× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বাংলাদেশের আইন এবং সংবিধানে পরিবর্তন ও সংযোজন

রাশেদুল হক রঞ্জন

প্রকাশ : ০৮ মে ২০২৫ ০৫:২০ পিএম

বাংলাদেশের আইন এবং সংবিধানে পরিবর্তন ও সংযোজন

বাংলাদেশের আইন এবং সংবিধানে পরিবর্তন ও সংযোজন

বাংলাদেশের আইনি ও সাংবিধানিক কাঠামোকে “পর্ব ১ - বাংলাদেশে সমাজতান্ত্রিক আদর্শের বিকাশ এবং এর প্রভাব: একটি উদার গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার পথে অগ্রযাত্রা, এবং প্রকৃত গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য যে সকল প্রতিবন্ধকতাসমূহ অতিক্রম করা প্রয়োজনীয়” শীর্ষক প্রবন্ধে বর্ণিত দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে, একটি সমন্বিত সাংবিধানিক সংশোধন এবং আইনগত সংস্কার প্রয়োজন। এই পরিবর্তনগুলোর লক্ষ্য হলো গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা, ধর্মনিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা এবং জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করা।

নিচে সংস্কারগুলির জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তাবনাসমূহ বিস্তারিত এবং কালক্রমিক আকারে প্রদান করা হল:

১. গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহের শক্তিশালীকরণ এবং নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কার
অনুচ্ছেদ ৫৬ [মন্ত্রীগন]: কার্যকাল সীমিতকরণ এবং ক্ষমতার ভারসাম্যের উন্নয়ন  অনুচ্ছেদ ৫৬ সংশোধন করে প্রধানমন্ত্রীর এবং রাষ্ট্রপতির মেয়াদকাল সীমিত করা। নির্বাহী, আইন প্রণয়নকারী এবং বিচার বিভাগীয় শাখার মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার জন্য শক্তিশালী ব্যবস্থা প্রবর্তন করা, যাতে ক্ষমতার এককেন্দ্রীকরণ রোধ করা যায় এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়।

অনুচ্ছেদ ৫৭ [প্রধানমন্ত্রীর পদের মেয়াদ]: নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা বৃদ্ধি অনুচ্ছেদ ৫৭-এ নির্বাচন কমিশনকে অধিক ক্ষমতা ও স্বাধীনতা প্রদান করে আরও শক্তিশালী করা। এর মধ্যে রয়েছে নির্বাচনী অর্থায়ন ও রাজনৈতিক দলগুলির অর্থায়নের জন্য স্পষ্ট নির্দেশিকা, যাতে অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিত করা যায়।

অনুচ্ছেদ ৫৯ [স্থানীয় শাসন] এবং ৬০ [স্থানীয় শাসন-সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতা]: স্থানীয়  সরকারকে শক্তিশালীকরণ অনুচ্ছেদ ৫৯ এবং ৬০ সংশোধন করে স্থানীয় সরকারকে আরও কর্তৃত্ব ও সম্পদ প্রদানের ব্যবস্থা করা। এই বিকেন্দ্রীকরণ সরকারি কার্যক্রমে নাগরিকদের অংশগ্রহণ বাড়াবে এবং জাতীয় পর্যায়ে ক্ষমতার এককেন্দ্রীকরণ কমাবে। 

ধারা ৬৫ [সংসদ-প্রতিষ্ঠা]: আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থায় রূপান্তর ধারা ৬৫ সংশোধন করে বর্তমানে প্রচলিত First-Past-The-Post (FPTP)  বা বিজয়ীর সমস্ত পাওয়া (বিসপা, যা ইংরেজিতে Winner Takes All পদ্ধতির পরিবর্তে সংসদের সদস্যদের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা Proportional Representation (PR) ব্যবস্থার ভিত্তিতে নির্বাচন করা। এই সংশোধনীতে প্রতিটি দলের প্রাপ্ত ভোটের অনুপাত অনুযায়ী আসন বরাদ্দের পদ্ধতিটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

ধারা ৬৬ [সংসদে নির্বাচিত হইবার যোগ্যতা ও অযোগ্যতা]: আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থার প্রতিফলন ধারাটিতে উল্লেখিত যোগ্যতার অন্যান্য মানদণ্ড অপরিবর্তিত রেখে, ধারা ৬৬ সংশোধন করে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থার ভিত্তিতে নির্বাচন পরিচালনার উল্লেখ করা, যাতে যোগ্যতার মানদণ্ড একটি আনুপাতিক নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে প্রযোজ্য হয়।

ধারা ১১৯ [নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব]: আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বাস্তবায়ন ধারা ১১৯ সংশোধন করে নির্বাচন কমিশনকে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থার ভিত্তিতে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব প্রদান করা। এই সংশোধনীতে কিভাবে ভোট গণনা করা হবে, কিভাবে আসন বরাদ্দ করা হবে এবং আনুপাতিক বরাদ্দ সংক্রান্ত বিরোধগুলো কিভাবে সমাধান করা হবে তার নির্দেশাবলী অন্তর্ভুক্ত করা।

ধারা ১২২ [ভোটার তালিকায় নামভুক্তির যোগ্যতা]: আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব সহায়ক ধারা ধারা ১২২-এ সংশোধনী যুক্ত করে নিশ্চিত করা যেতে পারে যে ভোটার নিবন্ধন প্রক্রিয়া ও ভোটদান পদ্ধতিগুলি আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা বাস্তবায়নকে সহায়তা করে।

ধারা ১২৩ [নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময়]: নির্বাচন সময়সূচী অভিযোজন ধারা ১২৩ সংশোধন করে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থার অধীনে নির্বাচন পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সময়সূচী ও প্রক্রিয়াগুলি প্রতিফলিত করা, যার মধ্যে দীর্ঘতর বা আরও জটিল গণনা প্রক্রিয়ার প্রয়োজন হতে পারে।

ধারা ১২৫ [নির্বাচনী আইন ও নির্বাচনের বৈধতা]: আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন ধারা ১২৫ সংশোধন করে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থার অধীনে নির্বাচন পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন অন্তর্ভুক্ত করা, যার মধ্যে দলীয় তালিকা তৈরির প্রক্রিয়া, ভোট গণনা পদ্ধতি এবং আসন বরাদ্দের সূত্র অন্তর্ভুক্ত রাখা।

আইনগত পরিবর্তনসমূহ নির্বাচনী আইন সংস্কার নির্বাচনী আইনে ব্যাপক সংশোধন প্রবর্তন করে মুক্ত, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিত করা। এর মধ্যে একটি স্বাধীন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা গঠন অন্তর্ভুক্ত, যার শক্তিশালী ক্ষমতা থাকবে নির্বাচনী স্বচ্ছতা রক্ষা এবং নির্বাচন সম্পর্কিত বিরোধ নিষ্পত্তিতে কার্যকর ভূমিকা রাখার।

রাজনৈতিক দল নিয়ন্ত্রণ রাজনৈতিক দলগুলিকে গণতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত হতে বাধ্য করার জন্য আইন প্রয়োগ করা। এর মধ্যে দলীয় অভ্যন্তরীণ নির্বাচন স্বচ্ছভাবে পরিচালনা, আর্থিক জবাবদিহিতা এবং দলের মধ্যে স্বৈরাচারী প্রবণতা প্রতিরোধের ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত রাখা।

বিশেষ পরিবর্তনসমূহ অনুচ্ছেদ ১১৯ [নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব] এবং ১২০ [নির্বাচন কমিশনের কর্মচারীগণ]: স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহকে শক্তিশালী করার জন্য সংবিধান সংশোধন করা, যাতে স্থানীয় পর্যায়ে অধিকতর স্বায়ত্তশাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা যায় এবং জাতীয় পর্যায়ে ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ হ্রাস করা যায়।
অনুচ্ছেদ ৭০ [পদত্যাগ ইত্যাদি কারণে আসন শূন্য হওয়া]: এমপিদের দলীয় সীমাবদ্ধতার বাইরে নিজের বিবেক অনুযায়ী ভোট প্রদান করার সুযোগ রেখে সংবিধান সংশোধন করা, যাতে দলীয় আধিপত্য কমে।

২. মিথ্যা তথ্যের মোকাবিলা এবং সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা
অনুচ্ছেদ ৩৯ [চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাক্-স্বাধীনতা]: গণমাধ্যমের স্বাধীনতার স্পষ্ট  সুরক্ষা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে অনুচ্ছেদ ৩৯ সংশোধন করা। সাংবাদিকদের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং তাদের হয়রানি ও সহিংসতা থেকে রক্ষা করার জন্য আইন প্রয়োগ করা।

তথ্যের স্বচ্ছতা এবং নিয়ন্ত্রণ সরকারি কার্যক্রমগুলিতে যোগাযোগের ক্ষেত্রে তথ্যের সত্যতা এবং স্বচ্ছতা বাধ্যতামূলক করতে অনুচ্ছেদ ৩৯-এ বিধান সংযোজন করা। একটি স্বাধীন সংস্থা প্রতিষ্ঠা করা যা গণমাধ্যমের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করবে, যাতে সঠিক ও নিরপেক্ষ তথ্য প্রচার নিশ্চিত হয়।

আইনগত পরিবর্তনসমূহ তথ্য অধিকার আইন শক্তিশালীকরণ তথ্য অধিকার আইন (২০০৯) শক্তিশালী করা যাতে সরকারি তথ্য আরও সহজলভ্য হয়। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সরকারি কর্মকর্তাদের অসহযোগিতা এবং তথ্যের অসঙ্গতি রোধে কঠোর শাস্তির বিধান প্রবর্তন করা।

ডিজিটাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ মিথ্যা তথ্যের বিরুদ্ধে ভারসাম্যপূর্ণ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা, যাতে বাকস্বাধীনতা লঙ্ঘিত না হয়। প্রযুক্তিগত প্ল্যাটফর্মগুলোর সাথে সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে তথ্য প্রচারের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং ভুয়া খবরের বিরুদ্ধে আইনি কাঠামো তৈরি করা।

গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ আইন মিথ্যা তথ্য প্রচারের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন করা, কিন্তু একইসাথে বাকস্বাধীনতার সুরক্ষা নিশ্চিত করা। যাতে করে এই আইনগুলি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং অনুসন্ধানমূলক সাংবাদিকতাকে সমর্থন করে, সঠিক তথ্য প্রদান এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে।

৩. সাক্ষরতা হার বৃদ্ধি এবং শিক্ষা সংস্কার
অনুচ্ছেদ ১৭ [অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা]: শিক্ষার অধিকার জোরদারকরণ অনুচ্ছেদ ১৭ সংশোধন করে সর্বজনীন মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা। শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ে সজাগ অংশগ্রহণে সহায়তা করার জন্য সমালোচনামূলক চিন্তার দক্ষতা অর্জন, গণমাধ্যম জ্ঞানসম্পন্ন সচেতনতা বৃদ্ধি এবং নাগরিক শিক্ষা জোরদার করা। 

অনুচ্ছেদ ১৫ [মৌলিক প্রয়োজনের ব্যবস্থা]: শিক্ষা ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকার অনুচ্ছেদ ১৫ সংশোধন করে শিক্ষার সাথে সম্পর্কিত অর্থনৈতিক অধিকার সুনিশ্চিত করা। অর্থনৈতিক নীতিগুলি শিক্ষার ক্ষেত্রে সকলের প্রবেশাধিকার ও শিক্ষার উন্নত মান নিশ্চিতে সহযোগিতা করবে, যাতে বিভিন্ন অঞ্চল ও সামাজিক-অর্থনৈতিক গোষ্ঠীর মধ্যে শিক্ষাগত বৈষম্য দূরীভূত হয়।

আইনগত পরিবর্তনসমূহ শিক্ষা আইন মানসম্মত শিক্ষায় প্রবেশাধিকার, পাঠ্যক্রম সংস্কার এবং শিক্ষক প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিয়ে একটি সমন্বিত শিক্ষা আইন প্রণয়ন করা। শহর ও গ্রামীণ এলাকায় এবং বিভিন্ন সামাজিক-অর্থনৈতিক গোষ্ঠীর মধ্যে শিক্ষাগত ব্যবধান দূর করার ওপর জোর দেওয়া।

পাঠ্যক্রম সংস্কার আইন বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, মানবাধিকার এবং গণমাধ্যম জ্ঞান সচেতনতা বিষয়ক কোর্স অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আইন প্রণয়ন করা। এই সংস্কারগুলি শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমালোচনামূলক চিন্তা এবং নাগরিক অংশগ্রহণ বিকাশের লক্ষ্যে গৃহীত হবে।

নীতিগত উদ্যোগ পাঠ্যক্রম পরিবর্তন শিক্ষা পাঠ্যক্রম সংশোধন করে সমালোচনামূলক চিন্তা, নাগরিক শিক্ষা এবং গণমাধ্যম জ্ঞানসম্পন্ন হওয়ার উপর জোর দেওয়া। শিক্ষার জন্য ব্যবহৃত সরঞ্জামাদির সরবরাহ ও সম্পদের উপর সকল অঞ্চলের সকল শিক্ষার্থীদের সমান অধিকার নিশ্চিত করা। শিক্ষাঙগণে আকর্ষণীয় শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করা। প্রতিটি শিক্ষার্থীকে তার নাগরিক অধিকার সম্পর্কে সচেতন করার লক্ষ্যে শিক্ষা পাঠ্যক্রমে ‘বাংলাদেশের সংবিধান’কে বাধ্যতামূলকভাবে সংযোজিত করা।

শিক্ষক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শিক্ষার মান উন্নত করার জন্য শিক্ষক প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে বিনিয়োগ করা। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমালোচনামূলক চিন্তা এবং নাগরিক অংশগ্রহণকে উন্নত ও উৎসাহিত করার জন্য শিক্ষকদের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়া।

৪. অর্থনৈতিক সংস্কার এবং সামাজিক ন্যায্যতা
অনুচ্ছেদ ১৫ [মৌলিক প্রয়োজনের ব্যবস্থা]: অর্থনৈতিক ন্যায়বিচারের অন্তর্ভুক্তি অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার এবং সাম্যতার নীতিগুলি অন্তর্ভুক্ত করতে অনুচ্ছেদ ১৫ সংশোধন করা। অর্থনৈতিক নীতিমালাগুলি আয়ের বৈষম্য মোকাবিলা করবে এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করবে, যাতে সামাজিক কল্যাণকে একটি সাংবিধানিক অধিকার হিসাবে নিশ্চিত করা যায়।

আইনগত পরিবর্তনসমূহ প্রগতিশীল কর আইন অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাসের লক্ষ্যে প্রগতিশীল কর আইন প্রণয়ন করা। এই আইনের মাধ্যমে ধনী ব্যক্তি এবং কর্পোরেশন থেকে কর রাজস্ব বৃদ্ধি করে জনসেবা এবং সামাজিক কল্যাণমূলক কর্মসূচিতে ব্যয় করা।

সামাজিক কল্যাণ আইন স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং সামাজিক সুরক্ষার জন্য সামাজিক কল্যাণ কর্মসূচি সম্প্রসারণে আইন প্রণয়ন করা। কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য লক্ষ্যভিত্তিক অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহন করা।

নীতিগত উদ্যোগসমূহ সামাজিক কল্যাণ কর্মসূচির সম্প্রসারণ প্রান্তিক এবং অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর জন্য স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং সামাজিক সুরক্ষার মতো সামগ্রিক সহায়তা প্রদান নিশ্চিত করার মাধ্যমে সামাজিক কল্যাণমূলক কর্মসূচির সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ নিশ্চিত করা। এতে প্রগতিশীল কর ব্যবস্থা এবং লক্ষ্যভিত্তিক অর্থনৈতিক সহায়তা উদ্যোগের বাস্তবায়ন অন্তর্ভুক্ত রাখা।

৫. দুর্নীতি দমন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ
দুর্নীতি দমন সংস্থার ক্ষমতাবৃদ্ধি দুর্নীতি দমন সংস্থার ক্ষমতা ও স্বাধীনতা বৃদ্ধি করতে হবে। এসব সংস্থাকে দুর্নীতি প্রতিরোধে কার্যকরী তদন্ত ও বিচার কার্য সম্পাদনের জন্য আরও অধিক ক্ষমতা, সম্পদ, এবং সুরক্ষা প্রদান করা।

স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার বাধ্যবাধকতা সরকারি কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করা। সরকারী ব্যয় ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া নিয়মিতভাবে জনগণের কাছে প্রকাশ করা বাধ্যতামূলক করা।

আইনগত পরিবর্তনসমূহ দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ক্ষমতা বৃদ্ধি দুর্নীতি দমন কমিশন আইনকে আরও শক্তিশালী করা, কমিশনকে আরও স্বায়ত্তশাসন ও সম্পদ প্রদান করা। দুর্নীতি প্রতিরোধে তদন্ত ও বিচার কার্যক্রমের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা। 
দুর্নীতি ও অনিয়ম উন্মোচনকারী ব্যক্তিদের সুরক্ষা আইন সরকারি ও বেসরকারি খাতে দুর্নীতি ও অনিয়ম উন্মোচনকারী ব্যক্তিদের সুরক্ষার জন্য আইন প্রণয়ন করা। দুর্নীতির প্রতিবেদনকারীদের জন্য আইনগত সুরক্ষা ও সহায়তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।

স্বচ্ছতা আইন সরকারি কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে বিদ্যমান আইনগুলোর সংশোধন করতে হবে। এতে তথ্য উম্মুক্তকরন উদ্যোগ এবং সরকারী নথিতে উল্লেখিত তথ্য জনগণের জানার অধিকারের অন্তর্ভুক্ত করা, যা সরকারি প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে।
 

৬. ধর্মনিরপেক্ষতা ও সামাজিক সংহতি বৃদ্ধি
ধারা ২ক [রাষ্ট্রধর্ম] এবং ধারা ১২ [ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা]: ধর্মনিরপেক্ষতার পুনঃপ্রতিষ্ঠা ধারা ২ক সংশোধন করে ধর্মনিরপেক্ষতার ওপর আরও জোর দিতে হবে, যাতে যে কোনো ধরনের ধর্মীয় বৈষম্য নিষিদ্ধ হয়। ধর্মনিরপেক্ষতা ও সহনশীলতার অঙ্গীকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে বাংলাদেশের সকল নাগরিকের ধর্মীয় পরিচয় নির্বিশেষে সমান অধিকার নিশ্চিত করা।

আইনগত পরিবর্তনসমূহ বিদ্বেষী ভাষণ আইন ধর্ম, জাতিসত্তা বা সাংস্কৃতিক পরিচয়ের ভিত্তিতে প্রতিদ্বন্দ্বী-বিদ্বেষী ভাষণ এবং সহিংসতা উস্কানির বিরুদ্ধে বিশেষ আইন প্রণয়ন করা। এ আইনের মাধ্যমে ভুক্তভোগীদের জন্য আইনগত প্রতিকার এবং সামাজিক সংহতি উন্নত করা।

বৈষম্য বিরোধী আইন ধর্ম, জাতিসত্তা, লিঙ্গ এবং অর্থনৈতিক অবস্থার ভিত্তিতে বৈষম্য রোধে আইন প্রণয়ন করা। সকল নাগরিককে বৈষম্যমূলক কার্যকলাপ থেকে সুরক্ষা দেয়ার মাধ্যমে সমতা ও সামাজিক সংহতি নিশ্চিত করা।

নীতিগত উদ্যোগসমূহ জনসচেতনতামূলক প্রচারণা  সরকার এবং এনজিও দ্বারা পরিচালিত প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে সমাজের সকল স্তরে সহনশীলতা, দেশের বৈচিত্রময় সমাজ সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা এবং ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধ নিশ্চিত করা। এই প্রচারণার লক্ষ্য হবে পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সংস্কৃতি গড়ে তোলা।

৭. গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণে প্রযুক্তির ব্যবহার 

প্রযুক্তিগত অংশগ্রহণের অন্তর্ভুক্তি  জনসাধারণের প্রযুক্তিগতভাবে পরামর্শ প্রদান এবং প্রযুক্তি-সক্ষম অংশগ্রহণের লক্ষ্যে আইনি ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করা। সরকারি সেবাসমূহ প্রদান ও গ্রহনের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধিতে প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা।

আইনগত পরিবর্তনসমূহ প্রযুক্তিগত শাসন আইন ভোটিং, জনমত গ্রহণ এবং জনসম্পৃক্ততার জন্য প্রযুক্তিগত বা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মসমূহের বাস্তবায়ন এবং ব্যবহারের জন্য আইনি নির্দেশিকা প্রণয়ন করা। সরকারি সেবায় প্রযুক্তির ব্যবহার উৎসাহিত করা যাতে শাসনব্যবস্থা আরও স্বচ্ছ এবং সকলের জন্য সহজলভ্য হয়।

তথ্য সুরক্ষা আইন গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণে প্রযুক্তির ব্যবহারকে উৎসাহিত করার সময় নাগরিকদের তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষার জন্য ব্যাপক তথ্য সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা। নিশ্চিত করতে হবে যে, শাসন ব্যবস্থায় প্রযুক্তিগত উদ্যোগসমূহ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা ও সম্মান বজায় থাকে।

নীতিগত উদ্যোগসমূহ  ই-শাসন নীতিসমূহ শাসনব্যবস্থায় প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার পৃষ্ঠপোষণের জন্য নীতি প্রণয়ন করা, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে অনলাইন পরামর্শমূলক প্ল্যাটফর্মসমূহ, ডিজিটাল ভোটিং ব্যবস্থা এবং প্রযুক্তিগত সম্পৃক্ততায় ব্যবহৃত অন্যান্য সরঞ্জামসমূহের সমন্বিত ব্যবহার। এই ব্যবস্থার উদ্দেশ্য প্রযুক্তিগত ব্যবহারের মাধ্যমে সরকারী কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং সরকারী সেবাসমূহের সহজলভ্যতা বৃদ্ধি করা।

সরকারি শাসনকার্যে প্রযুক্তিগত বা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মসমূহের ব্যবহার সরকারি শাসনকার্যে নাগরিক সম্পৃক্ততা বাড়ানোর জন্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা এবং বাস্তবায়ন করা। এতে অন্তর্ভুক্ত থাকবে অনলাইন ভোটিং সিস্টেম, ডিজিটাল টাউন হল এবং জনপরামর্শমূলক প্ল্যাটফর্মসমূহ যা নাগরিকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে।

নাগরিক পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়া সরকারি কর্মকাণ্ডের উপর নাগরিআদের পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠা করা, যেমন জনসাধারণের অডিট কমিটি এবং স্বচ্ছতার প্ল্যাটফর্ম। সরকারী কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ এবং মূল্যায়নে জনগণের সম্পৃক্ততা উৎসাহিত করা।

৮. মানবাধিকার এবং মৌলিক স্বাধীনতা
ধারা ৩২ [জীবন ও ব্যক্তি স্বাধীনতার অধিকার]: ব্যক্তিগত স্বাধীনতার সুরক্ষা বৃদ্ধি ধারা ৩২ সংশোধন করে ব্যক্তিগত স্বাধীনতার সুরক্ষা বাড়ানো। সমস্ত আইনকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার মাধ্যমে নাগরিকদের স্বাধীনতা এবং স্বাধিকার রক্ষা নিশ্চিত করা।
ধারা ২৩ক [আদিবাসী, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, উপজাতি ও সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি]/ধারা ১৯ [সুযোগের সমতা]: সংখ্যালঘু অধিকার সুরক্ষা ধারা ২৩ক/১৯ -এ সংশোধনী অন্তর্ভুক্ত করে জাতিগত, ধর্মীয় এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষার ব্যবস্থা করা। সরকারে এবং সকল ধরনের সরকারি কার্যক্রমে সকলের সমান সুযোগ ও প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা, যাতে সকলের অন্তর্ভুক্তি এবং বৈচিত্র্য প্রাধান্য পায়।

আইনগত পরিবর্তনসমূহ সংখ্যালঘু অধিকার সুরক্ষা আইন জাতিগত, ধর্মীয় এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের অধিকার সুরক্ষায় নির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করা। এসব আইন বৈষম্য রোধে সকলের সমান সুযোগ ও প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত করা।
মানবাধিকার আইন আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিস্তৃত মানবাধিকার আইন প্রণয়ন করা। এই আইনগুলো বিস্তৃত পরিসরে অন্তর্ভুক্ত করা যাতে সকলের নাগরিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক অধিকারের সুরক্ষা এবং প্রয়োগ নিশ্চিত হয়।

পরিশেষে
পরিশেষে বলা যায়, উপরে উল্লিখিত সংবিধানিক এবং আইনগত সংস্কারগুলি বাংলাদেশের আইন কাঠামোকে একটি উদার গণতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিক নীতির ভিত্তিতে গঠিত সমাজের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার জন্য অপরিহার্য। এই সংস্কারগুলির লক্ষ্য একটি শাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা, যা অন্তর্ভুক্তিমূলক, স্বচ্ছ, জবাবদিহিতামূলক এবং সামাজিক সমতার উপর প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই পরিবর্তনগুলি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ এমন একটি ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর হতে পারে, যেখানে সরকার সত্যিকার অর্থে জনগণের ইচ্ছার প্রতিনিধিত্ব করে এবং সকল নাগরিকের জন্য ন্যায়বিচার, সমতা এবং স্বাধীনতা নিশ্চিত করে। এই সংস্কারগুলি বাস্তবায়নের জন্য সমাজের সকল ক্ষেত্র থেকে সমর্থনপ্রাপ্ত এবং সকলের দ্বারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ একটি স্থায়ী এবং বিস্তৃত পদ্ধতি গ্রহণ করা প্রয়োজন, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এই সকল সংবিধান সংশোধন, আইন প্রণয়ন এবং নীতিগত উদ্যোগসমূহ।

প্রতিষ্ঠানিক গণতন্ত্র, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, শিক্ষাগত সংস্কার, অর্থনৈতিক সমতা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই, ধর্মনিরপেক্ষতা, প্রযুক্তিগত অংশগ্রহণ এবং মানবাধিকারের ক্ষেত্রগুলি পদ্ধতিগতভাবে মোকাবিলা করার মাধ্যমে বাংলাদেশ সত্যিকারের গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য বিদ্যমান বাধাগুলি অতিক্রম করতে পারে। উল্লিখিত এই সামগ্রিক পদ্ধতি নিশ্চিত করে যে শাসন ব্যবস্থা কেবল জনগণের ইচ্ছাকে প্রতিফলিত করে না, বরং গণতন্ত্র, সমতা এবং ন্যায়বিচারের মৌলিক নীতিগুলোকেও রক্ষা করে।

 

Writer (লেখক):

রাশেদুল হক রঞ্জন

Phone: +88-01918180309 (WhatsApp) 

LinkedIn: https://www.linkedin.com/in/rashedul-haque-ronjon

Email: rashedul.haque.ronjon@outlook.com

 

  • শেয়ার করুন-
 সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা আরও দুই মাস বাড়ল

সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা আরও দুই মাস বাড়ল

 স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম

 চরফ্যাশনে রেড ক্রিসেন্ট দিবস পালিত

চরফ্যাশনে রেড ক্রিসেন্ট দিবস পালিত

সংশ্লিষ্ট

বাংলাদেশের আইন এবং সংবিধানে পরিবর্তন ও সংযোজন

বাংলাদেশের আইন এবং সংবিধানে পরিবর্তন ও সংযোজন

বাংলাদেশে সমাজতান্ত্রিক আদর্শের বিকাশ এবং এর প্রভাব

বাংলাদেশে সমাজতান্ত্রিক আদর্শের বিকাশ এবং এর প্রভাব

প্রজন্ম জেড-ই গণতন্ত্র রক্ষা করবে

প্রজন্ম জেড-ই গণতন্ত্র রক্ষা করবে

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের এক অনন্য পরিচয়

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের এক অনন্য পরিচয়