পাথরঘাটা (বরগুনা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৯:১৬ পিএম
ছবি: ভোরের আকাশ
বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কাকচিড়া ইউনিয়নের বাইনচটকি এলাকায় বিষখালী নদীর তীর কেটে মাটি তুলে নিচ্ছে স্থানীয় কয়েকটি ইটভাটা। ভেকু মেশিন দিয়ে নদীঘেঁষা বাঁধের খুব কাছে থেকে এই মাটি উত্তোলনের ফলে ভাঙন ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ধসে পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে স্থানীয়দের মধ্যে।
জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির তথ্য বলছে, বরগুনায় প্রায় ৬৮টি ইটভাটা রয়েছে, যার এক-তৃতীয়াংশ অনুমোদনহীন। অধিকাংশ ভাটা নদীতীরবর্তী এলাকায় হওয়ায় মালিকরা চর থেকে মাটি কেটে ব্যবহার করছেন। এর মধ্যে কাকচিড়া ও বাইনচটকি এলাকার আরএসবি ও আল মামুন এন্টারপ্রাইজের চারটি ভাটায় গত এক মাস ধরে ভেকু দিয়ে মাটি কাটার অভিযোগ উঠেছে। এমনকি একটি ভিডিও ইতিমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আরএসবি ইটভাটার একটি বার্জ বেড়িবাঁধ থেকে মাত্র তিনশ ফুট দূরে নদীর পাড় কেটে মাটি তুলছে। সাংবাদিকরা উপস্থিত হলে মাটি কাটা বন্ধ করা হয়। তবে স্থানীয়দের উসকে দেওয়ার অভিযোগে গণমাধ্যমকর্মীদেরও হয়রানি করা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, মাটি কেটে বড় গর্ত ফেলে নদীর তীর অস্থিতিশীল করে ফেলা হচ্ছে। এতে কেবল পরিবেশ নয়, মানুষের জীবন-জীবিকাও হুমকির মুখে পড়েছে। কবরস্থানের ওপর ইটের স্তুপ ফেলার অভিযোগও উঠেছে কিসলু মিয়ার বিরুদ্ধে। সরেজমিনে গিয়ে অন্তত ১৫–২০টি কবরের ওপর মাটি ও ইটের স্তুপ থাকার সত্যতা মেলে।
কাকচিড়ার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘নদীর পাড় থেকে মাটি কেটে নেওয়ায় ভাঙন হলে আমরা গরিব মানুষ ঘরবাড়ি হারাব।’ অপর আরেক বাসিন্দা সুজন হাওলাদার জানান, ‘আমাদের এলাকা ভাঙনকবলিত। বেড়িবাঁধ ভেঙে গেলে লোকালয় রক্ষা করা যাবে না।’
তবে ইটভাটা মালিকদের দাবি, তারা রেকর্ডীয় জমি থেকেই মাটি নিচ্ছেন। মেসার্স আল মামুন এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার লিটন বলেন, ‘আমরা ক্রয়কৃত জমি থেকে মাটি নিচ্ছি। সরকারের জমি নয়।’ আরএসবি ইটভাটার মালিক ও জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক কিসলুও একই দাবি করেন।
কিন্তু পরিবেশকর্মীরা ভিন্ন কথা বলছেন। পরিবেশকর্মী আরিফুর রহমান জানান, ‘নদীতীর কেটে মাটি নেওয়ায় নদীর গতিপথ পরিবর্তন হচ্ছে, ভাঙন বাড়ছে। এতে পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য ও মৎস্যসম্পদ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
প্রশাসনের নীরবতা নিয়েও স্থানীয়দের ক্ষোভ রয়েছে। তাদের অভিযোগ, প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় অবৈধ ইটভাটা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা দ্রুত ভাটা উচ্ছেদ ও নদী দখলমুক্ত করার দাবি জানান।
বরগুনা নদী বন্দরের সহকারী পরিচালক নির্মল কুমার রায় বলেন, ‘নদীর তীর কেটে মাটি নেওয়া হলে নদীর প্রবাহ ব্যাহত হবে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।’
পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিজানুর রহমান জানান, ‘অভিযান চলছে। কেউ নদীর চর থেকে মাটি কাটায় জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ভোরের আকাশ/জাআ