সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের এক অনন্য পরিচয়

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের এক অনন্য পরিচয়

এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু

প্রকাশ : ২ দিন আগে

আপডেট : ২ দিন আগে

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের এক অনন্য পরিচয়

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের এক অনন্য পরিচয়

বাাংলাদেশের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং জাতিগত সম্প্রীতি সারা বিশ্বে এক অন্যন্য উদাহরণ হয়ে আছে। মুসলমানদের পাশাপাশি এখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হিন্দু, খ্রিস্টান এবং বৌদ্ধ সম্প্রদায়ও বাস করে। ঐতিহাসিক কাল থেকে দেশটি প্রশংসনীয় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখেছে, যা শান্তি রক্ষা এবং দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঐতিহাসিকভাবে বৃহত্তর বঙ্গীয় অঞ্চলের অংশ হিসেবে, বাংলাদেশ বিভিন্ন ধর্ম এবং সংস্কৃতির একটি মিলনস্থল। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে হিন্দু ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম, খ্রিস্টান ধর্ম এবং ইসলাম ধর্ম একসঙ্গে সহাবস্থান করেছে, একে অপরকে প্রভাবিত করে একটি সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য গঠনে অবদান রেখেছে। এই ধর্মীয় ঐতিহ্যের সংমিশ্রণ বাংলা ভাষা, সাহিত্য, সংগীত এবং উৎসবগুলোতে প্রতিফলিত হয়েছে। আমাদের এই বাংলাদেশের জনগণ কখনোই নিজেদের মধ্যে শ্রদ্ধা ও স্নেহের বন্ধনকে উপেক্ষা করেনি।

ব্রিটিশ নীতির কারণে ভারত বর্ষের কোন কোন খানে কখনো কখনো জাতিগত উত্তেজনা দেখা দিয়েছে, কিন্তু আমাদের পূর্ব পুরুষগণ কখনোই সে হাওয়ায় গা লাগাননি। বরং প্রতিটি অনাকাক্সিক্ষত সময়ে এদেশের সকল শ্রেণি, ধর্ম পেশার মানুষ এক হয়ে গেছে। আমরা কখনোই আমাদের সমাজকে জাতিগত বিভেদে বিভক্ত করিনি। এটাই আমাদের দেশ। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি সব সময় দেশর সকল জাতিগোষ্ঠীকে এক কাতারেই শুধু রাখার চেষ্টা করেনি। বরং সব সময় সবা পাশে থকোর চেষ্টা করেছে। মনে রাখা দরকার ২০০৮-২০২৪ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের শাসন আমলে নাটোর কারু-কাঞ্চন জুয়েলার্সে দুইবার ডাকাতি হয়েছে। যমুনা জয়েলার্সে হামলা ও ডাকাতি হয়েছে।

হিন্দুদের ওপর হামলা, নির্যাতন, নিপীড়ন, জমি দখল, বাড়ি দখল, পুকুর দখল সব হয়েছে আওয়ামী লীগের আমলে। সবচেয়ে স্বর্ণযুগ ছিল বিএনপির শাসন আমলে। ১৯৯২ সালে বিএনপির ক্ষমতা থাকা অবস্থায় বাবরি মসজিদে হামলা হয়েছিল। সে সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের পাশে থেকে দিন-রাত নিরাপত্তা দিয়েছে। ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল সে সময় নাটোরের হিন্দুদের শরীরের একটি আঁচড়ও পড়েনি। নাটোরের হিন্দু ভাই-বোনেরা স্বর্ণালী সময় কাটিয়েছে। ২০০৮-২০২৪ সাল পর্যন্ত হিন্দুরা কষ্টে দিন পার করেছে। এ সময় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরা নিরাপত্তাহীনতায় থাকে।

বেগম খালেদা জিয়া ও দেশনায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্বে আপনাদের পাশে থেকে সকল কর্মকাণ্ডকে সহযোগিতা করবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিটি কর্মী সমর্থক নেতা। এ দেশ আমাদের। যার যার সে সে ধর্ম পালন করবে। আমাদের মধ্য কোনো ভেদাভেদ নেই, আমরা সবাই ভাই ভাই।৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতনের পর বিএনপির নেতাকর্মীরা হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের পাশে থেকে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে। রাত জেগে তাদের বাড়ি পাহারা দিয়েছে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রাম ১৯৭১ সালে স্ব-নিয়ন্ত্রণ, ভাষাগত অধিকার এবং সাংস্কৃতিক স্বীকৃতির আকাক্সক্ষা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিল।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ধর্মীয় বিভাজনকে অতিক্রম করে সমতার নীতির ভিত্তিতে লড়াই করা হয়েছিল। যার পরিপ্রেক্ষিতে বহু ত্যাগের বিনিময়ে গঠিত নতুন জাতি একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়, যার সংবিধান সব নাগরিকের জন্য ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সমান অধিকার নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। বাংলাদেশে বর্তমানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অবস্থা সাংস্কৃতিক সংহতির মাধ্যমে চিহ্নিত করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, দুর্গাপূজা, ঈদ, বড়দিন এবং বুদ্ধ পূর্ণিমার মতো উৎসব উদযাপনে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে, যা পারস্পরিক শ্রদ্ধার প্রতিফলন। সরকার ধর্মনিরপেক্ষতা প্রচার এবং সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় পদক্ষেপ নিয়েছে, যেমন- ধর্মীয় উৎসবগুলোর সময় নিরাপত্তা প্রদান এবং ধর্মীয় স্থানগুলোর সংরক্ষণ।

এছাড়াও বিভিন্ন এনজিও এবং নাগরিক সমাজ আন্তর্ধমীয় সংলাপ প্রচার এবং সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় সবসময় সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। অর্থনৈতিক বৈষম্য অনেক সময় ক্ষোভের জন্ম দিতে পারে এবং সংঘাতের দিকে নিয়ে যেতে পারে। তাছাড়া গণমাধ্যমের বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকা দ্বিমুখী। এটি একদিকে যেমন- ঐক্যকে সুসংহত করতে পারে, তেমনি এটি দ্রুত ভুল তথ্য ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়াও আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব, বিশেষ করে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর ধর্মীয় চরমপন্থার প্রভাব, বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। এসব বিষয়ে আমরা সতর্ক রয়েছি। আমাদের নবী  মুহাম্মাদ (সা.)  বিভিন্ন ধর্মের ব্যক্তিদের প্রতি দয়া ও সম্মান প্রদর্শনের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। মদিনার সনদ এই প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক উদাহরণ।

এক হাদিসে নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন : ‘যে ব্যক্তি কোনো মুয়াহিদকে হত্যা করে (একজন অমুসলিম যার সঙ্গে মুসলমানদের চুক্তি আছে) সে জান্নাতের ঘ্রাণ পাবে না, যদিও তার সুগন্ধি চল্লিশ বছরের দূরত্বে পাওয়া যায়।’ (সহি বুখারি)। হাদিসটি অমুসলিমদের সুরক্ষা এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার গুরুত্বের ওপর জোর দেয়।

ম্যাথিউরের গসপেল (২২ : ৩৯), যিশু বলেছেন : ‘তুমি তোমার প্রতিবেশীকে নিজের মতো ভালোবাসবে।’ এই আদেশটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিষয়ে খ্রিস্টান শিক্ষার সারমর্মকে প্রকাশ করে। দেশের প্রেক্ষাপট এবং বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ কিছু কৌশলকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বিবেচনা করতে পারে, যা চলমান এবং টেকসই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি তার জনগণের শক্তির একটি সাক্ষ্য। চলমান চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি অঙ্গীকার এবং সংখ্যালঘুদের অধিকার সুরক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা সময়ের দাবি।

বাংলাদেশ যতই অগ্রসর এবং রূপান্তরিত হোক না কেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সমুন্নত রাখার  প্রতিশ্রুতিকে ধরে রাখা জরুরি যাতে দেশটি এই অঞ্চলে শান্তি এবং সহাবস্থানের একটি আদর্শ প্রতীক হিসাবে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করে। শিক্ষা, গণমাধ্যম এবং আন্তঃধর্মীয় সংলাপে টেকসই প্রচেষ্টার মাধ্যমে, বাংলাদেশ তার সমৃদ্ধ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্যের ওপর ভিত্তি করে একটি অধিকতর অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যতের পথ প্রশস্ত করুক এটাই আমাদের কাম্য।

                                                                                                                                                                                                                                                                                                             লেখক : আইনজীবী, সাবেক উপমন্ত্রী, বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতা

  • শেয়ার করুন-

সংশ্লিষ্ট

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের এক অনন্য পরিচয়

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের এক অনন্য পরিচয়

রুদ্ধ হতে পারে রাজনীতির পথ

রুদ্ধ হতে পারে রাজনীতির পথ

ধর্ষণের শাস্তি হোক মৃত্যুদণ্ড ও অঙ্গ কর্তন!

ধর্ষণের শাস্তি হোক মৃত্যুদণ্ড ও অঙ্গ কর্তন!

আ.লীগ থেকে কী শিক্ষা নেবে অন্য দলগুলো?

আ.লীগ থেকে কী শিক্ষা নেবে অন্য দলগুলো?

মন্তব্য করুন