কৃপা বিশ্বাস, নড়াইল প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০২৫ ০৬:৩৫ পিএম
ছবি: ভোরের আকাশ
হাড়িডাঙ্গা বিলে ঢুকতেই চোখে পড়ে বড় বড় মাছের ঘের। ঘেরগুলোতে বাঁশ ও সুদা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে মাচা। আর তাতেই ঝুলছেই সারি সারি শসা। ছোট বড় হাজারো ঘেরে এভাবেই শশার আবাদ করা হচ্ছে। স্বল্প ব্যয়ে অধিক লাভের আশায় শসা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে জেলার হাজারো কৃষি পরিবার। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং সময় মত বীজ ও সার প্রয়োগে উৎপাদন আশানুরূপ হয়েছে। আর উৎপাদিত শশার মান ভাল হাওয়ায় বাজারে চাহিদা ও আছে ভাল। তবে অভিযোগ আছে সিন্ডিকেট কারণে ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কৃষক।
শসা চাষি দিপংকর বিশ্বাস বলেন, আমি দুই বিঘা জমিতে ঘের খনন করে মাছ চাষ করেছি। আর ঘেরের পাড়ের দুই পাশে শসার আবাদ করেছি। ৭০ হাজার টাকার শসা বিক্রি করা হয়ে গেছে। আশা করছি, ২ লাখ টাকার শসা এ মৌসুমে বিক্রি করতে পারব। শসার পাইকারি দাম যদি কেজিতে ৪০ থেকে ৫০ টাকা হয় তাহলে আমরা লাভবান বেশি হতাম। তবে আমাদের উৎপাদিত শসা ব্যাপারীরা জেলার বাইরে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে।
হাড়িভাঙ্গা বিলের ঘেরের পাড়ে অন্তত হাজারো পরিবার শসা চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছে।আগদিয়ারচর, বিছালী খলশেখালী, মির্জাপুর, নলদিরচর সহ পাশপাশের গ্রামের দুই হাজারের ও বেশি পরিবার ঘেরের পাড়ে শশার আবাদ করেছেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য উৎপল বিশ্বাস বলেন, নড়াইলের হাড়িডাঙ্গা বিলের কয়েক হাজার পরিবার ঘেরের পাড়ে শসা চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছে। অনেকে বাড়ি, গাড়ি, জমি কিনেছেন। শুধু আগদিয়া গ্রাম না নলদিরচর, বিছালী, মির্জাপুর, আড়পাড়া গ্রামের দুই হাজারের ও বেশি পরিবার ঘেরের পাড়ে শসা চাষ করছেন।
আরেক শসা চাষি মনোজ বিশ্বাস বলেন, আমরা শসাগুলো পাইকারি বিক্রি করতেছি ৩০ থেকে ৪০ টাকা দরে। প্রতিদিন সকালে শসা তুলে এনে ভ্যানে বর্নি বাজারে বিক্রি করি। বাজারে ৬০থেকে ৭০ টাকা শসার দাম। আমরা ৫০ টাকা কেজি দাম পেলে ও এই এলাকায় শসার আবাদ আরো বৃদ্ধি পেত।
বিছালী ইউনিয়নের বর্নি বাজারে সকাল থেকে শুরু হয় শশার পাইকারি বাজার। কেউ ভ্যানে, কেউ নসিমন আবার কেউ অটোরিকশা করে শসা নিয়ে চাষিরা আসেন এ হাটে। জেলা শহরের চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, ফরিদপুর, মাগুরা সহ বিভিন্ন জেলায় চলে যায় এ অঞ্চলের শসা।
নড়াইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এ মৌসুমে ২০২ হেক্টর জমিতে শশার আবাদ। তার ভিতর সদরে ১০৫ কালিয়া ৭৫ লোহাগড়া ২০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। যার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৬৩৫ মে.টন।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান বলেন, শসার চাষ দিন দিন বেড়ে চলেছে। নড়াইল সদর উপজেলার সিঙ্গাশোলপুর, বিছালী, কলোড়া ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ যে মাঠ রয়েছে এই মাঠের ঘেরে শসার আবাদে কৃষকদের দৃষ্টি রয়েছে। বিশেষত প্রায় এক থেকে দেড় হাজার পরিবার মৌসুমে ঘেরের পাড়ে শসা চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। সেখান থেকে যে শসা উৎপাদন হয় তা জেলার চাহিদা মিটিয়ে আশপাশের জেলাগুলোতে পরিবহণ হচ্ছে। শসা আবাদে কৃষি বিভাগ সহায়তা ও পরামর্শ প্রদান করছি। কৃষকেরা যদি তাদের শসার ন্যায্য মূল্য পায় তাহলে শসা আবাদ জেলায় আরো বেড়ে যাবে। কৃষকদের অভিযোগ রয়েছে সিন্ডিকেটের কারণে ন্যায্য মূল্য পেতে তাদের একটা বাধা। এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনের সাথে নিয়মিত কথা বলেছি। যেন কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য পায়।
ভোরের আকাশ/জাআ