× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

৬০০ টাকা ভাতায় ৩৫ বছর, মাতৃস্নেহে বধির ইনস্টিটিউটে রাবেয়া

দিনাজপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০২৫ ০৩:১৪ পিএম

ছবি : ভোরের আকাশ

ছবি : ভোরের আকাশ

সরকারি সুযোগ-সুবিধা আর মনোযোগের অভাবে একটি প্রতিষ্ঠান মুখ থুবড়ে পড়ার কথা, সেখানেই 'মায়া' আর ‘মাতৃস্নেহের’ বাঁধনে ৩৫ বছর ধরে আলো ছড়াচ্ছেন শিক্ষকরা। এ চিত্র দিনাজপুর শহরের গুঞ্জাবাড়ি এলাকায় অবস্থিত দিনাজপুর বধির ইনস্টিটিউটের।

উত্তরাঞ্চলের বাক্ ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নের বাতিঘর এই প্রতিষ্ঠানটি, কিন্তু বর্তমানে এটি চরম অবহেলা ও জরাজীর্ণতার শিকার।

প্রতিবেদনের সবচেয়ে মর্মস্পর্শী চরিত্র রাবেয়া খাতুন (৬৯)। দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে তিনি এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক কাম হোস্টেল সুপারের দায়িত্ব পালন করছেন। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত ২৪ জন আবাসিক শিক্ষার্থীর খাওয়া-দাওয়া, গোসল, পড়ালেখা, ঘুম সবকিছুর দেখভাল করেন তিনি। কিন্তু এই দীর্ঘ সেবার বিনিময়ে তিনি সরকারের কাছ থেকে কোনো বেতন পান না। স্থানীয় অনুদানের টাকা থেকে তাঁর মাসিক ভাতা মাত্র ৬০০ টাকা!

৬০০ টাকা ভাতায় ৩৫ বছর, মায়ার টানে বধিরদের পড়াচ্ছেন রাবেয়া

অথচ, রাবেয়া খাতুনের কোনো আক্ষেপ নেই। কারণ তাঁর এই সেবার মূলধন হলো মায়া। তিনি বলেন, ‘‘আবাসিকে ছেলে–মেয়েসহ ২৪ জন শিক্ষার্থী আছে। ওরা কথা বলতে পারে না, কানেও শোনে না। ওদের রেখে কই যাব? মায়ায় আটকে আছি ৩৫টা বছর। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ওদের পাশে থাকতে চাই।’’ ব্যক্তিগত জীবনে তাঁর দুই বাক্-প্রতিবন্ধী সন্তানের অবস্থা তাঁকে আরও বেশি মানবিক করে তুলেছে।

রাবেয়া খাতুন একা নন, প্রতিষ্ঠানটির সাতজন শিক্ষকের সবাই বছরের পর বছর ধরে বেতন ছাড়াই কেবল মায়ার টানে প্রতিষ্ঠানটি ধরে রেখেছেন। প্রধান শিক্ষক নাজনীন আক্তার ১৮ বছর ধরে চাকরি করছেন। তাঁর কথায় সেই আবেগই স্পষ্ট: ‘‘বেতন না পেলেও নিয়মিত সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত স্কুল চালাই। বাচ্চাগুলোকে ছেড়ে যেতে পারি না। এক দিন স্কুলে না এলে ভালো লাগে না।

১৯৮৯ সালে লালমনিরহাটের বাসিন্দা বদিউল আলম-এর ব্যক্তিগত উদ্যোগ এবং স্থানীয় মানুষের অনুদানে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম শুরু হয়। জুবিলি স্কুলের দেওয়া জমিতে ভবন নির্মাণ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মাতা তৈয়বা মজুমদার এর পৃষ্ঠপোষকতা এবং ২০০৫ সালে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে পাঁচতলা ভবন নির্মাণ দারুণ গতিতে শুরু হয়েছিল এই প্রতিষ্ঠানের পথচলা। সে সময় স্কুল ভ্যান সার্ভিস, কম্পিউটার ও সেলাই প্রশিক্ষণও চালু হয়েছিল।

কিন্তু বর্তমানে এই পাঁচতলা ভবনটির দশা দেখলে মন ভার হয়ে আসে। দীর্ঘ সময় শিক্ষকদের বেতন না পাওয়া, দক্ষ শিক্ষকের অভাব এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে। পাঁচতলা ভবনের প্রায় প্রতিটি কক্ষ জরাজীর্ণ। তৃতীয় থেকে পঞ্চম তলার অধিকাংশ কক্ষের দরজা ভাঙা।

দ্বিতীয় তলায় নষ্ট হয়ে পড়ে আছে ১০টি কম্পিউটার। সেলাই মেশিনসহ কারিগরি যন্ত্রপাতিও পরিত্যক্ত অবস্থায়। ডাইনিং রুমটি স্যাঁতসেঁতে ও অপরিচ্ছন্ন। আগে একজন চিকিৎসক নিয়মিত আসতেন, এখন শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হলে রাবেয়া খাতুন স্থানীয় পল্লিচিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান।

বর্তমানে ১২০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে এক-দ্বিতীয়াংশ শিশু বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। জেলা সমাজসেবা অফিস সূত্র অনুযায়ী, জেলায় বাক্ ও শ্রবণপ্রতিবন্ধীর সংখ্যা ৯ হাজার ৮২৬ জন। জুবিলি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক তপন কুমার বিশ্বাস বলেন, এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে শিক্ষার আলো দিতে হলে বধির ইনস্টিটিউট, ইশারা ভাষা শিক্ষার প্রতি সরকারের বিশেষ নজরদারি দরকার। দক্ষ শিক্ষক ও উপযুক্ত পরিবেশ পেলে কারিগরি শিক্ষায় তাদের দক্ষ করে তোলা সম্ভব।

যদিও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এস এম হাবিবুল হাসান জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শন করা হয়েছে এবং তাঁরা এটিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে কাজ করছেন। বিশেষ করে কারিগরি শিক্ষায় গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে এবং অনুদানের টাকা থেকে শিক্ষকদের সামান্য ভাতা দেওয়া হচ্ছে। সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য মাসিক দুই হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে।

কিন্তু এই সামান্য উদ্যোগের বিপরীতে ৩৫ বছরের আত্মত্যাগ এবং বেতনহীন শিক্ষকদের অবিচল মায়া প্রমাণ করে, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে মানবিক উদ্যোগে গড়া প্রতিষ্ঠান কীভাবে টিকে থাকার জন্য কেবল কিছু মানুষের ভালোবাসার ওপর নির্ভর করে আছে। এই শিক্ষকদের চোখের জল আর শিশুদের স্বপ্ন বাঁচাতে প্রতিষ্ঠানটির দিকে দ্রুত রাষ্ট্রীয় সাহায্যের হাত বাড়ানো জরুরি।

ভোরের আকাশ/মো.আ. 

  • শেয়ার করুন-
ফুলবাড়ীর সৌন্দর্য বর্ধনে পৌর প্রশাসকের শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ পরিদর্শন

ফুলবাড়ীর সৌন্দর্য বর্ধনে পৌর প্রশাসকের শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ পরিদর্শন

বীরগঞ্জে ২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী আদিবাসী মিলন মেলা

বীরগঞ্জে ২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী আদিবাসী মিলন মেলা

ছাত্রী নিয়ে উধাও শিক্ষক, বাবাকে নিয়ে ছেলের আবেগঘন পোস্ট ভাইরাল

ছাত্রী নিয়ে উধাও শিক্ষক, বাবাকে নিয়ে ছেলের আবেগঘন পোস্ট ভাইরাল

প্রধান শিক্ষকের ওপর হামলার প্রতিবাদে পিরোজপুরে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

প্রধান শিক্ষকের ওপর হামলার প্রতিবাদে পিরোজপুরে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

জয়পুরহাটে শিক্ষার্থীদের বেদম পেটালেন শিক্ষক

জয়পুরহাটে শিক্ষার্থীদের বেদম পেটালেন শিক্ষক

 মাদ্রাসার ছাত্রদের জন্য নতুন ক্রিকেট টুর্নামেন্টের পরিকল্পনা বিসিবির

মাদ্রাসার ছাত্রদের জন্য নতুন ক্রিকেট টুর্নামেন্টের পরিকল্পনা বিসিবির

 তুর্কি ড্রামা ‘কুরলুস উসমান’ দেখে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলেন স্কটল্যান্ডের নারী

তুর্কি ড্রামা ‘কুরলুস উসমান’ দেখে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলেন স্কটল্যান্ডের নারী

 মিয়ানমারে বৌদ্ধ উৎসবস্থলে সামরিক বোমা হামলা, নিহত অন্তত ৪০

মিয়ানমারে বৌদ্ধ উৎসবস্থলে সামরিক বোমা হামলা, নিহত অন্তত ৪০

 বদলি ও পদায়নে নতুন নীতিমালা কার্যকর করল শিক্ষা মন্ত্রণালয়

বদলি ও পদায়নে নতুন নীতিমালা কার্যকর করল শিক্ষা মন্ত্রণালয়

 যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের কাছে উন্নত এয়ার-টু-এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে

যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের কাছে উন্নত এয়ার-টু-এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে

 ট্রাম্পের জন্মদিনে হোয়াইট হাউসে ইউএফসি লড়াই: ইতিহাসের নতুন অধ্যায়

ট্রাম্পের জন্মদিনে হোয়াইট হাউসে ইউএফসি লড়াই: ইতিহাসের নতুন অধ্যায়

 বিয়ের সাজে কেয়া পায়েল: অভিনয় ও ব্যবসার দুই জগতেই নজর কাড়লেন তিনি

বিয়ের সাজে কেয়া পায়েল: অভিনয় ও ব্যবসার দুই জগতেই নজর কাড়লেন তিনি

 শাকিব খানের ‘সোলজার’-এর প্রথম লুক প্রকাশ

শাকিব খানের ‘সোলজার’-এর প্রথম লুক প্রকাশ

 বিসিবি নির্বাচনের পর কমিটিতে দায়িত্ব বণ্টন সম্পন্ন

বিসিবি নির্বাচনের পর কমিটিতে দায়িত্ব বণ্টন সম্পন্ন

 আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয়ে সিরিজ শুরুর লক্ষ্য বাংলাদেশের

আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয়ে সিরিজ শুরুর লক্ষ্য বাংলাদেশের

 বাংলাদেশ-সৌদি আরবের সম্পর্ক ‘দীর্ঘমেয়াদি বন্ধুত্বের প্রতীক’: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

বাংলাদেশ-সৌদি আরবের সম্পর্ক ‘দীর্ঘমেয়াদি বন্ধুত্বের প্রতীক’: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

 ২০০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে বিএনপি

২০০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে বিএনপি

 পে স্কেল নিয়ে এখনই সিদ্ধান্ত নয়: অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন

পে স্কেল নিয়ে এখনই সিদ্ধান্ত নয়: অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন

 দুই বছরে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ২৫০ ইমাম নিহত, ৮৩৫ মসজিদ ধ্বংস

দুই বছরে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ২৫০ ইমাম নিহত, ৮৩৫ মসজিদ ধ্বংস

 নোয়াখালীকে বিভাগ ঘোষণার দাবিতে মালদ্বীপে প্রবাসীদের স্মারকলিপি

নোয়াখালীকে বিভাগ ঘোষণার দাবিতে মালদ্বীপে প্রবাসীদের স্মারকলিপি

 কখন বুঝবেন আপনার শরীর ও মন বিশ্রাম চাইছে

কখন বুঝবেন আপনার শরীর ও মন বিশ্রাম চাইছে

 সকালে কমলার রস খাওয়া কি ক্ষতিকর? জানুন বিশেষজ্ঞদের মতামত

সকালে কমলার রস খাওয়া কি ক্ষতিকর? জানুন বিশেষজ্ঞদের মতামত

 যেসব স্বাস্থ্য সমস্যায় কখনোই এআইয়ের পরামর্শ নেওয়া উচিত নয়

যেসব স্বাস্থ্য সমস্যায় কখনোই এআইয়ের পরামর্শ নেওয়া উচিত নয়

 শেখ হাসিনা ও কামাল নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা

শেখ হাসিনা ও কামাল নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা

সংশ্লিষ্ট

পাংশায় ওয়ান শুটারগান সহ দেশীয় তৈরি অস্ত্র উদ্ধার

পাংশায় ওয়ান শুটারগান সহ দেশীয় তৈরি অস্ত্র উদ্ধার

খুলনায় যুবককে গুলি করে হত্যা

খুলনায় যুবককে গুলি করে হত্যা

অপূর্ব পাল কর্তৃক পবিত্র কুরআন অবমাননার প্রতিবাদ

অপূর্ব পাল কর্তৃক পবিত্র কুরআন অবমাননার প্রতিবাদ

দিন যত ঘনিয়ে আসছে নির্বাচনী উৎফুল্লতা ততটাই বাড়ছে

দিন যত ঘনিয়ে আসছে নির্বাচনী উৎফুল্লতা ততটাই বাড়ছে