রংপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০১ জুলাই ২০২৫ ০৯:০৯ পিএম
জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদ নিয়ে টালবাহানা শুরু করেছে সরকার : রংপুরে নাহিদ ইসলাম
জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ নিয়ে টালবাহানা শুরু করেছে সরকার। আমরা স্পষ্টভাবে হুশিয়ারী দিতে চাই, যদি সরকার বা অন্য কেউ মনে করে থাকেন জুলাই আন্দোলনে যারা রাজপথে নেমে এসেছিল তারা ঘরে ফিরে গিয়েছে, তাহলে আপনারা ভুল ভাবছেন। আবু সাঈদের কবর থেকে ঘোষণা করছি বাংলার প্রতিটি পথে-প্রান্তে গিয়ে চাত্র-জনতা, তরুণ-শ্রমিকদের আবারও রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানাবো। আগামী ৩ আগস্ট ঢাকায় জনতা-শ্রমিকদের নিয়ে জুলাই ঘোষণাপত্রের জন্য আবারও আন্দোলন করা হবে।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টায় রংপুরের পীরগঞ্জের মদনখালী ইউনিয়নের জাফরপাড়া বাবনপুর গ্রামে এসে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, জুলাই অভ্যুত্থান একটি দল পরিবর্তন কিংবা ক্ষমতার হস্তান্তরের জন্য ঘটেনি। অভ্যুত্থান ঘটেছিল একটি গণতান্ত্রিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার জন্য। আমরা অনেকে মনে করি জুলাই আন্দোলন ছিল সরকার পতনের আন্দোলন। আমাদের মাঝেও কিছু হতাশা রয়েছে, কারণ আমরা এখনো সম্পূর্ণ বিচার দেখতে পারিনি। বৈষম্যহীন বাংলাদেশে যে সংস্কার হওয়ার কথা তা সম্পূর্ণরূপে আমরা দেখতে পারিনি। তিনি বলেন, বিচার, সংস্কার ও নতুন সংবিধানের যে তিনটি দাবী রয়েছে তা আবু সাঈদের কবরের পাশ থেকে পুনঃব্যক্ত করছি।
এনসিপি’র সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, দেশ গড়তে বিচার, সংস্কার ও নতুন সংবিধানের দাবিতে জুলাই পদযাত্রার অনুষ্ঠানিক সূচনা জুলাইয়ের প্রথম শহীদ বীর যোদ্ধা শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মধ্য দিয়ে আমরা শুরু করছি। হাজার মানুষের জীবন ও রক্তের বিনিময়ে নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। সে নতুন বাংলাদেশ গড়তে পুরনো কাঠামো ভেঙে নতুন বন্দোবস্তের জন্য মৌলিক সংস্কার বাস্তবায়ন করতে হবে।
তিনি বলেন, যারা গণহত্যা সংগঠিত করেছে, বাংলাদেশের উপর মানবতা বিরোধী অপরাধ চাপিয়ে দিয়েছে তাদেরকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। একই সাথে বাংলাদেশের পুরনো মুজিব বাদী সংবিধান ফেলে দিয়ে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে গণপরিষদ নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। এর সবকিছুর মধ্যে দিয়ে নতুন বাংলাদেশ পুনর্গঠিত হবে।
তিনি আরও বলেন, আবু সাঈদের কবর এমন এক জায়গা যেখানে আমরা দ্রোহের শক্তি পাই। আবু সাঈদের কবর এমন এক জায়গা যেখান থেকে গোটা বাংলাদেশকে আমরা বিনির্মাণ করার শক্তি পাই। সেই আবু সাঈদের কবরের পাশে এসে আমরা দাঁড়িয়েছি। আবু সাঈদের কবরের মাটি ছুঁয়ে আজ আমরা শপথ করছি, যতদিন পর্যন্ত না নতুন বন্দোবস্ত ও মৌলিক সংস্কারের ভিত্তিতে নতুন বাংলাদেশ, বৈষম্য বিরোধী বাংলাদেশ গঠিত হবে, বাংলাদেশে সামাজিক ন্যায় বিচার, সাম্য ও মানবিক মর্যাদা পুণঃপ্রতিষ্ঠিত হবে ততদিন পর্যন্ত ছাত্র জনতার নেতৃত্বে জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপি’র এ সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডাঃ তাসনিম জারা, উত্তরাঞ্চলের মূখ্য সংগঠক সারজিস আলম, দক্ষিণাঞ্চলের মূখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, মূখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দীন পাটোয়ারীসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দরা।
কবর জিয়ারত শেষে তারা আবু সাঈদের পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেন। এ সময় আবু সাঈদের মা মনোয়ারা বেগম নাহিদ ইসলামের মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করেন। এরপর গাইবান্ধায় পথসভা ও পদযাত্রা করে জাতীয় নাগরিক পার্টি। ৬টায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে শহীদ আবু সাঈদ চত্ত্বরে এনসিপি’র কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দরা আসেন। সেখানে জুলাই আন্দোলনের শ্লোগান দেন তারা। এরপর পদযাত্রাটি নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে টাউন হলের সামনে শেষ হয়। সেখানে পথসভা করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতারা।
ভোরের আকাশ/আজাসা