দাগনভূঞা (ফেনী) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৪ আগস্ট ২০২৫ ১০:০২ এএম
ছবি : ভোরের আকাশ
ফেনী জেলায় সদ্য সমাপ্ত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভূমি রেজিস্ট্রি খাত থেকে প্রায় ২০৩ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে, যা বিগত বছরগুলোর তুলনায় উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি। জেলার সাতটি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের মাধ্যমে মোট ৩৪ হাজার ৩৪৩টি দলিল রেজিস্ট্রেশনের ফলে এই বিপুল পরিমাণ রাজস্ব সরকারি কোষাগারে জমা হয়। অনলাইন ব্যবস্থার কারণে স্বচ্ছতা বাড়ায় রাজস্ব আয় বাড়লেও সেবা নিতে গিয়ে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির অভিযোগও উঠেছে।
জেলা রেজিস্ট্রার ও সাব-রেজিস্ট্রি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ফেনী সদর, লেমুয়া, মতিগঞ্জ, দাগনভূঞা, ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী ও পরশুরাম—এই সাতটি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত সাব কবলা, দানপত্র, হেবা, বণ্টননামা, চুক্তিপত্রসহ বিভিন্ন প্রকারের দলিল রেজিস্ট্রি করা হয়। এই অফিসগুলোয় নিবন্ধিত ৩৪ হাজার ৩৪৩টি দলিল থেকে সরকারের মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে ২০২ কোটি ৯৯ লাখ ২৪ হাজার ৬১০ টাকা।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সরকারের ডিজিটালাইজেশন কার্যক্রম রাজস্ব বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রেখেছে। অনলাইনে ভূমির দাখিলা, খতিয়ান যাচাই এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) বাধ্যতামূলক ব্যবহার হওয়ায় দলিলপত্র পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করা সম্ভব হচ্ছে। এতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাড়ার পাশাপাশি প্রতারণার মাধ্যমে ভূমি রেজিস্ট্রির সুযোগ কমে গেছে।
এ ছাড়া প্রবাসী অধ্যুষিত এ জেলায় সাম্প্রতিক সময়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ায় জমি কেনাবেচাও বৃদ্ধি পেয়েছে, যা রাজস্ব আয়ে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বলে কর্তৃপক্ষ জানায়।
তবে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায়ের খবরের পাশাপাশি সেবাগ্রহীতাদের মধ্যে নানা ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।
ভূমি রেজিস্ট্রির হার আরও বাড়াতে মৌজা রেইটের অসামঞ্জস্যতা দূর করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তাদের মতে, মৌজাগুলোকে এলাকাভিত্তিক তিনটি স্তরে ভাগ করে পৌর এলাকা ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের জন্য আলাদা রেইট নির্ধারণ করা হলে সরকারের রাজস্বও বৃদ্ধি পাবে।
সেবা গ্রহীতা ও ভোরের আকাশ প্রতিনিধি মোহাম্মদ আবু দারদা বলেন, গণ শুনানির মাধ্যমে মৌজার রেইট নির্ধারণ করা হলে রেজিস্ট্রি খরচ কমবে এবং ভূমি ব্যবসায় আগ্রহ বাড়বে।
ফেনী সদর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার আবদুর রহমান মোহাম্মদ তামিম বলেন, “রেজিস্ট্রি খরচ, উৎস কর ও স্থানীয় সরকার করসহ সব অর্থ সরাসরি ব্যাংকের মাধ্যমে নির্ধারিত কোডে সরকারি কোষাগারে জমা হচ্ছে। এই স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার ফলে রাজস্ব আদায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।”
এ বিষয়ে জেলা রেজিস্ট্রার সালাহ উদ্দিন আহম্মেদ জানান, ‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নতুন আয়কর বিধিমালা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করা হচ্ছে। তিনি বলেন, জেলা সদরের পৌরসভায় উৎস কর প্রতি শতকে ২৫ হাজার টাকা অথবা দলিল মূল্যের ৩ শতাংশ এর মধ্যে যেটি বেশি, তা নির্ধারণ করা হয়েছে।
উপজেলা পর্যায়ের পৌরসভার জন্য এই হার প্রতি শতকে ১০ হাজার টাকা বা দলিল মূল্যের ২ শতাংশ। পূর্বে শুধু ১০ লাখ টাকার বেশি মূল্যের দলিলে আয়কর রিটার্নের প্রমাণ প্রয়োজন হতো; কিন্তু এখন যে কোনো মূল্যের হস্তান্তর দলিলেই তা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘সেবা প্রদান সহজিকরণ ও জনবান্ধব করার পাশাপাশি রাজস্ব আহরণের গতি বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিনিয়ত উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রারগণকে তাগাদা দেওয়া হচ্ছে।’
ভোরের আকাশ/মো.আ.