শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় শেষ বিদায় নিলেন ডাকসুর নারী ভিপি মাহফুজা
শ্রদ্ধায়, ভালোবাসায় শেষ বিদায় জানানো হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ- ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহফুজা খানমকে। বুধবার (১৩ আগস্ট) ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে মাহফুজা খানমের দীর্ঘদিনের সহকর্মী, স্বজন, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সহযোদ্ধাসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ এসেছিলেন মাহফুজা খানমকে বিদায় জানাতে। শুরুতে ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গার্ড় অব অনার প্রদান করা হয়। বিউগলে বেজে ওঠে করুন সুর, পালন করা হয় নীরবতাও।ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে মাহফুজা খানমের স্মৃতি বিজড়িত সংগঠন খেলাঘর, ছাত্র ইউনিয়ন এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান এশিয়াটিক সোসাইটিসহ অনেক প্রতিষ্ঠান। এসেছিলেন রাজনীতিকরাও। তাদের ভাষ্য মাহফুজা খানম তার বিস্তৃত কাজের পরিধির মাধ্যমেই মানুষের মাঝে বেঁচে রইবেন।বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি প্রগতিশীল আন্দোলনে সামনের সারিতে থাকা এই মানুষটি সকল পক্ষের মানুষের আশ্রয় হয়ে ছিলেন বলেও জানিয়েছেন তার সতীর্থরা। গতকাল মঙ্গলবার সকালে অসুস্থবোধ করায় তাকে পান্থপথের হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তিনি ঢাকার ইন্দিরা রোডে স্বামী সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদের সঙ্গে থাকতেন। মাহফুজা-শফিক দম্পতির দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। বড় ছেলে ও মেয়ে পেশায় চিকিৎসক। ছোট ছেলে মাহবুব শফিক একজন আইনজীবী।শহীদ মিনারে মায়ের অবদান নিয়ে মাহবুব শফিক বলেন, ‘মা আমার বাবাকে সব সময় এগিয়ে দিয়েছেন, আমাদের এগিয়ে দিয়েছেন। মায়ের সহযোগিতা না পেলে বাবা কিংবা আমাদের এই অবস্থানটা হত না। বাবা যে আইনমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, তা মাকে ছাড়া সম্ভব হত না। আমরা ভাই-বোনেরা ডাক্তার হয়েছি ব্যারিস্টার হয়েছি, তা মায়ের জন্যই।’মাহফুজা খানমের ভাই মোস্তফা কামাল বলেন, ‘এখানে এসে প্রথম উপলব্ধি করলাম যে তিনি কত কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কত সংগঠন আর মানুষ তাকে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছে।’শ্রদ্ধা জানাতে এসে ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘মাহফুজা আপা এত বড় মহীরুহ ছিলেন যে তাঁকে নিয়ে বলা খুব কঠিন। তিনি আমাকে ভীষণ স্নেহ করতেন। তিনি আমাকে মায়ের মতো, বড় বোনের মতো স্নেহ করতেন। মাহফুজা আপার সামনাসামনি কখনো এভাবে বলিনি।’অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ মনে করেন মাহফুজা খানম বেঁচে থাকবেন মানুষের হৃদয়ে। তিনি বলেন, ‘আমরা কেউ তাকে এখানে শ্রদ্ধা জানাতে না আসলেও, তিনি অগণিত মানুষের মনে-হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন। এত বড় তার কাজের পরিধি, সেসব কাজের মধ্যেই তিনি বেঁচে থাকবেন।’বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘মাহফুজা খানম নানা পরিচয়ে উজ্জ্বল। তিনি পাকিস্তানি স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশেও প্রগতিশীল চর্চায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তিনি শিশু কিশোরদের সংগঠনেও নেতৃত্ব দিয়েছেন। আমি মনে করি জাতি তাকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে এবং নতুন প্রজন্ম তার থেকে শিক্ষা নিয়ে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ গঠনে ভূমিকা রাখবেন।’শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে- উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, কচিকাঁচার মেলা, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গেরিলা ১৯৭১, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, ঐক্য ন্যাপ, নারী প্রগতি সংঘ, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি, বাংলাদেশ জাসদ, গণফোরাম, গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি- ন্যাপ, শান্তি পরিষদ, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, বাংলাদেশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, গণসংগীত সমন্বয় পরিষদ, ক্ষেত মজুর সমিতি, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, ছাত্র ইউনিয়ন। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে মরদেহ নেওয়া হয় ডাকসু ভবনের সামনে। সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ডাকসুর সাবেক নেতা এবং বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের কর্মীরা।ভোরের আকাশ/এসএইচ