ভোরের আকাশ ডেস্ক
প্রকাশ : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৯:৪৫ এএম
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের প্রচার প্রচারণার মেয়াদ শেষ হয়েছে রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টায়। ছয় বছর বিরতির পর বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় আগামীকাল মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন ২০২৫ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলবে এই নির্বাচনে ভোটগ্রহণ।
গত ২৬ আগস্ট থেকে রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত টানা ১৩ দিন প্রার্থীরা তাঁদের প্রচারণা চালান। এদিন সারাদিন প্রচার প্রচারণা চালিয়েছে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সব প্যানেল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এখন অপেক্ষা শুধু নির্বাচনের।
এর আগে গত ১৩ দিনে প্রার্থীরা প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করেছেন। দিনের বেলা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক এলাকায়, টিএসসি, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনের এলাকা, মল চত্বর, কার্জন হল—এসব এলাকায় প্রচারণা চালিয়েছিলেন প্রার্থীরা।
আর রাতের বেলায় প্রার্থীরা চেষ্টা করেছেন প্রতিটি হলে গিয়ে আবাসিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে, তাঁদের কথা শুনতে ও নিজেদের ইশতেহার জানান দিতে। এ ছাড়া নারী শিক্ষার্থীদের ভোটের জন্য নারীদের নিজেদের ইশতেহার জানান দিতে হলে হলে প্রজেকশন মিটিং করেছেন বিভিন্ন প্যানেল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
ভোট গণনা হবে ওএমআর মেশিনে
এদিকে ভোটগ্রহণ শেষে ভোট গণনা করা হবে ওএমআর মেশিনে। ভোট গণনার জন্য এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই মেশিনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ভোট প্রদান শেষ হলে প্রথমে হাতে গুনে ১০টি ব্যালট পেপার পরীক্ষা করা হবে এবং সেই ১০টি পেপার আবার এই ওএমআর মেশিনে দেওয়া হবে। এরপর যদি হাতে গোনা ফলাফল ও ওএমআর মেশিনের ফলাফল এক হয় তাহলে তখন ওএমআর মেশিন ঠিক ফলাফল দিচ্ছে বলে ধরে নিয়ে যতগুলো ভোট কাস্টিং হয়েছে সেগুলোর ব্যালট পেপার ওএমআর মেশিনে দিয়ে ফলাফল বের করা হবে।
গুজবে কান না দিয়ে ভোটকেন্দ্রে আসার আহবান কমিশনের
ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে কোনো ধরনের গুজবে কান না দিয়ে শিক্ষার্থীদের ভোটকেন্দ্রে আসার আহবান জানিয়েছেন নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন। রোববার বিকেলে নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে রিটার্নিং অফিসারদের কার্যালয়ের সামনে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে তিনি এই আহবান জানান।
গুজবে কান না দেওয়ার আহবান জানিয়ে অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, ‘গুজব একটি সামাজিক ব্যাধি। কোনো ঘটনা ঘটেনি কিন্তু চারদিকে গুজব ছড়িয়ে যাচ্ছে। ডাকসু নির্বাচন নিয়ে নানা ধরনের গুজব হতে পারে যে অমুক প্রার্থী চলে গেছেন, অমুক প্রার্থী আরেকজনকে সমর্থন করছেন। তাই শিক্ষার্থীদের নির্বাচন ঘিরে কোনো ধরনের গুজবে কান না দিতে আহবান জানাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে কোনো গুজব ছড়ালে সেটিকে গুরুত্ব না দিয়ে রিটার্নিং অফিসারদের কার্যালয়ে যোগাযোগ করার অনুরোধ করছি। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ, ওয়েবসাইটে খোঁজ রাখবেন। সঠিক তথ্য জানতে চাইলে আমাদের কাছে আসবেন। কোনো গুজবে কান দেবেন না।’
শপথ নিলেন ছাত্রদল মনোনীত প্রার্থীরা : ডাকসু নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা শপথ নিয়েছেন। নির্বাচিত হলে রাজনৈতিক শিষ্টাচার বজায় রাখা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ তৈরি এবং প্রতিপক্ষের সঙ্গে গণতান্ত্রিক আচরণ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে শপথ নেন তাঁরা। রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের সামনের বটতলায় এই শপথ অনুষ্ঠান হয়। শপথবাক্য পাঠ করান ছাত্রদল মনোনীত সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী মো. আবিদুল ইসলাম খান। এ সময় ডাকসু ও বিভিন্ন হল সংসদে ছাত্রদলের পূর্ণ প্যানেলের প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
শুরুতেই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য গণরুম সংস্কৃতি, গেস্টরুম নির্যাতন, রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিতে বাধ্য করা এবং ভিন্নমতের ওপর নিপীড়ন ফিরে আসতে না দেওয়ার অঙ্গীকার করা হয়। দ্বিতীয় অঙ্গীকারে দেশের গণতন্ত্র ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার কথা বলা হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, জুলাই অভ্যুত্থানের রক্তঝরা দিনগুলোতে যেভাবে আমরা বন্দুকের নলের সামনে দাঁড়িয়েছিলাম এবং আমাদের অগ্রজরা যেভাবে ১৯৯০ সালের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন এবং ১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, ঠিক সেভাবেই দেশের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব বা জনগণের মুক্তির পথে যেকোনো কালো শক্তির বাধা প্রতিহত করতে আমরা দৃঢ় থাকব।’
অন্যান্য অঙ্গীকারের মধ্যে রয়েছে—ছাত্রীদের জন্য নিরাপদ আবাসন, স্বাস্থ্যসেবা, সম-অধিকার ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করে একটি নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি করা; সব শিক্ষার্থীর জন্য আবাসিক হলে বৈধ আসন, সাশ্রয়ী মূল্যে পুষ্টিকর খাবার, মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা, পরিচ্ছন্নতা, কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও সহজলভ্য পরিবহন সুবিধা নিশ্চিত করা। সাইবার বুলিং, গুজব, অপতথ্য ও ভুয়া সংবাদের মতো অনলাইন হুমকি থেকে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা দেওয়া এবং শিক্ষা, গবেষণা ও একাডেমিক পরিবেশের মানোন্নয়ন, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের প্রসার এবং ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ বৃদ্ধি করে বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি আধুনিক ও মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার কথাও বলা হয়েছে অঙ্গীকারে।
সপ্তম অঙ্গীকারে ডাকসুর অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিবেশে শিষ্টাচার, সৌজন্য ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। শেষে এই শপথের প্রতিটি অঙ্গীকার সমুন্নত রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়।
নির্বাচন কমিশন প্রত্যেকটি দিন তার নিরপেক্ষতা হারাচ্ছে : আবু বাকের
ডাকসু নির্বাচনে ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেলের জিএস প্রার্থী আবু বাকের মজুমদার বলেন, ‘৯ সেপ্টেম্বর নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা অনেক আগেই জানিয়েছিলাম। নির্বাচন কমিশন প্রত্যেকটি দিন তার নিরপেক্ষতা হারাচ্ছে। যারা আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’ রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে ডাকসু প্রচারণার শেষ দিন সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে করা এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
আবু বাকের মজুমদার বলেন, ‘যেভাবে কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে, সেগুলো শিক্ষার্থীদের অনুকূলে না। কার্জনে একটা বিল্ডিংয়ে তিনটি কেন্দ্র দেওয়া হয়েছে। এটা কোনোভাবেই যৌক্তিক না। কার্জনে আরো অনেক ভবন রয়েছে, সেখানে দিতে পারত। সেই সঙ্গে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল ও কুয়েত মৈত্রী হলের ভোটকেন্দ্র দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে। হলপাড়ার হলগুলোকে কেন্দ্র দিয়েছে উদয়ন স্কুলে। সব উল্টোপাল্টা করে দিয়েছে, যেন শিক্ষার্থীরা ভোটে অংশগ্রহণ করতে না পারেন। শিক্ষার্থীরাও শঙ্কা করছেন, কেউ নতুন করে ক্যাম্পাসকে কুক্ষিগত করে রাখে কি না।’
শিক্ষার্থীকে ফোন দিয়ে ভোট দিতে বাধ্য করা ফ্যাসিবাদী কায়দা : সাদিক কায়েম
ডাকসু নির্বাচনে শিক্ষার্থীকে ফোন দিয়ে ভোট দিতে বাধ্য করা ফ্যাসিবাদী কায়দা বলে মন্তব্য করেছেন ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’-এর ভিপি প্রার্থী আবু সাদিক কায়েম। রোববার এক সাক্ষাৎকারে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সাদিক কায়েম বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের ডোর টু ডোর যেতে চাই, তাঁদের আকাঙ্ক্ষা ও প্রত্যাশার কথা শুনতে চাই। কোনো বড় নেতা এলাকার বাইরে থেকে ফোন দিয়ে ভোট দিতে বাধ্য করা একটি ফ্যাসিবাদী কায়দা।’
অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা ভোট দিলে সমীকরণ বদলে যাবে : মেঘমল্লার
ডাকসু নির্বাচনে অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা ভোট দিলে সমীকরণ বদলে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর প্যানেল ‘প্রতিরোধ পর্ষদে’র সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী মেঘমল্লার বসু। গতকাল দুপুরে মধুর ক্যান্টিনের সামনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ডাকসু নির্বাচনে অনিয়মের শঙ্কা শিক্ষক নেটওয়ার্কের, সতর্কতামূলক ১০ দাবি
ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অনিয়মের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। এ নিয়ে ১০ দফা সতর্কতামূলক দাবি জানিয়েছেন সংগঠটির নেতারা। রোববার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক নেটওয়ার্কের নেতারা বলেন, ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচনে পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছিল নির্বাচন পুরোপুরি সুষ্ঠু হয়নি। সেই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এবারের নির্বাচনের আগেই নানা প্রস্তাব ও দাবি উত্থাপন করা হয়। এর মধ্যে দু-একটি বাস্তবায়িত হলেও গুরুত্বপূর্ণ একাধিক বিষয় এখনো উপেক্ষিত। সেগুলোর বিষয়েও প্রশাসনকে নজর দেওয়া জরুরি।
ওএমআর মেশিনের স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণসহ ১০ প্রস্তাবনা ইউনিভার্সিটি টিচার্স লিংকের
ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে আয়োজন করতে চিফ রিটার্নিং অফিসার বরাবর ১০টি প্রস্তাবনা দিয়েছে দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স লিংক (ইউটিএল)। রোববার দুপুরে সিনেট ভবনের নির্বাচন কমিশনারের কার্যালয়ে রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানীর কাছে এই প্রস্তাবগুলো দেওয়া হয়।
এসব প্রস্তাবে রয়েছে—ভুয়া ভোটার ও জাল ভোট রোধ, ওএমআর মেশিনের স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ, কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল ঘোষণা, আচরণবিধি কঠোরভাবে অনুসরণ, নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, ক্যাম্পাসে নিরাপত্তাব্যবস্থা, প্রযুক্তিনির্ভর নজরদারি, প্রচারণা ও গণ-আস্থা, নির্বাচনকালীন কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ ও সহায়তা কেন্দ্র, ফলাফল প্রকাশ ও পরবর্তী শৃঙ্খলা।
ভোটগণনা সরাসরি দেখানো হবে এলইডি স্ক্রিনে : ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটগণনা সরাসরি নির্বাচনের কেন্দ্রের বাইরে এলইডি স্ক্রিনে দেখানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডাকসু ও হল সংসদের নির্বাচন কমিশন। রোববার রাতে প্রধান রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিনের স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন ২০২৫-এর ভোটগণনা প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের বাইরে এলইডি স্ক্রিনের মাধ্যমে সরাসরি প্রদর্শন করা হবে।
ভোরের আকাশ/মো.আ.