যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা কাটছাঁট
ভোরের আকাশ ডেস্ক
প্রকাশ : ০২ জুলাই ২০২৫ ১০:০৯ এএম
ছবি: সংগৃহীত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের বৈদেশিক সহায়তা কার্যক্রমে কাটছাঁটের কারণে বিশ্বে ১ কোটি ৪০ লাখের বেশি মানুষের প্রাণহানি হতে পারে। তাদের এক-তৃতীয়াংশই শিশু। গতকাল মঙ্গলবার বিশ্বখ্যাত চিকিৎসা সাময়িকী ল্যানসেটে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে এমন আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে। থমকে থাকা মার্কিন সহায়তা কার্যক্রমে গতি ফেরানোর প্রত্যাশা নিয়ে এ সপ্তাহে স্পেনে জাতিসংঘের একটি সম্মেলনে জড়ো হচ্ছেন রাজনীতি-ব্যবসা খাতের বিশ্বনেতারা।
এর আগে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলো। গত জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে আসেন ট্রাম্প। এর আগপর্যন্ত বৈশ্বিক মানবিক সহায়তা তহবিলের ৪০ শতাংশের বেশি একাই জোগান দিত যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সহায়তা সংস্থা ইউএসএআইডি। ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের সপ্তাহ দুয়েক পর প্রেসিডেন্টের তৎকালীন ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা ও বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক ইউএসএআইডির কার্যক্রমে কাটছাঁট করার বিষয়ে গর্বভরে ঘোষণা দেন।
এখন গবেষণা প্রতিবেদনের সহলেখক ও স্পেনের বার্সেলোনা ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল হেলথের (আইএসগ্লোবাল) গবেষক ডেভিড রাসেলা সতর্ক করে বলছেন, তহবিলে কাটছাঁটের ঘটনা সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবার বিষয়ে দুই দশকের অগ্রগতিকে হঠাৎ থমকে দেওয়া কিংবা বিপরীতমুখী করার ঝুঁকিতে ফেলেছে।
এক বিবৃতিতে ডেভিড বলেন, অনেক নিম্ন ও মধ্যমআয়ের দেশের ক্ষেত্রে ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আসতে পারে। ফলে যে ধাক্কা আসবে, সেটাকে বিশ্বব্যাপী মহামারি বা বড় ধরনের সশস্ত্র সংঘাতের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে।
১৩৩টি দেশ থেকে সংগ্রহ করা তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে আন্তর্জাতিক গবেষকদের দল অনুমান করেছে, ২০০১ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশগুলোয় ইউএসএআইডির তহবিলের কারণে সব মিলিয়ে ৯ কোটি ১০ লাখ মানুষের মৃত্যু ঠেকানো গেছে। এখন ইউএসএআইডির অর্থায়নে কাটছাঁট করার ফলে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে ১ কোটি ৪০ লাখের বেশি ঝুঁকিতে থাকা মানুষের সম্ভাব্য মৃত্যু এড়ানো সম্ভব নাÑ ও হতে পারে।
এর মধ্যে ৫ বছরের নিচের ৪৫ লাখের বেশি শিশুও রয়েছে। অর্থাৎ প্রতিবছর প্রায় সাত লাখ শিশুর মৃত্যু ঘটতে পারে। গবেষকেরা মডেলিংয়ের মাধ্যমে হিসাব করে দেখিয়েছেন, মার্কিন সরকারের ঘোষিত ৮৩ শতাংশ তহবিল হ্রাস কার্যকর হলে এ প্রাণহানি ঘটতে পারে। সম্ভাব্য প্রাণহানির এ সংখ্যা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নিহত সেনাসংখ্যার চেয়ে বেশি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে কোটিখানেক সেনাসদস্যের প্রাণ গিয়েছিল।
গবেষণার সহ-লেখক ও বার্সেলোনা ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল হেলথের গবেষক দাভিদে রাসেলা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএআইডি) বাজেট কমানোর এই পদক্ষেপ নিম্ন ও মধ্য-আয়ের দেশগুলোর জন্য বৈশ্বিক মহামারি বা সশস্ত্র সংঘাতের মতো সমান ধাক্কা দেবে।
গত মার্চে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, ইউএসএআইডির ৮০ শতাংশের বেশি কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন এই খাতকে অপচয় বিবেচনা করে ব্যয় সংকোচন করেছে। বিশ্বজুড়ে সমালোচিত এই তহবিল সংকোচনের উদ্যোগটির তদারক করেছেন বিলিয়নিয়ার ইলন মাস্ক, যিনি সে সময় ফেডারেল কর্মীবাহিনী ছোট করার এক উদ্যোগের নেতৃত্বে ছিলেন। দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প বারবার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক ব্যয় ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে।
রাসেলা জানান, ইউএসএআইডি ২০০১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সময়কালে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ৯ কোটির বেশি মানুষের জীবন বাঁচাতে ভূমিকা রেখেছে। রুবিওর দেওয়া তথ্যানুসারে যদি ৮৩ শতাংশ বরাদ্দ কমানো হয়, তাহলে ২০৩০ সালের আগেই ১ কোটি ৪০ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হতে পারে- যার মধ্যে ৫ বছরের কম বয়সী শিশু থাকবে অন্তত ৪৫ লাখ।
যুক্তরাষ্ট্র এতদিন বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সহায়তা প্রদানকারী দেশ হিসেবে কাজ করে এসেছে। ২০২৩ সালে দেশটি আন্তর্জাতিক সহায়তায় ব্যয় করেছে ৬৮ বিলিয়ন ডলার; যা ছয় দশকের বেশি সময় ধরে ৬০টিরও বেশি দেশে কার্যক্রম চালিয়ে আসছে ইউএসএআইডি। ট্রাম্পের বাজেট কাটছাঁটের পর যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানিসহ আরও অনেক দেশও সহায়তা হ্রাসের পথে হেঁটেছে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, এই মুহূর্তে তারা আন্তর্জাতিক মানবিক খাতে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বাজেট সংকটে পড়েছে। রুবিওর মতে, ইউএসএআইডির প্রায় ১ হাজার কর্মসূচি এখনো অব্যাহত আছে। তবে সেগুলো ভবিষ্যতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে কংগ্রেসের সঙ্গে সমন্বয় করে পরিচালিত হবে। তবে বাস্তব পরিস্থিতি মোটেই ভালো নয় বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
গত মাসে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে একজন জাতিসংঘ কর্মকর্তা জানান, কেনিয়ার শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে মানুষ ধীরে ধীরে অনাহারে মারা যাচ্ছে, কারণ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ কমে যাওয়ায় খাদ্য বরাদ্দ রেকর্ড পরিমাণে কমেছে।
এদিকে এ বছরের ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে ইউএসএআইডির প্রায় সব কর্মীকে বেতনসহ প্রশাসনিক ছুটিতে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। সংস্থাটির প্রায় দুই হাজার পদ বাতিল করার সিদ্ধান্ত হয়। ইউএসএআইডির কর্মীদের কাছে পাঠানো এক নোটিশ থেকে এসব তথ্য জানতে পেরেছে রয়টার্স। একই সঙ্গে ইউএসএআইডি একটি ‘রিডাকশন-ইন-ফোর্স’ প্রক্রিয়ার বাস্তবায়ন শুরু করছে।
নোটিশে বলা হয়েছে, এর আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে সংস্থাটির প্রায় দুই হাজার কর্মী পড়বেন। অর্থাৎ তারা চাকরিচ্যুত হবেন।
ভোরের আকাশ/এসএইচ