দাগনভূঞা (ফেনী) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৭ আগস্ট ২০২৫ ০৯:১৮ এএম
ছবি: সংগৃহীত
ফেনীতে স্বল্প পুঁজি, বাজারে ভালো চাহিদা এবং ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী হওয়ায় বিলুপ্তপ্রায় জলজ সবজি ঠোঁয়াস চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। জেলার সোনাগাজী, দাগনভূঞা, সদর ও ফুলগাজীর মতো এলাকাগুলোয় পরিত্যক্ত ডোবা, মজা পুকুর এবং অগভীর জলাশয়ে কোনো প্রকার সার বা কীটনাশক ছাড়াই বাণিজ্যিকভাবে এই সবজি চাষ করে অনেক কৃষক আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।
ঠোঁয়াস একটি বর্ষাকালীন জলজ উদ্ভিদ যা পানির ওপর ভেসে থাকে। এর স্বাদ অনেকটা শাপলার কাণ্ডের মতো হওয়ায় এটি ভেজে, ভর্তা করে বা মাছের সঙ্গে রান্না করে খাওয়া যায়। কৃষি কর্মকর্তারা জানান, বর্ষা মৌসুমের আগে ডোবা, জলাশয় বা পুকুরের পাড়ের কাদামাটিতে এর গিটসহ কাণ্ড বা সাকার একবার লাগিয়ে দিলেই হয়।
বিশেষ কোনো পরিচর্যা বা পরিশ্রম ছাড়াই ২-৩ মাসের মধ্যে ফসল তোলা যায়। পানি শুকিয়ে গেলেও এই গাছ অনেক মাস পর্যন্ত মাটিতে টিকে থাকতে পারে এবং পর্যাপ্ত পানি পেলে দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে।
যে সময়ে মাঠে অন্য সবজির জোগান কম থাকে, সে সময় ঠোঁয়াস পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
একসময় ব্রিক ফিল্ডে চাকরি করা ফেনী সদর উপজেলার কালিদহ ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের মোহাম্মদ হানিফ অসুস্থতার কারণে ওপেন হার্ট সার্জারির পর ২০০০ সাল থেকে বাড়ির সামনের ১৬ শতাংশের একটি মজা পুকুরে ঠোঁয়াস চাষ শুরু করেন।
তিনি বলেন, “সামান্য ঘাস, আগাছা পরিষ্কার করা হলেই ঠোঁয়াস মোটা এবং তাজা হয়।” প্রতিদিন বাজার থেকে ঠোঁয়াস বিক্রি করেই তিনি এখন তার সংসার ও সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ চালান। তিনি আরও বলেন, “যারা বেকার রয়েছেন, তারা তাদের বাড়ির সম্মুখে বা পার্শ্ববর্তী মজা পুকুরে বা জলাশয়ে ঠোঁয়াস চাষ করলে পরিবারের সবজির চাহিদা পূরণ হবে, লাভও হবে।”
একইভাবে, ফেনী শহরতলীর বিরলী বাজারের সবজি ব্যবসায়ী নুর নবী তার বাড়ির সামনের ২৫ শতকের একটি জলাশয়ে ঠোঁয়াস চাষ করেন। তিনি কোনো পুঁজি ছাড়াই এই সবজি উৎপাদন করে অন্যান্য সবজির সঙ্গে বাজারে বিক্রি করে ভালো আয় করছেন।
ফেনীর গ্রামীণ হাটবাজার ছাড়াও শহরের কাঁচাবাজারে ঠোঁয়াস পাওয়া যাচ্ছে। সাধারণত ১২-১৪ ইঞ্চি লম্বা ২০-২২টি ডাটার একটি আঁটি ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়। ফেনীর বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রেজাউল গনি পলাশ বলেন, “আমি প্রায়শ বাজারে এই অপ্রচলিত সবজিটা খুঁজি। যখনই পাই, যত দামি হোক আমি এটা কিনে বাসায় নিয়ে যাই এবং পরিবারসহ সবজি হিসেবে ভাতের সঙ্গে খেয়ে থাকি।”
চন্দ্রপুর এলাকার গৃহিণী ফারিয়া আক্তার ও নাসিমা আক্তার জানান, সহজ রন্ধনপ্রণালী, কম দাম এবং সুস্বাদু হওয়ায় তারা নিয়মিত বাজার থেকে ঠোঁয়াস কেনেন।
ফেনী সদর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু তৈয়ব বলেন, “ঠোঁয়াস একটি অপ্রচলিত বিলুপ্তপ্রায় সবজি। এটি চাষে তেমন পরিশ্রম হয় না। বিশেষ করে বর্ষাকালে এটি উৎপাদন হয়। যখন মাঠে অন্যান্য সবজি থাকে না, তখন এই সবজিটি সাপোর্ট দিয়ে থাকে।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, আঁশ সমৃদ্ধ হওয়ায় ঠোঁয়াস ডায়াবেটিস রোগীর জন্য অত্যন্ত উপকারী। তার মতে, এই সবজির চাষ সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়া গেলে মানুষ ব্যাপকভাবে উপকৃত হবে।
ভোরের আকাশ/মো.আ.