পাথরঘাটা (বরগুনা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৭ জুন ২০২৫ ০৫:৪৩ পিএম
ছবি-ভোরের আকাশ
বরগুনার পাথরঘাটা পৌরসভায় প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৫ টনের বেশি বর্জ্য উৎপন্ন হলেও এখনও পর্যন্ত নির্ধারিত কোনো ডাম্পিং স্টেশন কিংবা বর্জ্য পরিশোধনাগার গড়ে ওঠেনি। ফলে শহরের ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে সরাসরি বিষখালী নদীর তীরে। এতে নদীর পানি মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে এবং পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। মশার উপদ্রব, দুর্গন্ধ এবং পানিবাহিত রোগ বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয়দের জীবনযাত্রা চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছে।
পাথরঘাটা পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯০ সালে, দ্বিতীয় শ্রেণির পৌরসভা হিসেবে উন্নীত হয় ২০১২ সালে। প্রায় ৩০ হাজার মানুষের বসবাস এই পৌর এলাকায়। কিন্তু গত তিন যুগেও পৌর কর্তৃপক্ষ একটি আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে পারেনি। ফলে শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করে ট্রাকে করে এনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেরিবাঁধ সংলগ্ন নদীর তীরে ফেলা হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, খোলা পরিবেশে স্তূপ করে রাখা বর্জ্যে কাক, কুকুর, মুরগি ঘুরে বেড়াচ্ছে। দুর্গন্ধে পার্শ্ববর্তী এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। নদীর স্রোতে ভেসে যাওয়া এসব ময়লা বিস্তৃত এলাকায় দূষণ ছড়াচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বিষখালী নদী এখন অঘোষিত ভাগারে পরিণত হয়েছে। পানি ব্যবহার করেও রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে।
বেরিবাঁধ লাগোয়া এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রহমান বলেন, আগে সন্ধ্যাবেলা নদীপাড়ে বসে থাকতাম, এখন দুর্গন্ধে দাঁড়ানো যায় না। টিউবওয়েলের পানিতেও দুর্গন্ধ পাচ্ছি। পরিবারে সবাই রোগে ভুগছে।
নিলুফা বেগম বলেন, আগে এখানে মানুষ ঘুরতে আসতো, এখন কেউ আসেই না। শিশুরাও অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
সমাজ উন্নয়নকর্মী মির্জা শহিদুল ইসলাম খালেদ বলেন, পৌরসভার বয়স ৩৬ বছর হলেও আজও একটি বর্জ্য পরিশোধনাগার নির্মাণ করা হয়নি। বিকেলে শহরের মানুষ একটু স্বস্তির জায়গা খুঁজে নদীপাড়ে আসে, এখন সে জায়গাটাও দখল করেছে পৌরসভার ময়লা। অথচ পৌরসভার উন্নয়নের নামে শত কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে বারবার।
পরিবেশবিদদের মতে, বিষখালী নদী একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকূলীয় জলাধার। এখানে বর্জ্য ফেলা হলে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হয়, জলজ প্রাণীর প্রজনন ও অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ে এবং নদীর আশপাশে বসবাসকারী মানুষের জীবনঝুঁকি বাড়ে।
পাথরঘাটা পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য নির্ধারিত একটি জমি অধিগ্রহণের কাজ চলমান আছে। ডাম্পিং স্টেশন নির্মিত না হওয়া পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে সরকারি একটি জায়গায় বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। তবে পরিবেশের যাতে ক্ষতি না হয়, সেজন্য বর্জ্য ফেলার পর তা মাটি দিয়ে ঢেকে রাখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এদিকে স্থানীয় বাসিন্দা ও সচেতন নাগরিকদের প্রশ্ন, দীর্ঘকাল ধরে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হলেও কেন এখনো একটি আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা গেল না? বিষখালী নদী একসময় ছিল মানুষের জন্য প্রশান্তির আশ্রয়, আজ তা পরিণত হয়েছে এক দুঃসহ বাস্তবতায়।
ভোরের আকাশ/এসএইচ