আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ১৩ জুলাই ২০২৫ ১০:০২ এএম
সংগৃহীত ছবি
গরু নয়, এবার জোয়াল বেঁধে দেওয়া হলো মানুষের ঘাড়েই। করানো হলো হালচাষ। পেছনে লাঠি আর দড়ি হাতে দাঁড়িয়ে গ্রামবাসী। হালচাষের সময় গরুর বলদকে যেমন মারধর করা হয়ে থাকে, তেমনই করা হচ্ছে ওই দুজনের সঙ্গে। এ দৃশ্য দেখে কেউ হাসছেন, কেউ আবার হাততালি দিচ্ছেন। কোনো অপরাধ নয়, বরং ভালোবেসে বিয়ে করায় এভাবেই এক নবদম্পতিকে শাস্তি দিলেন গ্রামবাসী। ভারতের ওড়িশার রায়গড়া জেলায় এমনি এক অমানবিক ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক মাধ্যমে। নবদম্পতিকে মাঠে নামিয়ে এভাবে লাঞ্ছনার ছবি সামনে আসতেই তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই গ্রামের দুই যুবক-যুবতী দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের সম্পর্কে ছিলেন। সম্প্রতি তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। কিন্তু তাদের এই সম্পর্ক মেনে নিতে পারেননি গ্রামের মানুষজন। কারণ ছেলেটি মেয়েটির ফুফাতো ভাই যা ওই অঞ্চলের সামাজিক রীতিনীতির পরিপন্থী বলে মনে করা হয়। একে ‘পাপ’ হিসেবে চিহ্নিত করে গ্রামবাসী তাদের বাড়ি থেকে জোর করে বের করে এনে মাঠে নিয়ে যায়।
এরপরই ঘটে অমানবিক দৃশ্য। নবদম্পতির ঘাড়ে জোয়াল চাপিয়ে, পশুর মতো ব্যবহার করে তাদের দিয়ে হালচাষ করানো হয়। শুধু তাই নয়, পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা গ্রামবাসীরা ছড়ি ও দড়ি দিয়ে তাদের আঘাত করে, যেন তারা গরু বা বলদ। মাঠে এই অপমানজনক ঘটনার সময় কেউ কেউ হাসছিলেন, আবার কেউ হাততালি দিচ্ছিলেন।
ঘটনার এখানেই শেষ নয়। মাঠে এই হেনস্তার পরে নবদম্পতিকে টেনে হিঁচড়ে গ্রামের মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাদের উপর তথাকথিত "পাপমোচনের" শুদ্ধীকরণ আচার পালন করা হয়। ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নেটিজেনরা। অনেকে এই ঘটনাকে ‘বর্বরতা’, ‘অমানবিক’, ও ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। ঘটনার গুরুত্ব উপলব্ধি করে দ্রুত পদক্ষেপ নেয় প্রশাসন।
রায়গড়ার পুলিশ সুপার এস স্বাতী কুমার জানিয়েছেন, পুলিশ গ্রামে গিয়ে তদন্ত শুরু করেছে এবং স্বতঃপ্রণোদিতভাবে একটি মামলা রুজু করা হয়েছে। অভিযুক্তদের শনাক্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, একই জেলার রায়গাদা এলাকায় চলতি বছরের জানুয়ারিতেও ঘটে আরেকটি জাত-বর্ণবৈষম্যমূলক ঘটনা। সেখানে ভিন্ন বর্ণের ছেলেকে বিয়ে করায় এক নারীর পরিবারকে বাধ্য করা হয় মন্দিরে গিয়ে মাথা ন্যাড়া করতে। এই ধরনের ধারাবাহিক সামাজিক নিপীড়ন ভারতীয় সমাজে এখনো কতটা গভীরভাবে গেঁথে আছে, তা আবারও প্রমাণিত হলো এই ঘটনার মধ্য দিয়ে।
ভোরের আকাশ/এসএই