ইসা হাসান, পাথরঘাটা (বরগুনা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০১ আগস্ট ২০২৫ ১১:০৩ এএম
ছবি: ভোরের আকাশ
জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ ঘাটতির কোনো তথ্য না থাকলেও বরগুনার পাথরঘাটা যেন তার বিপরীত বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি। দক্ষিণাঞ্চলের এই গুরুত্বপূর্ণ উপকূলীয় উপজেলায় প্রতিদিন লোডশেডিং ও লো-ভোল্টেজ সমস্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ঘরবাড়ি, ব্যবসা, এমনকি সমগ্র মাছভিত্তিক অর্থনীতি।
৬৬ কিলোমিটার দীর্ঘ বিদ্যুৎ লাইন দিয়ে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া থেকে পাথরঘাটায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। দীর্ঘ এই লাইনের যেকোনো অংশে গাছপালা পড়া বা ইনসুলেটর ভাঙার মতো ঘটনায় পুরো এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ঘনঘন ফল্টের কারণে প্রতিবার ম্যানুয়ালি লাইন চেক করে বিদ্যুৎ চালু করতে হয়, যা সময়সাপেক্ষ। ফলে ঘন্টার পর ঘণ্টা অন্ধকারে থাকে পুরো এলাকা।
এই সংকটের সবচেয়ে বড় শিকার দেশের অন্যতম বৃহৎ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র পাথরঘাটা বিএফডিসি ঘাট। প্রতিদিন এখানে কোটি কোটি টাকার মাছের লেনদেন হয়। কিন্তু বিদ্যুতের অনিয়মিত সরবরাহের কারণে ২৮টি বরফকল সঠিকভাবে বরফ উৎপাদন করতে পারছে না। এর ফলে সংরক্ষণের অভাবে বিপুল পরিমাণ মাছ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন জেলেরা, বরফকল মালিক ও মাছ ব্যবসায়ীরা। এতে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও বৈদেশিক রপ্তানি শৃঙ্খলা প্রতিনিয়ত হুমকির মুখে পড়ছে।
বিএনপি নেতা ও পাথরঘাটার সাধারণ মানুষের পক্ষে সরব কণ্ঠস্বর বদিউজ্জামান সাহেদ বলেন, “পাথরঘাটার মানুষের জীবিকা মাছ নির্ভর। অথচ বিদ্যুৎ বিভ্রাটে বরফ উৎপাদনে সমস্যা হওয়ায় মাছ নষ্ট হচ্ছে, যার প্রভাব শুধু স্থানীয় নয়, জাতীয় অর্থনীতিতেও পড়ছে।” তিনি বরগুনা জেলা সদর থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরত্বে থাকা সত্ত্বেও পাথরঘাটা কেন ভান্ডারিয়া হয়ে ৬৬ কিলোমিটার লাইন পেরিয়ে বিদ্যুৎ পাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং দ্রুত সরাসরি সংযোগ দেওয়ার দাবি জানান।
পাথরঘাটা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা মিলন বলেন, “এত দীর্ঘ বিদ্যুৎ লাইন সারা বাংলাদেশে আছে কি না সন্দেহ। সামান্য ঝড়বৃষ্টিতে গাছ পড়ে গেলে পুরো লাইন বন্ধ হয়ে যায়। দিনের পর দিন লো-ভোল্টেজে আমাদের বাড়িঘরের ইলেকট্রনিকস পুড়ে যাচ্ছে। সবচেয়ে খারাপ লাগে যখন কোনো আগাম ঘোষণা ছাড়াই ঘন্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ বন্ধ থাকে।”
পাথরঘাটা বিদ্যুৎ অফিসের ডিজিএম আরিফ শাহরিয়ার ফাহাদ জানান, ভান্ডারিয়া থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার এই দীর্ঘ লাইনের সমস্যাগুলো তারা জানেন। ইতোমধ্যে বরগুনা থেকে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে ৩৩ কেভি নতুন লাইন নির্মাণের অনুমোদন পাওয়া গেছে। আগামী ২-৩ মাসের মধ্যে কাজ শুরু হবে। পাশাপাশি পাথরঘাটা উপকেন্দ্রকে ২০ এমভিএতে উন্নীত করার কাজও চলছে।
এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বিদ্যুৎ সরবরাহে দীর্ঘদিনের দুর্ভোগের অবসান ঘটবে বলে আশাবাদী ভুক্তভোগীরা।
এটি আর শুধুমাত্র একটি অবহেলিত উপজেলার সমস্যা নয়, বরং দেশের দক্ষিণাঞ্চলের একটি অর্থনৈতিক হাবকে টিকিয়ে রাখার সময়োপযোগী দাবি। এখন প্রয়োজন, দায়িত্বশীল মহলের দ্রুত বাস্তব পদক্ষেপ।
ভোরের আকাশ/জাআ