নওগাঁ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৫ জুন ২০২৫ ০৩:৩১ পিএম
নওগাঁয় এবার বেড়েছে আম চাষ।
আমের ‘বাণিজ্যিক রাজধানী’ হিসেবে পরিচিত নওগাঁয় এবার বেড়েছে আম চাষ। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানির প্রস্তুতি নিয়েছেন জেলা কৃষি বিভাগ। জেলা প্রশাসনের নির্ধারিত সময় অনুযায়ী গত ২২ মে থেকে শুরু হয়েছে আমের বাজার। তবে নওগাঁয় সবচেয়ে বড় যে আম এর বাজার বসে তা মূলত আমরুপালি। যা আগামী ১৮ জুন থেকে বাজারে পাওয়া যাবে। জেলায় এবার প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার আম বাণিজ্য হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে নওগাঁয় এ বছর ৩০ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আম চাষ করা হয়েছে। এতে প্রায় ৩ লাখ ৮৬ হাজার টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য্য করেছে কৃষি বিভাগ।
নওগাঁ জেলায় এবার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৪৩৫ টন আম। হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৬৫ টন। প্রতি কেজি আমের গড় মূল্য ৫০ টাকা নির্ধারণ করে চলতি মৌসুমে ৩ হাজার ৮৪২ কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার আম বাণিজ্যের আশা করছে জেলার কৃষি বিভাগ। আম বাগানের গাছে গাছে ঝুলছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জাতের আম।
এ জেলায় এবার দেশি জাতের পাশাপাশি চাষ হয়েছে বিদেশি নয় জাতের আম। বিভিন্ন রংয়ের এসব আম নজর কাড়বে যে কারো। ফলনও হয়েছে খুব ভালো। বাহারী রঙের এমন আমের চাহিদা, এবং দামও অনেক। অন্যান্য আমের তুলনায় চাষ পদ্ধতি খুব একটা আলাদাও নয়।
দেশের মাটিতে বিদেশি জাতের আম চাষ করেছেন তরুণ কৃষক সোহেল রানা। তিনি জানান, দেশের মাটিতে বিদেশি জাতের আম চাষের আগ্রহ থেকে এমন বাগান করেছেন। তবে বাংলাদেশের মাটিতে এতো ভালো ফলন হবে, এটা তিনি কল্পনাও করেননি। এসব আমের চারা কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় বিভিন্ন দেশ থেকে তিনি সংগ্রহ করেছেন। আমগুলো রঙ এবং স্বাদ- সব দিক দিয়েই সেরা। তাই এ আমগুলো বাংলাদেশ থেকে বিদেশে রপ্তানির কথা ভাবছেন তিনি।
সোহেল রানার বাগানে চাষকৃত আমের মধ্য রয়েছে, আমেরিকান- অস্টিন, রেড পালমার, কেইট ও গেøইন, জাপানের- মিয়াজাকি, থাইল্যান্ডের- রেড এমপেরর, কিউজাই ও রেড আইভরি, ভারতের- কোহিতুর, পাকিস্থানের- আনোয়ার রাতাউলসহ দেশিও বিভিন্ন প্রজাতির আম রয়েছে তার বাগানে।
নওগাঁ কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছেন, চলতি বছর নওগাঁ থেকে ১ হাজার ৫০০ টন আম রপ্তানির লক্ষ্যে নিরাপদ প্রক্রিয়াজাতের মধ্য দিয়ে প্রস্তুত করা হয়েছে। যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা কৃষি বিভাগ। রপ্তানিকৃত আমের মধ্যে রয়েছে আমরুপালি, বারি ফোর, ব্যানানা ম্যাংগো, গৌড়মতিসহ বিভিন্ন জাতের আম। ইতি মধ্যে বিদেশে আম রপ্তানির জন্য কয়েকজন আম চাষিকে প্রশিক্ষণ ও নিরাপদ আম প্রস্তুতের পরামর্শ দিয়েছেন কৃষি বিভাগ। তাদের বাগান থেকেই আম চিন, ইংল্যান্ড, জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স, ডেনমার্ক, দুবাই, কাতার, সুইডেন ও ওমানে রপ্তানি করা হবে।
চাষিরা বলছেন, তাদের বাগানে উৎপাদিত আম শতভাগ নিরাপদ ও ক্ষতিকর রাসায়নিকমুক্ত। ২শ থেকে ৩শ গ্রাম ওজনের আকর্ষণীয় এসব আম বাছাই করে রপ্তানির প্রস্তুতি নিয়েছেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয় ও রাষ্ট্রীয় মান নিয়ন্ত্রক সংস্থার ছাড়পত্র নিয়েই চতুর্থ বারের মত দেশের সীমানা পাড়ি দিচ্ছে নওগাঁর আম।
সাপাহার বরেন্দ্র অ্যাগ্রো পার্কের উদ্যোক্তা ও আম চাষি সোহেল রানা এ বছর প্রায় ১০০ বিঘা জমিতে আমের চাষ করেছেন। আমরুপালি, বারি-৪, গৌড়মতি, ব্যানানা ম্যাংগো, কাটিমন, ল্যাংড়া, হিমসাগর, ফজলি, মিয়াজিকিসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জাতের আম আছে তার বাগানে। এ বছর আমরুপালি, বারি-৪, গৌড়মতি, ব্যানানা ম্যাংগো ও কাটিমন জাতের আম রপ্তানির জন্য বিশেস পদ্ধতিতে চাষ করেছেন।
সোহেল রানা বলেন, ‘গত বছর তার এই বাগান থেকে ১০ টন আম ইংল্যান্ড ও কাতারে রপ্তানি করেছি। লাভও ভালই পেয়েছি। এ বছর চিন, জার্মানি, ফিনল্যান্ড, দুবাই, ইংল্যান্ড, কাতার, সুইডেন ও ওমানে আম রপ্তানির পরিকল্পনা রয়েছে। ‘কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় আধুনিক ফরুট্স ব্যাগিং ও বিষমুক্ত নিরাপদ আম উৎপাদন করা হয়েছে। এ বছর প্রায় ৫০ টন আম রপ্তানি করতে পারবেন বলেও তিনি জানান।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, , ‘জেলায় এবার বৈরি আবহাওয়ার কারনণ আমের ঘনত্ব কম। ঘনত্ব কম হওয়ায় গতবারের চেয়ে আকারে বড় হয়েছে এবারের আম। ফলে যা লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা পূরুণ হবে। এবার এ জেলা থেকে ১৫শ টন আম রপ্তানির প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এ জন্য শুরু থেকেই আমরা কিছু বাগান নির্ধারণ করেছি। এসব বাগান থেকেই নিরাপদ আম রপ্তানি করা হবে।’ জেলায় এবার চলতি মৌসুমে ৩ হাজার ৮৪২ কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার আম বাণিজ্য হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ভোরের আকাশ/আজাসা