মো. ইউনুছ আলী
প্রকাশ : ৩১ মে ২০২৫ ১০:৪০ এএম
ঝিনাইদহের মহেশপুরে আঙ্গুর চাষে সফল কৃষক আব্দুর রশিদ
সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে বাগানের সবগুলো গাছ জুড়েই রয়েছে, শুধু থোকায় থোকায় আঙ্গুর। এত পরিমাণ আঙ্গুর ধরেছে যে পাতার ফাঁকে ফাঁকে শুধু আঙ্গুরই দেখা যাচ্ছে। চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, ফ্রান্স, স্পেন, তুরস্ক, চিলি, আর্জেন্টিনা, ইরান ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশগুলোতেই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি আঙ্গুর উৎপাদন হলেও ফলটি প্রায় সারা বিশ্বেই জনপ্রিয়। আঙ্গুর বিদেশি ফল হলেও জনপ্রিয় এই ফলটি চাষে সফল হয়েছেন বাংলাদেশের ঝিনাইদহ জেলার ভারতীয় সীমান্তবর্তী উপজেলা মহেশপুরের একজন চাষি।
ফল ও সবজির চাষের পাশাপাশি শখের বসে আঙ্গুর ফল চাষে স্বাবলম্বী হয়েছেন আব্দুর রশিদ নামের এই কৃষক। তিনি ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের যোগিহুদা গ্রামের বাসিন্দা। শখের বসে আঙ্গুর ফলের চাষ করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। তার দেখাদেশি এখন অনেকেই আগ্রহী হয়ে শুরু করেছেন আঙ্গুর ফলের চাষ।
আব্দুর রশিদের শখ কৃষিতে ক্ষেত্রে নতুন নতুন সবজি, ফল ও ফসলের চাষ করা। আর এ শখের অংশ হলো মাসে একদিন সময় করে দেশের যেকোনো প্রান্তে নতুন কোনো চাষের সংবাদ পেলে সেখান থেকে ঘুরে আসা। তিনি আঙ্গুরসহ নানা জাতের ফল চাষে সফলতা দেখিয়ে চলেছেন। সঙ্গে ভাগ্যের চাকা ঘুরয়েছেন নিজের পরিবারের।
জানা যায়, কৃষক আব্দুর রশিদ দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ধরনের ফল ও সবজির চাষ করে আসছেন। পরে শখের বসে বিদেশি কয়েকটি জাতের আঙ্গুরের চারা সংগ্রহ করে তা রোপণ করেন। এর পর থেকেই আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। কৃষক আব্দুর রশিদ বলেন, প্রথম দিকে ভারত ও ইতালি থেকে কয়েকটি জাতের আঙ্গুর সংগ্রহ করে নিজের ১০ কাঠা জমিতে ছমছম ও সুপার সনিকা জাতের ৭৫টি আঙ্গুরের গাছ রোপণ করে চাষ শুরু করি।
সাত মাস পরিচর্যার পর তার বেশিরভাগ গাছেই আঙ্গুর ফল ধরে। প্রতিটি গাছে ৫ থেকে ৭ কেজি করে আঙ্গুর ধরে তখন। কৃষক আব্দুর রশিদ এ বছর ৪ বিঘা জমিতে বাইকুনুর, একোলো ও ব্ল্যাকম্যাজিক জাতের আঙ্গুর চাষ করছেন। আব্দুর রশিদের দাবি বাজারে বিক্রি হওয়া বিভিন্ন জাতের বিদেশি আঙ্গুরের চেয়ে তার জমির পাকা আঙ্গুরের স্বাদ ভালো। আঙ্গুর চাষের জন্য তিনি সিমেন্টের খুঁটি ব্যহার করেছে।
তিনি আরও বলেন, ভারত থেকে চারাগুলো সংগ্রহ করলেও, আমাদের দেশের আবহাওয়া, মাটি ও আদ্রতা ইত্যাদির বিবেচনায় গাছগুলো অনেক হৃষ্টপুষ্ট ও ভালো হচ্ছে। আঙ্গুরগুলো খুব মিষ্টি হওয়ার ফলে, আঙ্গুর চাষে বিদেশের ওপর আঙ্গুর ফল আমদানি নির্ভরতা কমবে বলে জানান তিনি।
মহেশপুর উপজেলায় তিনি প্রথম বাণিজ্যিকভিত্তিতে আঙ্গুর চাষ করছেন। বিভিন্ন সময় তিনি ইউটিউবে আঙ্গুর, তরমুজ, কমলা চাষের ভিডিও দেখে আগ্রহী হন। আঙ্গুর চাষে সফল হওয়ায় চাষ সম্প্রসারণে আরো কয়েক বিঘা জমিতে আঙ্গুর গাছের চারা রোপণ করছেন। আঙ্গুর গাছে ফল আসার পর পাকতে সময় লাগে ৩ থেকে ৪ মাস। তার দাবি বাংলাদেশের মাটিতে সুস্বাদু আঙ্গুর চাষে তিনিই প্রথম সফল হয়েছেন।
বাংলাদেশের শহর থেকে গ্রামাঞ্চল প্রায় সর্বত্রই এই ফলটির চাহিদা থাকলেও আবহাওয়া, মাটি ও বাণিজ্যিক চাষের জ্ঞানের অভাবসহ নানা কারণে বাংলাদেশে এই ফলটি চাষের আগ্রহ খুব একটা দেখা যায়নি। তবে এখন কৃষি কর্মকর্তারা ও চাষিরা বলছেন, বাংলাদেশের মাটিতেও আঙ্গুর চাষ করে সফল হওয়া সম্ভব। এর মধ্যে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলা এটি চাষের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী বলে দাবি করছেন সেখানকার কৃষি কর্মকর্তা ইয়াসমিন সুলতানা।
স্থানীয়রা বলেন, আব্দুর রশিদের আঙ্গুর ফলের বাগান দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিদিন মানুষ আসছে, এবং ছবি তুলে নিয়ে যাচ্ছে। আঙ্গুর ফল চাষে সাবলম্বী আব্দুর রশিদের কারণে গ্রামের পরিচিতি দ্বিগুণ বেড়েছে বলে জানান তারা। এবং তার দেখাদেশি এখন অনেকেই আগ্রহী হয়ে শুরু করেছেন আঙ্গুর ফলের চাষ। ফলে ঝিনাইদহে বাণিজ্যিকভাবে আঙ্গুর চাষের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
মহেশপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইয়াসমিন সুলতানা বলেন, মহেশপুরের মাটিটা আঙ্গুরের জন্য উপযোগী। এখানে এই ফলটা হবে বলে আমরা আশা করছি। একজন চাষি সফল হয়েছেন। শুরু থেকেই তিনি আমাদের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করেছেন এবং চলতি বছর তার বাগান আরও বিস্তৃত হয়েছে। এখানে একজন চাষি বাণিজ্যিক উৎপাদনে সফল হয়েছেন এবং ইতোমধ্যে ঢাকা থেকে কিছু বড় কোম্পানির প্রতিনিধিরাও তার বাগানে গিয়ে দেখে এসেছেন।
ভোরের আকাশ/এসএইচ