ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১১ জুন ২০২৫ ০৯:৩৪ পিএম
এনসিপি পরিচয়ে ছাত্রলীগ নেতাকে অপহরণ, ৫ লাখ টাকা আদায়
গাজীপুরের শ্রীপুরে এনসিপির পরিচয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাবেক সহ-সম্পাদক আল রিয়াদ আদনান অন্তরকে অপহরণ করে কতিপয় যুবক। তাকে রাত ভর নির্যাতন করে তারা। পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে দাবি করা হয় ত্রিশ লাখ টাকা। পরে পাঁচ লাখ পঁয়তাল্লিশ হাজার টাকা ও আইফোন সিক্সটিন প্রোমেক্স মোবাইল দিয়ে মেলে মুক্তি। ঘটনা ঘটে উপজেলার মাওনা চৌরাস্তার আ.মালেক মাস্টার কমপেক্সের সামনে। অপহৃত আল রিয়াদ আদনান অন্তর (৩০) টঙ্গী এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে। অন্তর শ্রীপুর পৌর সভার কড়ইতলা গ্রামের ফালানের বাড়িতে ভাড়া থেকে ব্যবসা করতেন। তিনি ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক।
এ ঘটনায় ভিকটিমের স্ত্রী বাদী হয়ে বুধবার দুপুরে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযুক্তরা হলো উপজেলার উপজেলার কড়ই তলা গ্রামের উজ্জল হোসাইন (২২), মুলাইদ গ্রামের আলিফ মোড়ল (২০), টেপির বাড়ি গ্রামের কাইফাত মোড়ল (২৪), অজ্ঞাত মারুফ খান (২২) ও মিঠুন (২০)সহ আরো ১৩ জন। ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ মে রাত ৯টার দিকে উপজেলার মাওনা চৌরাস্তার আ.মালেক মাস্টার কমপেক্সের সামনে থেকে অন্তরকে অভিযুক্তরা অপহরণ করে। তাকে নিয়ে নির্যাতন করে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার ভয় দেখানো হয়। তার পরিবারের নিকট ত্রিশ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা। তার পরিবারের নিকট থেকে আদায় করে ৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। অন্তরের নিকট থেকে নিয়ে যায় একটি আইফোন সিক্সটিন প্রোমেক্স মোবাইল ফোন। পর দিন ২৯ মে রাত দশটার দিকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় অন্তরকে মাওনা ইউনিয়নের এমসি বাজার মেম্বার বাড়ি সড়কের একটি নির্জন স্থানে ফেলে যায়। একটি মোবাইল ফোন ও ৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকায় মেলে অন্তরের মুক্তি। হুমকির মুখে ভাড়া বাসা ছেড়ে সপরিবারে পালিয়ে যান অন্তর।
নির্যাতিত ছাত্রলীগ নেতার স্ত্রী ইসরাত জাহান আঁখি বলেন, অভিযুক্তরা আমার স্বামীকে অপহরণের পর তার মোবাইল থেকে ফোন করে নিজেদেরকে এনসিপি’র নেতাকর্মী পরিচয় দিয়ে আমাদের বলে, ‘পুলিশের কাছে গেলে তোদের মেরে ঝুলিয়ে রাখবো। দেখস নাই কিভাবে পুলিশ-জনগণ মেরে ঝুলিয়ে রেখেছি। কেউ বিচার করতে আসবে না। তোদের পাশে কেউ থাকবে না।
তিনি আরো বলেন, অভিযুক্তরা আমাদের নিকট ত্রিশ লাখ টাকা দাবি করে। আমার স্বামীকে নির্যাতন করে তার চিৎকার শুনায়। তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। স্বামীর প্রাণ বাঁচাতে তাৎক্ষণিক দুই লাখ টাকা দেই। তাতে মুক্তি মেলেনি অন্তরের। নির্যতনের এক পর্যায়ে আরো তিন লাখ পঁয়তাল্লিশ হাজার টাকা দেই। আলিফ মোড়ল এসে দু’বার টাকা নিয়ে যায়। অভিযুক্তরা আমার স্বামীর আইফোন সিক্সটিন প্রোমেক্স মোবাইল বক্সসহ নিয়ে যায়। ৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকা নিয়ে ২৯ মে রাত দশটার দিকে অপহরণ কারীরা আমার স্বামীকে এমসি বাজার -মেম্বার বাড়ি সড়কের একটি নির্জণ স্থানে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ফেলে যায়।
অভিযুক্ত আলিফ মোড়ল তার ফেইসবুক পেস্টে ভুল শিকার করে লিখেন, ‘ছাত্র লীগের এই লোক হাসনাত আবদুল্লাহ ভাইয়ের হামলা কারী এজন্য এই ভাইকে আমরা এমসিবাজার/তেলিহাটিসহ বিভিন্ন স্থানে নিয়ে মারধর করি এবং সত্যি বলতে ২ ধাপে আমি নিজে বাইক দিয়ে গিয়ে ওনার বাবার থেকে ৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকা এবং আইফোন সিক্সটিন প্রোম্যাক্স এর বক্স নিয়ে যাই। পোস্টের এক পর্যায়ে তিনি লেখেন, ‘আমি ভুল বুঝতে পারছি আমাকে ক্ষমা করবেন আর জীবনে এমন করবো না।’
জাতীয় নাগরীক পার্টি (এনসিপি)’র উপজেলার আহ্বায়ক প্রার্থী আবু রায়হান মেজবাহ্ জানান, ‘না না এরা এনসিপির নেতাকর্মী না। পুলিশকে বলা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো। সাংবাদিকদের বলেছি আপনারা নিউজ করতে পারেন। কোনো তথ্য প্রয়োজন হলে আমরা দেবো। এনসিপি কোনো অন্যায় সমর্থন করে না।
শ্রীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ আব্দুল বারিক জানান, এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। ভিক্টিমের সাথে কথা বলে বিষয়টি জানতে হবে। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভোরের আকাশ/এসএইচ