রমকে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা ও রাজস্ব নীতি নামে দুটি স্বতন্ত্র বিভাগে পৃথকীকরণ অধ্যাদেশ জারির পর থেকেই গত দেড় মাস ধরে আন্দোলন করছেন সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এর মধ্যে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে ২৭ জুনের মধ্যে সংস্থাটির চেয়ারম্যানকে অপসারণের আলটিমেটাম দেওয়া হয়। তাদের এ দাবি না মানায় পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ২৮ জুন থেকে কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরে শুরু হয় ‘লাগাতার কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি। এর ফলে সারাদেশের কাস্টম হাউস ও শুল্ক স্টেশনগুলোয় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। তারই অংশ হিসেবে বন্ধ রয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমসের কার্যক্রম। এতে স্থবির হয়ে পড়ে ব্যবসা-বাণিজ্য। হুমকির মুখে পড়েছে তৈরি পোশাকসহ রপ্তানিমুখী শিল্পেও।
বর্তমান সংকট প্রসঙ্গে অর্থনীতি বিশ্লেষক মো. মাজেদুল হক ভোরের আকাশ’কে বলেন, এনবিআর সংকট কেবল কর্মকর্তাদের দাবি-আদায়ের লড়াই নয়; এটি রূপ নিয়েছে সরকার, সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এবং আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে টানাপোড়েনের এক জটিল সমীকরণে। সরকারের অত্যাবশ্যকীয় সেবা ঘোষণা ও কঠোর হুঁশিয়ারি অর্থনীতিকে রক্ষার জরুরি পদক্ষেপ হলেও, এই সংঘাতের স্থায়ী সমাধান শুধুমাত্র সবার অংশগ্রহণে সংস্কারের মাধ্যমেই সম্ভব।
ভোরের আকাশ//হ.র