ইলিশ মাছ কেবলই স্বপ্ন : চড়া দামে ক্রেতার নাগালের বাইরে
রাজধানীতে সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। এমন দিনে ইলিশ খাওয়া বাঙালির কাছে দারুণ পছন্দের হলেও বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পর্যাপ্ত ইলিশ নেই। বড় ও মাঝারি আকারের ইলিশের দাম সাধারণ ক্রেতাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে। ফলে বিক্রেতারা হাঁকডাক দিলেও ক্রেতারা দর শুনে হতাশ হচ্ছেন। দরদাম করেও খুব একটা কিনতে পারছেন না।শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মুগদা এরিয়ার বাজার, শান্তিনগর, সেগুনবাগিচা বাজারে ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।বাজারভেদে এক কেজি বা তার বেশি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৬০০ থেকে ৩ হাজার টাকায়। আধা কেজির ইলিশ ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায়, ৬০০–৮৫০ গ্রামের ইলিশ ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে প্রতিকেজি জাটকা পাওয়া যাচ্ছে ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকায়।শান্তিনগর বাজারের মাছ বিক্রেতা সাইফুল আলম জানান, সাগরে বৈরী আবহাওয়া ও মৌসুম শেষের দিকে হওয়ায় জেলেরা পর্যাপ্ত মাছ পাচ্ছেন না। ফলে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়ে গেছে। রাজধানীর নিউমার্কেটের বিক্রেতা মানিকের ভাষায়, মৌসুম শেষের পথে, তাই ইলিশের জোগান আর বাড়বে না।মুগদায় বাজার করতে আসা মিলন বলেন, ‘এ বছর চড়া দামের কারণে বড় ইলিশ কেনা হয়নি। ভেবেছিলাম মৌসুম শেষে দাম কমবে, কিন্তু হয়নি। ৮৫০-৯০০ গ্রামের একটা ইলিশ ২২০০ টাকা চাইলো, আমি ২ হাজার বললাম—তবু দিল না।’আরেক ক্রেতা সেগুনবাগিচার মাহাদি অভিযোগ করেন, দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। তার মতে, সরকার দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আগামী বছরও বিক্রেতারা অজুহাত দেখিয়ে আরও বেশি দাম নেবে।এমন পরিস্থিতিতে আসন্ন দুর্গাপূজায় ভারতে ইলিশ রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্প্রতি এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করেছে।এ বছর রপ্তানির জন্য প্রতি কেজি ইলিশের ন্যূনতম দাম ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৫ মার্কিন ডলার বা প্রায় ১ হাজার ৫২৫ টাকা। কিন্তু ঢাকার বাজারে এই দামে এক কেজি সাইজের ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না।কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘ভরা মৌসুমে এমন দাম আগে দেখা যায়নি। এত দামে আমরা নিজেরাই খেতে পারছি না। এর মধ্যে রপ্তানি করলে ব্যবসায়ীরা আরও দাম বাড়াবে। অথচ সাধারণ মানুষের জন্য প্রাপ্যতা নিশ্চিত করাই সরকারের প্রথম দায়িত্ব ছিল।’ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, এবার ইলিশের দাম কেজিপ্রতি ৯০০ থেকে ২২০০ টাকার মধ্যে। গত বছর একই সময় এই দাম ছিল ৮০০ থেকে ১৬০০ টাকার মধ্যে।ভোরের আকাশ/মো.আ.
১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১১:৫৭ এএম
পাথরঘাটা বিএফডিসি মৎস্য ঘাটে ইলিশের প্রাচুর্য, মানুষের ঘরে শূন্যতা!
পাথরঘাটা বিএফডিসি মৎস্য ঘাটে ভরা মৌসুমে প্রতিদিন ট্রলারভর্তি টন টন ইলিশ উঠছে। ঘাটের পুরো এলাকা যেন মাছের সমুদ্র—পাইকাররা ঝুড়ি ভরে মাছ তুলে নিচ্ছেন এবং প্যাকেজিং শেষে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাচ্ছেন। কিন্তু এই প্রাচুর্যের মাঝে সাধারণ মানুষদের ঘরে ইলিশের দেখা মিলছে না। দাম এত বেশি যে নিম্ন আয়ের মানুষ এখন ইলিশ কিনে খেতে পারছে না। পাথরঘাটা বিএফডিসি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৎস্য বন্দর হিসেবে পরিচিত হলেও এখান থেকে শহরের ধনী মানুষদের কাছে ইলিশ যাচ্ছে, আর স্থানীয় সাধারণ মানুষদের ঘরে পৌঁছাচ্ছে না।রিকশাচালক হাবিব আক্ষেপ করে বলেন, “কবে যে ইলিশ খেয়েছি, এখন আর মনে পড়ে না। ছেলেমেয়েরা বিভিন্ন সময়ে ইলিশ খেতে চাইলেও আমাদের সাধ্য নেই। ইলিশ এখন বড়লোকের খাবার হয়ে গেছে, আমাদের জন্য নয়।” দিনমজুর আসাদ উদ্দিনও বলেন, “মাছ ঘাটে সহজলভ্য, কিন্তু আমাদের জন্য দূরস্বপ্ন। আমাদের ঘরে ইলিশ ওঠে না, তাই ছোট মাছ বা অন্যান্য খাবার দিয়েই দিন কাটাই।”পাথরঘাটা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী মন্তব্য করেছেন, “জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, বাজারে সিন্ডিকেট এবং অনিয়ন্ত্রিত ব্যবসার কারণে দাম নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। আমাদের ইচ্ছে থাকে মাছ সবাইকে সমান দামে পৌঁছে দিতে, কিন্তু বাস্তবতা তা সম্ভব করছে না। ফলে সাধারণ মানুষ ইলিশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।”অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ইলিশকে সত্যিকার অর্থে ‘জাতীয় মাছ’ হিসেবে ধরে রাখতে হলে ন্যায্যমূল্যে বিক্রির ব্যবস্থা, রেশনিং বা সীমিত রপ্তানি নীতি দ্রুত কার্যকর করা জরুরি। তা না হলে বাংলার গর্ব ইলিশ ধীরে ধীরে সাধারণ মানুষের হাতছাড়া হয়ে শুধু ধনীদের টেবিলে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বে এবং একদিন হয়তো কেবল জাদুঘরের প্রদর্শনীতে দেখা যাবে।ভোরের আকাশ/হ.র
০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১২:৫৯ এএম
দুর্গাপূজায় ইলিশ চেয়ে বাংলাদেশকে পশ্চিমবঙ্গের ব্যবসায়ীদের চিঠি
দুর্গাপূজায় ভারতে ইলিশের ব্যাপক চাহিদা থাকে। এ উপলক্ষ্যে বেশ কয়েক বছর ধরে দেশটিতে ইলিশ রপ্তানি করছে বাংলাদেশ। কিন্তু দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে ভারতে ইলিশ রপ্তানি এখনো অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ইলিশ চেয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে চিঠি দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মৎস্য ব্যবসায়ীদের সংগঠন। মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের কাছে ইলিশ চেয়ে চিঠি দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের ‘ফিস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন’।গত বছর দুর্গাপূজায় ইলিশ পাঠানোর পররাষ্ট্র উপদেষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে চিঠিতে লেখা হয়েছে, অত্যন্ত বিনীত ও শ্রদ্ধার সঙ্গে আপনাকে জানানো যাচ্ছে যে, গত বছর আপনার হস্তক্ষেপে ভারতে ২৪২০ টন ইলিশ মাছ রপ্তানির অনুমতি পেয়েছিল। পদ্মার ইলিশ পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরার মৎস্য প্রেমীদের জন্য একটি সুস্বাদু খাবার।এতে আরও লেখা হয়েছে, দুর্গাপূজা-২০২৫ এর কাউন্টডাউন শুরু হওয়ায় আমরা আপনাকে আসন্ন দুর্গাপূজার জন্য ইলিশ মাছ রপ্তানির অনুমতি দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। উল্লেখ্য এ বছর দুর্গাপূজা ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পড়েছে।চিঠিতে পশ্চিমবঙ্গের ব্যবসায়ীরা আরও লিখেছেন, গত বছর আপনার অফিস কর্তৃক প্রদত্ত ২৪২০ টন ইলিশ মাছের মধ্যে মাত্র ৫৭৭ মেট্রিক টন ইলিশ মাছ রপ্তানি করা সম্ভব হয়েছিল। তার আগের বছর ২০২৩ সালে ৩,৯৫০ টনের মধ্যে মাত্র ৫৮৭ টন, ২০২২ সালে ২,৯০০ মেট্রিক টনের মধ্যে ১,৩০০ টন এবং ২০২১ সালে ৪,৬০০ টনের মধ্যে ১২০০ টন ইলিশ মাছ রপ্তানি করা হয়েছিল। অনুমোদিত ইলিশ মাছের সম্পূর্ণ পরিমাণ না আসার কারণে পশ্চিমবঙ্গের ‘ফিশ ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে’র পক্ষ থেকে কিছুটা আক্ষেপও প্রকাশ করা হয়েছে চিঠিতে।‘ফিশ ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে’র সম্পাদক সৈয়দ আনোয়ার মাকসুদ স্বাক্ষরিত চিঠিতে জানানো হয়, প্রায় প্রতি বছরই আমরা অনুমোদিত ইলিশ মাছের সম্পূর্ণ পরিমাণ গ্রহণ করতে ব্যর্থ হই, কারণ রপ্তানি পারমিটগুলো একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকে। যেমন ৩০ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ পরিমাণ রপ্তানি করতে হয়। এত বিশাল পরিমাণ রপ্তানির জন্য এ সময়সীমা আসলে যথেষ্ট নয়। তাই আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ, দয়া করে কোনো সময়সীমা ছাড়াই ইলিশ মাছ রপ্তানির অনুমতি দেওয়ার কথা বিবেচনা করা হোক।চিঠিতে অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য অভিনন্দন জানিয়েছে ‘ফিশ ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন’।বর্তমান সরকারের আমলে ভারতের সঙ্গে আরও শক্তিশালী দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছে ব্যবসায়ীদের এ সংগঠন।ভোরের আকাশ/এসএইচ