গাইবান্ধা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৪ অক্টোবর ২০২৫ ১০:০০ এএম
ছবি: ভোরের আকাশ
গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলায় মাত্র এক হাজার টাকার জন্য হতদরিদ্র এক বৃদ্ধের ঘরের ছাউনি খুলে নিয়ে গেছে স্থানীয় এক যুবক। এ ঘটনায় পরিবারটি চরম দুর্দশায় মানবেতর জীবনযাপন করছে।
ঘটনায় লিখিত অভিযোগ করেও প্রতিকার মেলেনি। বিচারের আশায় পুলিশ ও জনপ্রতিনিধির দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন ভুক্তভোগী বৃদ্ধ মতিয়ার রহমান (৬৪)।
শুক্রবার (৩ অক্টোবর) রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করে ধাপেরহাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের (ইনচার্জ) স্বপন কুমার সরকার।
এর আগে ঘটনাটি ঘটেছে গত রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) উপজেলার ইদিলপুর ইউনিয়নের রূপনাথপুর গ্রামে।
ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসী জানায়, মতিয়ার রহমানের নাতি কয়েক মাস আগে প্রতিবেশী সাজু মিয়ার ছেলে সুরুজ মিয়ার কাছ থেকে মোবাইল মেরামতের জন্য এক হাজার টাকা ধার নেয়। নির্ধারিত সময়ে টাকা ফেরত দিতে না পারায় গত ২৮ সেপ্টেম্বর সুরুজ দলবল নিয়ে এসে মতিয়ারের বসতঘরের ১০–১২টি টিন খুলে নিয়ে যায়। এতে বর্ষার দিনে চরম বিপাকে পড়েছেন মতিয়ার ও তার স্ত্রী জমিলা বেগম।
মতিয়ারের স্ত্রী জমিলা বেগম অভিযোগ করে বলেন, 'আমাদের একমাত্র মাথাগোঁজার ঠাঁই এই ঘরের টিন খুলে নিয়েছে। অনেক অনুরোধ করলেও কোনো কথা শোনেনি। এখন বৃষ্টির দিনে আমরা অসহায় অবস্থায় আছি।'
তিনি আরও জানান, 'এ ঘটনায় দুই দিন আগে ধাপেরহাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। পরে এ এসআই ইয়াকুব ঘটনাস্থলে গিয়ে টিন খুলে নেওয়ার সত্যতা পান। কিন্তু এখনো টিন ফেরত মেলেনি।'
এ বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-সহকারী পুলিশ পরিদর্শক (এএসআই) ইয়াকুব বলেন, 'অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনাস্থলে তদন্ত করেছি। অভিযুক্ত সুরুজকে টিন ফেরতের জন্য বলা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
গ্রামের বাসিন্দা ও ইউপি সদস্য রুহুল আমিন বলেন, 'ঘটনাটি আমার বাড়ির পাশের। জানার পর আমি নিজেও মীমাংসার চেষ্টা করেছি, কিন্তু সুরুজ কোনো কথা শোনেনি। ভুক্তভোগী বৃদ্ধ পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।'
ধাপেরহাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের (ইনচার্জ) স্বপন কুমার সরকার বলেন, 'অভিযোগ পাওয়ার পর এএসআই ইয়াকুব ঘটনাস্থলে গিয়ে সত্যতা পান এবং অভিযুক্তকে টিন ফেরত দিতে বলেন। সুরুজ যদি ফেরত না দেয় তবে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। ইউপি সদস্য আমিনুর রশিদ মন্ডলের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা চলছে। সমাধান না হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
তবে স্থানীয় ইউপি সদস্য আমিনুর রশিদ মন্ডল দাবি করেন, তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না। এছাড়া বক্তব্য জানতে চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি অভিযুক্ত সুরুজকে। বাড়িতে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
এদিকে, মাত্র এক হাজার টাকার জন্য এমন অমানবিক ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও সমালোচনা দেখা দিয়েছে। তারা জানান, আগে থেকেই সুরুজ বখাটে হিসেবে পরিচিত। মাদক সেবনসহ নানা অপকর্মে জড়িত সে। ভয়ে তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে পারে না। তবে হতদরিদ্র পরিবারের ঘরের টিন খুলে নেওয়া অগ্রহণযোগ্য ও নৃশংস। অভিযুক্ত সুরুজের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনিব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
ভোরের আকাশ/তা.কা