ডাকসু নির্বাচন
শহীদুল ইসলাম
প্রকাশ : ২১ আগস্ট ২০২৫ ০১:০৪ এএম
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন ক্যাম্পাস গড়িয়ে জাতীয় পর্র্যায়ে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে ততোই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হচ্ছে ডাকসু। তাই শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতিতে ডাকসু নিয়ে চলছে নতুন সমীকরণ। বিশেষ করে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের তিন ভাগে বিভক্তি, বাম ছাত্র সংগঠনের বিভক্তি, ছাত্র রাজনীতিতে নারী প্রার্থীদের উত্থান ও একাধিক প্যানেলের নেতৃত্বে থাকা নারী প্রার্থী আগামীর নতুন ধারার রাজনীতিতে কৌতূহল তৈরি করেছে। শিক্ষার্থীদের অভিমত, এবারের ডাকসুতে ভোটের ক্ষেত্রে প্যানেলের থেকেও ব্যক্তি প্রাধান্যকে গুরুত্ব দেওয়া হবে বেশি।
গত মঙ্গলবার ডাকসু নির্বাচনের প্যানেল ঘোষণা ও মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল। দিনটিতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ২৭ সদস্য বিশিষ্ট তাদের প্যানেল ঘোষণা করে। বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ, তিন বাম ছাত্র সংগঠন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমার প্যানেল ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক মাহিন সরকারের ‘ডিইউ ফার্স্ট’ স্বতন্ত্র প্যানেলসহ সকল প্রার্থীরা উৎসবমুখর পরিবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে তাদের মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন।
এর আগে ইসলামী ছাত্রশিবির, ছাত্র অধিকার পরিষদ, ইসলামী আন্দোলন তাদের মনোনয়ন জামা দেয়। জুলাই অভ্যুত্থানে নির্মমভাবে আহত হওয়া স্বতন্ত্র প্যানেলের নারী প্রার্থী সানজিদা আহমেদ তন্বীর জন্য ছাত্রদল তাদের পক্ষ থেকে গবেষণা ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক পদটি শূন্য রেখেছে। ছত্রদল সভাপতি রাকিব বলেন, আমরা পূর্ণভাবে তাকে সমর্থন ঘোষণা করছি। জুলাই-আগস্টের যে স্পিরিট এবং চেতনা রয়েছে ছাত্রদল সেই চেতনাকে ধারণ করে এবং তা সত্যিকার বাস্তবে রূপান্তর করে।
জিএস পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী সমন্বয়ক মাহিন সরকার, সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা। এর সধ্যে ‘ডিইউ ফার্স্ট’ স্বতন্ত্র প্যানেল থেকে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিলে সোমবার রাতে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) তাকে দল থেকে বহিষ্কার করে। মঙ্গলবার পর্যন্ত ছাত্রদল ও গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদসহ একাধিক ছাত্র সংগঠন তাদের প্যানেল ঘোষণা করেনি। একদিন সময় পেয়ে তারা আজ বুধবার প্যানেল ঘোষণা নিয়ে নতুন ছঁক কষছেন। পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ছাড়াও গত মঙ্গলবার কয়েকজন আলাদা আলাদাভাবে তাদের মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।
ডাকসু নির্বাচনের তথ্যমতে, এবছর বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় সংসদ নির্বাচনের ২৮টি পদের বিপরীতে মোট ৬৫৮ জন মনোনয়ন ফরমসংগ্রহ করেছেন এবং ১৮ হল সংসদে ১৪২৭ জন মনোনয়ন কিনেছেন। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ২৫ আগস্ট। পরদিন প্রকাশ করা হবে প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৯ সেপ্টেম্বর নির্বাচন। হলের বাইরে আট কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হবে। চূড়ান্ত ভোটার তালিকা অনুযায়ী মোট ভোটারসংখ্যা ৩৯ হাজার ৭৭৫ জন। এর মধ্যে ছাত্র ভোটার ২০ হাজার ৮৭১ জন ও ছাত্রী ভোটার ১৮ হাজার ৯০২ জন।
এবারের ডাকসুতে নারী প্রার্থীদের ছাত্র রাজনীতিতে ইতিবাচক উত্থান হয়েছে। কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের দীর্ঘ ইতিহাসে নারী নেতৃত্ব আশানুরূপ ছিল না। মাত্র দুবার নারী ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন। প্রথম নারী ভিপি হিসেবে ১৯৬০-৬১ শিক্ষাবর্ষে নির্বাচিত হন বেগম জাহানারা আক্তার। এরপর ১৯৬৬-৬৭ শিক্ষাবর্ষে দ্বিতীয় নারী হিসেবে ভিপি নির্বাচিত হন মাহফুজা খানম। এরপর ডাকসুতে আর কোনো নারী ভিপি নির্বাচিত হননি।
এরপর দীর্ঘ সময় এই পদ থেকে নারী প্রার্থীরা দূরে থাকলেও ২০২৫ সালের নির্বাচনে সেই শূন্যতা ভরাটের পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে। এবার শুধু একজন-দুজন নয় বরং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে একাধিক নারী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ বছর মোট ভোটারের মধ্যে প্রায় ৪৭.৫২% নারী ভোটার। এই বিশাল নারী ভোটব্যাংক নির্বাচনের চিত্র সম্পূর্ণভাবে পাল্টে দিতে পারে। বিশেষ করে রোকেয়া, শামসুন্নাহার, সুফিয়া কামাল, কুয়েত মৈত্রী হলের ভোটারদের সমর্থন কে পাচ্ছেন তা নির্ধারণ করবে নেতৃত্ব কাদের হাতে যাচ্ছে।
পাঁচটি নারী নেতৃত্বাধীন প্যানেল : ডাকসু নির্বাচনে নারী নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে পাঁচটি প্যানেল। যারা বিভিন্ন সময়ে ক্যাম্পাসে আন্দোলন-সংগ্রামের কারণে পরিচিত। তবে এর বাইরেও প্রতিটি প্যানেলেই রয়েছেন নারী প্রার্থীরা।
উমামা ফাতেমা-স্বতন্ত্র প্যানেল : স্বতন্ত্র প্যানেল থেকে ভাইস প্রেসিডেন্ট (ভিপি) পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন উমামা ফাতেমা। তিনি ঢাবির প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের কবি সুফিয়া কামাল হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ইস্যুতে সোচ্চার ছিলেন, বিশেষ করে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে তার ভূমিকা রয়েছে।
আশরেফা খাতুন-বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ : জুলাই অভ্যুত্থান কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা সংগঠন গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ নেতৃত্বাধীন ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেলে সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে লড়বেন আশরেফা খাতুন। তিনি গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের মুখপাত্র।
শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি-প্রতিরোধ পরিষদ (বাম ছাত্র সংগঠনসমূহের জোট) : ২০১৯ সালে শামসুন্নাহার হলের ভিপি নির্বাচিত শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি এবার বাম সংগঠনগুলোর জোট থেকে দেওয়া ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’ প্যানেল থেকে ভিপি পদেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৩-১৪ সেশনের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের এই শিক্ষার্থী জাতীয় নাগরিক কমিটির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। যদিও পরবর্তীতে সেই সংগঠন থেকে পদত্যাগ করেন।
সাবিনা ইয়াসমিন-ডাকসু ফর চেঞ্জ : ২০১৯ সালের নির্বাচিত ভিপি নুরুল হক নূরের ছাত্র সংগঠন ছাত্র অধিকার পরিষদের দেওয়া প্যানেল ‘উটঈঝট ঋড়ৎ ঈযধহমব’ প্যানেল থেকে সাবিনা ইয়াসমিন সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচন করেন।
ফাতেহা শরমিন অ্যানি-সমন্বিত শিক্ষার্থী সংসদ : স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংসদের আহ্বায়ক জামালুদ্দীন মুহাম্মাদ খালিদ ও সাবেক এনসিপি নেতা মাহিন সরকারের নেতৃত্বাধীন ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেলে সহকারী সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে লড়ছেন ফাতেহা শারমিন অ্যানি। এছাড়াও বিভিন্ন প্যানেলের সম্পাদক ও সদস্য পদে রয়েছেন একাধিক নারী প্রার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, ডাকসুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈধ শিক্ষার্থীরা মনোনয়ন ফরমসংগ্রহ করেছেন। এখানে কেউ কোনো দলীয় পরিচয়ে মনোনয়ন নেননি। ভোট গ্রহণের আগের দিন পর্যন্ত কোনো প্রার্থীর নাম অপরাধীর তালিকায় পাওয়া গেলে প্রার্থিতা থেকে বাদ দেওয়ার সুযোগ আছে।
ছাত্রদলের ২৭ সদস্যর আবিদ-হামিম প্যানেলে যারা রয়েছেন : চমকের আশায় তারেক রহমানের প্রতিক্ষায় থাকা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ডাকসু প্যানেলে ভিপি পদে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আবিদুল ইসলাম খান ও জিএস পদে কবি জসীমউদদীন হল শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক শেখ তানভীর বারী হামিমের নেতৃতে ২৭ সদস্য বিশিষ্ট প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে।
বুধবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ডাকসু নির্বাচনের এই প্যানেল ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ডাকসুর পাশাপাশি ১৮টি হল সংসদের প্যানেল চূড়ান্ত করা হয়েছে। শিগগিরই এই প্যানেল প্রকাশ করা হবে। প্যানেল ঘোষণার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস, সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপনসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
প্যানেলের অন্যান্য সদস্যরা হলেন : মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক পদে আরিফুল ইসলাম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে এহসানুল ইসলাম, কমন রুম, রিডিং রুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে চেমন ফারিয়া ইসলাম মেঘলা, আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে মেহেদী হাসান, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে আবু হায়াত মো. জুলফিকার জিসান, ক্রীড়া সম্পাদক পদে চিম চিম্যা চাকমা, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক পদে সাইফ উল্লাহ সাইফ, সমাজসেবা সম্পাদক পদে সৈয়দ ইমাম হাসান অনিক, ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক পদে আরকানুল ইসলাম রূপক, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক পদে আনোয়ার হোসাইন, মানবাধিকার ও আইন সম্পাদক পদে মেহেদী হাসান মুন্না।
এ ছাড়া প্যানেলে সদস্যপদে লড়বেন জারিফ রহমান, মাহমুদুল হাসান, নাহিদ হাসান, হাসিবুর রহমান সাকিব, শামীম রানা, ইয়াসিন আরাফাত, মুনইম হাসান অরূপ, রঞ্জন রায়, সোয়াইব ইসলাম ওমি, মেহেরুন্নেসা কেয়া, ইবনু আহমেদ, শামসুল হক আনান, নিত্যানন্দ পাল।
এর আগে, প্যানেল ঘোষণার পর ছাত্রদলের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে যান। সেখানে যাওয়ার আগে ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম বলেন, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর তারা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ আনাসের কবর জিয়ারত করবেন। এর মধ্য দিয়ে ছাত্রদলের নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হবে।
প্যানেল ঘোষণার পর রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, তাঁরা বিশ্বাস করেন, সাহসী, মেধাবী ও বিচক্ষণ শিক্ষার্থীরা ভোট দিয়ে ছাত্রদলের প্যানেলকে জয়ী করবেন। ছাত্রসমাজের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও দীর্ঘদিন ধরে যাঁরা শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে কাজ করেছেন, তাঁদেরই প্যানেলে মনোনীত করা হয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আবিদুল ইসলাম খানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। অভ্যুত্থানের সময় ‘প্লিজ কেউ কাউকে ছেড়ে যাইয়েন না’ বক্তব্য দিয়ে পরিচিতি পান তিনি। পরে অভ্যুত্থানের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি ‘স্ফুলিঙ্গ থেকে দাবানল’ নামে একটি বই লিখেছেন।
অন্যদিকে তানভীর বারী হামিম অভ্যুত্থানের পর থেকে ‘কমল মেডি এইড’ নামে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম খুলে ক্যাম্পাসে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড করে আসছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই প্ল্যাটফর্মের প্রতিষ্ঠাতা তিনি। এই প্ল্যাটফর্মের আওতায় শিক্ষার্থীদের টেলিমেডিসিন সেবা, স্বাস্থ্যসেবা ক্যাম্প, কলাভবন ও সামাজিক বিজ্ঞান ভবনে মেয়েদের কমন রুমে স্যানিটারি ভেন্ডিং মেশিন স্থাপন, আন্তহল শর্টপিচ ক্রিকেট টুর্নামেন্টসহ নানা আয়োজন করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরিচিতি পান তিনি।
কাদের-বাকেরের নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের প্যানেল ঘোষণা : ডাকসু নির্বাচনে ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’ নামে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ। বুধবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে এ প্যানেলের ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহীদ ফারহান ফাইয়াজের বাবা শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া। এ প্যানেল থেকে ভিপি পদে লড়বেন ঢাকা গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আব্দুল কাদের। জিএস পদে লড়বেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার। এছাড়া এজিএস পদে প্রার্থী হয়েছেন সংগঠনটির মুখপাত্র আশরেফা খাতুন। তারাও ২০২৪ সালের ১৫ জুলাই ঢাকা হামলায় আহত সানজিদা আহমেদ তন্বির সম্মানে গবেষণা ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক পদে কাউকে মনোনয়ন দেয়নি। প্যানেলের পক্ষ থেকে তাকে সমর্থন দেওয়া হয়েছে।
প্যানেলে অন্যান্য যারা লড়বেন : সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক পদে নাহিয়ান ফারুক; সমাজসেবা সম্পাদক পদে মহির আলম; মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক পদে মো. হাসিবুল ইসলাম; আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে মোহাম্মদ সাকিব; ক্রীড়া সম্পাদক পদে আল আমিন সরকার; আইন ও মানবাধিকার সম্পাদক পদে আনিকা তাহসিনা; কমনরুম ও ক্যাফেটরিয়া সম্পাদক পদে মিতু আক্তার; বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে আহাদ বিন ইসলাম শোয়েব; স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক পদে সাব্বির আহমেদ; ক্যারিয়ার ও উন্নয়ন সম্পাদক পদে রেজওয়ান আহম্মেদ রিফাত এবং ছাত্র পরিবহন সম্পাদক পদে মো. ঈসমাইল হোসেন রুদ্র। সদস্য পদে মনোনীত হয়েছেন মো. মাসউদুজ্জামান, ফেরদৌস আইয়াম, ইসমাঈল, তাপসী রাবেয়া, মো. আরমানুল ইসলাম, আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, রিফতি আল জাবেদ, আশরাফ অনিক, রওনক জাহান, মাহফুজা নওয়ার নওরীন, নুরুল ইসলাম নাহিদ, আরিফুর রহমান এবং ফেরদৌস আলম।
মাহিনের নেতৃত্বে সমন্বিত শিক্ষার্থী সংসদের প্যানেল ঘোষণা : জামালুদ্দীন মুহাম্মাদ খালিদকে ভিপি এবং মো. আবু সায়াদ বিন মাহিন সরকারকে জিএস প্রার্থী দিয়ে সমন্বিত শিক্ষার্থী সংসদের প্যানেল ঘোষণা করেছে মাহিন সরকার। মাহিন সরকার বলেন, এই প্যানেল কোনো মন্ত্রিপাড়ার না, লন্ডন থেকে আসেনি, এটা ঢাবির সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্যানেল।
ঘোষিত প্যানেল থেকে সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ফাতেহা শারমিন এ্যানি। প্যানেলে সম্পাদক পদগুলোর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক পদে আশিকুর রহমান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে আবদুল্লাহ ইবনে হানিফ আরিয়ান, কমন রুম, রিডিং রুম ও কাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে ফারজানা আক্তার মিতু, আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে ইমরান মিয়া, সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক পদে মোহতাসিন বিল্লাহ ইমন, ক্রীড়া সম্পাদক পদে মুহাইমেনুল ইসলাম তকি, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক পদে রাশেদ খান আদিব, সমাজসেবা সম্পাদক পদে মো. ফাইজুল্লাহ এবং স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক পদে মেহেরিন আফরোজ মাইশাকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।
এ ছাড়া, সদস্য পদে মো. গিয়াস উদ্দিন, রাহাত সিকদার, বায়েজিদ হাসান, মো. আব্দুল বাছিত, মো. মোফাজ্জল হোসেন, মনির হোসেন, মো. আবুতালেব (ইফতি), আবরার জারিফ, সাব্বির উদ্দিন রিয়ন, মো. খালেদ সাইফুল্লাহ জিহাদ ভূঞাঁ, মো. আকাশ শাহ, মো. ইসমাইল হোসেন ও মাসুম বিল্লাহকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
এখনও প্যানেল ঘোষণা করতে পারেননি উমামা ফাতেমা: (ভিপি) পদে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা উমাম প্যানেলের নাম ঘোষণা করলেও বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় অপরাজেয় বাংলার সামনে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করা হবে জানান তিনি। জানা গেছে, বিভিন্ন বিভাগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে প্যানেল গড়তে যাচ্ছেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সম্মুখ সারির নেত্রী উমামা।
২৮ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ প্যানেলের মনোনয়ন জমা ছাত্রশিবিরের : সবার আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’। মঙ্গলবার মনোনয়নপত্র জমা দেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। তাদের ভিপি পদপ্রার্থী মো. আবু সাদিক কায়েম-জিএস প্রার্থী ফরহাদ হোসেন। শিবির বলে, জুলাই বিপ্লবের আকাক্সক্ষার আলোকে আমরা শিগগিরই শিক্ষার্থীদের সামনে আমাদের ইশতেহার প্রকাশ করব।
গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের প্যানেলের ঘোষণা : বামপন্থী ছাত্র সংগঠন ও প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে গঠিত ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’ মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে তাদের পূর্ণাঙ্গ ২৮ সদস্যর প্যানেল ঘোষণা করেন। বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মো. জাবির আহমেদ জুবেল প্যানেলে সহসভাপতি পদে শেখ তাসনিম আফরোজ (ইমি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে মেঘমল্লার বসু এবং সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে জাবির আহমেদ জুবেলকে প্রার্থী করা হয়েছে। প্রতিরোধ পর্ষদ প্যানেলে ১২ জন নারী, তিনজন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও একজন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
‘ডিইউ ফার্স্ট’ নামে স্বতন্ত্র প্যানেল এনসিপি নেতা মাহিনের নেতৃত্বে : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি নেতা মাহিন সরকারকে সঙ্গে নিয়ে ‘ডিইউ ফার্স্ট’ প্যানেল নামে স্বতন্ত্র প্যানেল থেকে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে জামালুদ্দীন মুহাম্মাদ খালিদ, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে মো. মাহিন সরকার লড়বেন। এ ছাড়া, সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে (এজিএস) পদে লক্ষ্মীপুর জেলা ছাত্রছাত্রী কল্যাণ সমিতির সভাপতি ফাতেহা শারমিন এ্যানি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
উমামা ফাতেমার নেতৃত্বে স্বতন্ত্র প্যানেল: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমার নেতৃত্বে স্বতন্ত্র প্যানেলে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে উমামা ফাতেমা, সাধারণ সম্পাদক জিএস পদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি আল সাদী ভূইয়া, এজিএস পদে সাংবাদিক সমিতির বর্তমান সভাপতি মহিউদ্দিন মুজাহিদ মাহী লড়বেন।
‘ডাকসু ফর চেঞ্জ’ প্যানেলে ছাত্র অধিকার পরিষদ : ‘ডাকসু ফর চেঞ্জ’ প্যানেলে ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি (ভিপি) এবং সাবিনা ইয়াসমিন সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে, সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে লড়বেন ঢাবি শাখার সদস্য সচিব রাকিবুল ইসলাম। প্যানেলের অন্যান্য সম্পাদক পদে রয়েছেন- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে মোহাম্মদ শাকিব খান, সমাজসেবা সম্পাদক পদে আরিফুর রহমান মজুমদার, ক্রীড়া সম্পাদক মুক্তার হোসেন, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক আশিক হৃদয় আহমেদ, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক পদে রাকিব হোসেন, মানবাধিকার ও আইন সম্পাদক ইশতিয়াক আহমেদ, গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক সিয়াম ইমন, ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক মোহাম্মদ রজবসালার খান শাওন। এছাড়া সদস্য পদে রাহাত, রেজুয়ান, মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আহমেদ, কৌষিক আদির, আব্দুল্লাহ আল নোমান, রাকিবুল আলম রুদ্র, মোফাচ্ছেল হক ও এইচএম মাহতাব ইসলাম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের পূর্ণাঙ্গ প্যানেলে নির্বাচন : ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি ইয়াসিন আরাফাত নির্বাচনে ভিপি পদে লড়বেন। আর জিএস পদে লড়বেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক খায়রুল আহসান মারজান।
বামপন্থী তিন সংগঠনের নেতৃত্বে প্যানেল : বামপন্থী সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ-বিসিএল সমর্থিত একটি প্যানেল ডাকসুতে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছে। এতে ভিপি পদে নাঈম হাসান হৃদয়, জিএস পদে এনামুল হাসান অনয় এবং এজিএস পদে অদিতি ইসলাম লড়বেন। তবে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ও প্যানেলের নাম এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
জুবায়ের-মোসাদ্দেকদের আংশিক স্বতন্ত্র প্যানেল : নির্বাচনেস্বতন্ত্র প্যানেল ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখ্য সমন্বয়ক এ বি জুবায়ের ও জুলাই ঐক্যের সংগঠক মোসাদ্দেক আলী ইবনে মুহাম্মদ। জুবায়ের সমাজসেবা সম্পাদক পদে এবং মোসাদ্দেক সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক পদে।
ভোরের আকাশ/এসএইচ