দিনাজপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৮ আগস্ট ২০২৫ ০৩:২৭ পিএম
ছবি : ভোরের আকাশ
বর্ষা মৌসুমের মাঝামাঝি সময়েও পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় দিনাজপুর জেলার পাটচাষিরা পড়েছেন চরম দুশ্চিন্তায়। পানির অভাবে অনেক জায়গায় পাট জাগ দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এতে কৃষকের কষ্টার্জিত সোনালি আঁশ উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে জেলার ১৩টি উপজেলায় মোট ৪ হাজার ৩৭২ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৯ হাজার টন। এর মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ জমির পাট ইতোমধ্যেই কাটা হয়েছে। তবে অনেক চাষি এখনও জমিতে পাট কাটেননি। কেউ কেউ অপেক্ষা করছেন কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টির জন্য।
জেলার সদর উপজেলার উলিপুর, মহব্বতপুর, খাড়িপাড়া, ঘুঘুডাঙ্গা এবং পুনর্ভবা নদীতীরবর্তী অঞ্চলগুলোতে বেশি পরিমাণে পাট চাষ হয়ে থাকে। এসব এলাকায় অনেক কৃষক জানিয়েছেন, খাল-বিল বা নিচু জমিতে পানির ঘাটতির কারণে পাট জাগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। জমিতে দাঁড়িয়ে থাকা পাটগাছ বিবর্ণ হয়ে হলদে রং ধারণ করছে।
সদর উপজেলার মহব্বতপুর গ্রামের কৃষক শাহীন আলম জানান, বৃষ্টির অভাবে জমি শুকিয়ে গেছে। অনেক কৃষক আমন ধানের চারা রোপণেও সমস্যায় পড়েছেন। পাট কাটার পর জাগ দেওয়ার মতো পানির ব্যবস্থা না থাকায় তারা অপেক্ষা করছেন বৃষ্টির জন্য।
চিরিরবন্দর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অনেক কৃষক জমিতেই কাটা পাট রেখে দিয়েছেন বা না কেটে অপেক্ষা করছেন। কোথাও কোথাও নিচু জমিতে জমে থাকা অল্প পানিতে জাগ দেওয়ার চেষ্টা চলছে। তবে এতে আঁশ সঠিকভাবে ছাড়ানো ও পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে, ফলে বাজারে কাঙ্ক্ষিত মূল্য পাওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এদিকে অনেক কৃষক বিকল্প হিসেবে শ্যালো পাম্প ও মোটরের সাহায্যে পুকুর, ডোবা বা ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করে পাট জাগ দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এতে অতিরিক্ত খরচের সম্মুখীন হচ্ছেন তারা।
খানসামা উপজেলার কৃষক আজিম উদ্দিন বলেন, এবার পাটের ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারছি না। ফলে জমিতে স্তূপ করে রেখেছি। রোদে পাট শুকিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিও রয়েছে।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মো. আনিছুজ্জামান বলেন, আশা করা যাচ্ছে, শ্রাবণ মাসে বৃষ্টিপাত হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। অনেক কৃষক শ্যালো মেশিন দিয়ে পানির ব্যবস্থা করে পাট জাগ দিচ্ছেন। কৃষকরা বসে নেই, তারা নিজেদের উদ্যোগে সমস্যা মোকাবিলা করছেন।
দিনাজপুর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন জানান, চলতি বর্ষা মৌসুমে জুন মাসে জেলায় ৩৭৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বর্তমানে জেলার ওপর দিয়ে মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হচ্ছে, তাই আগামী দিনে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, জুলাই মাসেও জুনের মতো বৃষ্টি হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠবে। পানি সংকটে থাকা পাটচাষিরা এখন তাকিয়ে আছেন শ্রাবণের বৃষ্টির দিকে, যা তাদের ফসল রক্ষা করতে পারে।
ভোরের আকাশ/মো.আ.