এস,এম সিপার, নাজিরপুর (পিরোজপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০২৫ ০৯:৫৪ পিএম
ছবি: ভোরের আকাশ
দীর্ঘ প্রায় সাড়ে ১৩ বছর আগে (২০১২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা থেকে কুষ্টিয়া যাওয়ার পথে গুম হন পিরোজপুরের আল মুকাদ্দাস ও ঝালকাঠির অলিউল্লাহ নামে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই মেধাবী শিক্ষার্থী। এরপর এতগুলো বছর পার হলেও গুম করে তাদের কোথায় রাখা হলো কিনা, তারা বেঁচে আছে কি না আদৌ মারা গেছে সে খবর কেউ জানেন না। তাদের ফিরে পাওয়ার আশায় বৃদ্ধ বাবা ও মা আজও পথপানে চেয়ে আছেন।
পিরোজপুর সদর উপজেলার খানা খুনিয়ারি গ্রামের মাওলানা আ: হালিম ও আয়েশা সিদ্দিকার দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে আল মুকাদ্দাস ছিলেন বড় সন্তান। সে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আল ফিকহ (এলএলবি) বিভাগের অনার্স চতুর্থ বর্ষের ছাত্র।
শুক্রবার নিজ বাড়িতে মুকাদ্দাসের পিতা মাদ্রাসার অধ্যক্ষ (অব.) মাওলানা আব্দুল হালিম (৭২) জানান, দীর্ঘ প্রায় সাড়ে ১৩ বছর আগে ২০১২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি হানিফ পরিবহনের একটি বাসে আল মুকাদ্দাস ঢাকা থেকে কুষ্টিয়া যাচ্ছিলেন। কল্যানপুর থেকে রাত সাড়ে ১১ টায় বাসটি ছেড়ে রাত ১টায় সাভারের নবীনগর পৌছলে ৮/১০ জন কালো পোশাকধারী র্যাবের পরিচয়ে র্যাব-৪ এ কর্মরত আছেন বলে হানিফ পরিবহনের গাড়ি থেকে র্যাব ও ডিবি পরিচয়ে অলিউল্লাহ ও মুকাদ্দাসকে উঠিয়ে নিয়ে যায়, যার খোঁজ আজও কেউ পায়নি।
তিনি জানান, তার ছেলে আল মুকাদ্দাস কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিবিরের তৎকালীন সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও অলিউল্লাহ অর্থ সম্পাদক ছিলেন। তাদের অপহরণের দুদিন পর ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার দারুস সালাম থানায় একটি জিডি করেন যাহার নং ৩১৭। পুলিশ, র্যাব, ডিবি সহ প্রশাসনের নিকট বারবার ধরনা, হাইকোর্টে রিট, ক্যাম্পাসে ধর্মঘট, মানববন্ধন,মিছিল সহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেও কোন ফল পায়নি পরিবার। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন থেকে সরকারকে আহবান জানানো হলেও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গুমের খবর সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করে। উল্লেখ্য যে, জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের গুম বিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপ বিভিন্ন সময় ৭৬ জনের যে নাম প্রকাশ করেছেন তার মধ্যে মুকাদ্দেস ও অলিউল্লাহর নামও রয়েছে।
আওয়ামী সরকার পতনের পর গুম হওয়া অনেককেই উদ্ধার করা হয়েছে গোপন বন্দিশালা থেকে। এসব গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান ও তদন্তে ২৭ আগস্ট কমিশন গঠন করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এরপর নতুন করে আশার আলো দেখতে শুরু করেছিল সকলের পরিবার। পথ চেয়ে আছে তাদের পরিবার। তিনি বলেন মোসাদ্দেস কোথায় আছে, কেমন আছে সেটা অন্তত জানতে চাই।
তার মা আয়েশা সিদ্দিকা বলেন আজও ছেলে ফেরার অপেক্ষায় পথ পানে চেয়ে আছি। আমরা এখনো স্বপ্ন দেখি ছেলে বাড়ি ফিরেছে মা বলে ডাকছে। ছেলে যদি জীবিত থাকে তাহলে সামনে এনে আমাদের হাতে ফিরিয়ে দিন, আর যদি মেরে ফেলা হয় তাহলে অন্তত কবরটা দেখার সুযোগ করে দিন। মুকাদ্দাসের বাবা-মায়ের বিশ্বাস একদিন তার ছেলে ঠিকই ফিরে আসবে, বাবা-মায়ের শেষ ইচ্ছা পূরণ করবে। গুমের সাথে যারা জড়িত তাদেরকে কঠিন বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করেছেন মুকাদ্দেসের পরিবার।
ভোরের আকাশ/জাআ