কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৩ জুলাই ২০২৫ ০৪:২৫ পিএম
কলাপাড়ায় বৃষ্টিতে সবজি গাছের ক্ষতি, চিন্তিত কৃষক
কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে আর্থিত ক্ষতির মুখে পড়েছে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় সবজি চাষিরা। ফুল-ফলন ধরা সবজির গাছ গুলোতে পচন ধরেছে। সবুজ গাছগুলো বিবর্ণ ও হলদে হয়ে গেছে। পাতা-লতা নেতিয়ে পড়েছে।
উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মাঠের বেশির ভাগ গাছ ভেঙে গেছে, হেলে গেছে গাছ। বিভিন্ন সবজি গাছে করলা, জিঙ্গা, পুই শাক, ধুন্দল। উপজেলা ২০ হেক্টর জমিতে করলা আবাদ হয়েছে। একেক জন সবজি চাষি গড়ে শুধু করলার আবাদ থেকে এক থেকে দুই লাখ টাকার ফলন পাওয়ার আশায় বিভোর ছিলেন। এখন তারা চরম হতাশ হয়ে পড়েছেন।
`সবজির হাব' খ্যাত কুমিরমারা গ্রাম ঘুরে সবজি চাষিদের এমন দুরবস্থা দেখা গেছে। গ্রামটির শতকরা ৯০ জন মানুষ সারা বছর সবজির আবাদ করে জীবীকা নির্বাহ করে আসছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্ষাকালীন আবাদ করা সবজির ফলন বাজারজাত করার পর্যায়ে পৌঁছালে অতিবৃষ্টিতে এখন অধিকাংশই শেষ হয়ে গেছে। মানুষ গুলো পুঁজির সঙ্কটে পড়েছেন, জীবিকায় অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। ধানসহ ১২ মাসই এই গ্রামের আবাদি জমি থেকে শুরু করে বাড়ির আশাপাশে, এমনকি ক্ষেতের আইলে পর্যন্ত শাকসবজির আবাদ করে আসছেন। প্রচন্ড উদ্যমী এই মানুষগুলোর হাসিমুখ এখন বিমর্ষ হয়ে গেছে। প্রকৃতির রোষানলে পড়ে মানুষগুলো এখন অনেকটা দিশাগ্রস্ত হয়ে গেছেন।
কুমিরমারা গ্রামে সবজি চাষি সুলতান গাজী জানান, তিনি ৭৫ শতক জমিতে করলার চাষ করেছিলেন। ফুল-ফল ধরা গাছ গুলো গত টানা বৃষ্টিতে হলুদ হয়ে গেছে। ফুল-ফল মরে গেছে। তিনি অন্তত এই ক্ষেত থেকে দেড় থেকে পৌনে দুই লাখ টাকা বিক্রি করতে পারতেন। কিন্তু এখন উল্টো এই ক্ষেত তৈরিসহ পরিচর্যায় অন্তত ৫০ হাজার টাকা খরচ করেছেন, যার পুরোটাই লোকসান হয়েছে।
তিনি আরও জানান, গেল বছর তিনি এই ক্ষেত থেকে প্রায় দুই লাখ টাকার করলা বিক্রি করেছেন। এবছর এক টাকাও তুলতে পারেননি। তথ্য দিয়ে বললেন, ‘এই কুমিরামারা, মজিদপুর, পূর্ব সোনাতলা, এলেমপুর, মোস্তফাপুর, পাখিমারা, নাওভাঙার আংশিক এলাকা দিয়ে পাখিমারা বাজারে গত বছর এমন সময় প্রতিদিন ৬-৭ ট্রাক করলা কলাপাড়া, পটুয়াখালী ছাড়াও ঢাকা পর্যন্ত চালান করা গেছে। এই বছর তিন দিনেও এক ট্রাক হয় না।’ তার ভাষ্য, ‘প্রকৃতি যেন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।’ তার দাবি, ‘জলবায়ুর পরিবর্তন বাস্তবে চোখে দেখছি। যার ক্ষতির ভাগ সরাসরি পাচ্ছি।’
পাখিমারা এলাকার কৃষক সোনা মিয়া তার ভাষ্য মতে, এখন বৃষ্টির পানি কমতে শুরু করেছে। আর গাছ গুলো মরতে শুরু করছে। পাতা নেতিয়ে পড়েছে। লাউসহ কিছু সবজি কেটে কলাপাড়া শহরের বিক্রি করছেন বলেও জানান সোনা মিয়া।
একইভাবে কুমিরমারা গ্রামের সবজি চাষি আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদার, শাহজাহান গাজী, মাসুম চৌধুরী, সোনাতলার নজরুল আকন, মজিদপুরের শামসু মিয়া, লিটন হাওলাদার, আব্বাস হাওলাদার, নাওভাঙার সালাম সিকদারের করলাসহ সবজির ক্ষেতের সর্বনাশা দৃশ্য দেখা গেছে।
মোট কথা, কুমিরমারা, মজিদপুর, পূর্ব সোনাতলা, এলেমপুর, মোস্তফাপুর, নাওভাঙাসহ অধিকাংশ গ্রামের শতকরা ৮০ ভাগ সবজি চাষির বর্ষাকালীন অধিকাংশ সবজির গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। সবজির আবাদসহ ১২ মাস কৃষি নির্ভর মানুষগুলো সাত দিনের বিরামহীন বৃষ্টিতে সব হারিয়ে ফেলেছেন। ফের আবাদ করবেন, নাকি অন্য কিছু করবেন-এমনটি অনেকে ভাবনায় আনতেও পারছেন না। কৃষিনির্ভর এই পরিবারগুলোকে জরুরি ভিত্তিতে আবার মাঠে সবজির ক্ষেত তৈরির জন্য পুঁজির যোগান দেওয়ার দাবি করেছেন অধিকাংশরা।
পাখিমারার সবজির পাইকারি দোকানি আবুল কালাম জানান, গেল বছর এমন সময় পাখিমারায় সবজির রমরমা ব্যবসা ছিল। বিশেষ করে করলার ছিল টনকে টন আমদনি, এবারে ভিন্ন চিত্র। আশঙ্কাজনক হারে সবজি উৎপাদন কমে গেছে, বৃষ্টিতে চাষিদের সর্বনাশ হয়ে গেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মাদ আরাফাত হোসেন জানান, বিরামহীন বৃষ্টিতে কৃষকের শাকসবজির ক্ষেতের অনেকটা ক্ষতি হয়েছে। তবে এখন পানি নামতে শুরু করেছে। পচন রোধে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তারা কৃষকদের পাশে আছেন। তাদের সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর নিচ্ছেন ও ৬-৭ দিন পর পর ওষুধ দিতে হবে।
ভোরের আকাশ/আজাসা