× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

এশিয়ার দেশে দেশে সরকার পতন, নেপথ্যে কী

নিখিল মানখিন

প্রকাশ : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১২:৫৫ এএম

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

ভূ-রাজনীতির প্রভাবে অস্থিরতা বেড়েছে এশিয়ায়। ঘটছে একের পর এক ক্ষমতার পটপরিবর্তন, যুদ্ধ-সংঘাত ও অযাচিত বৈদেশিক হস্তক্ষেপের ঘটনা। রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব ঘটনায় চীন-রাশিয়া নেতৃত্বাধীন অঘোষিত জোট এবং মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমাজোটের আধিপত্যবাদ লড়াইয়ের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব রয়েছে। তবে বেশির ভাগ ঘটনায় বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের ‘একক সাম্রাজ্যবাদ’ মনোভাবই দায়ী।

কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আয়তন,ভৌগোলিক সীমা, জনসংখ্যা এবং বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে কৌশলগত গুরুত্ব-সব বিবেচনাতেই এশিয়া মহাদেশের অবস্থান আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ। আর একবিংশ শতাব্দীর এক-চতুর্থাংশ সময়ের শেষপর্যায়ে এশিয়াকে মনে করা হচ্ছে রাজনীতি নিরূপণে উদীয়মান নির্ণায়ক শক্তি। একবিংশ শতাব্দীতে এসে জ্ঞান-বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রাকৃতিক সম্পদ আর বাজার বিবেচনায় এশিয়ার উত্থানকে ইউরোপ-আমেরিকাকেন্দ্রিক বিশ্বনেতারা তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বাধা হিসেবে বিবেচনা করতে থাকে। রহস্যজনকভাবে চলতি শতাব্দীর শুরু থেকেই এশিয়ার বিরোধ ও সংঘাতের ইস্যুগুলো চাঙ্গা হতে থাকে।

বর্তমানে বিশ্বায়ন, বৈশ্বিক অর্থনীতি ও রাজনীতি সবই পরিবর্তনের কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। এর লক্ষণগুলোও আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। ক্ষমতার মহাদ্বন্দ্বের প্রত্যাবর্তন, চীনের উত্থান এবং এর ধারাবাহিকতায় জন্ম নেওয়া সিনো-মার্কিন কৌশলগত সংঘাত এরই মধ্যে বিবাদের হটস্পটগুলো আবারও সক্রিয় করে তুলেছে, যেমন-সেনকাকু দ্বীপপুঞ্জ, দক্ষিণ চীন সাগর, ভারত-চীন সীমান্ত ইত্যাদি। এখানে লক্ষণীয়, এ হটস্পটগুলোর সবই দক্ষিণ এশিয়াকে ঘিরে রয়েছে।

দক্ষিণ এশিয়া এখন চীন-মার্কিন দ্বন্দ্বের ভূ-রাজনৈতিক ফল্টলাইনের কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়েছে, যার কেন্দ্রে রয়েছে ভারত মহাসাগরের কিনারার দেশগুলো, যেটা স্নায়ুযুদ্ধের সময় ছিল না। এতে দক্ষিণ এশিয়ার হাতেও উদ্দেশ্য সাধনেরও বড় একটি উপায় চলে এসেছে। ক্ষমতার লড়াই ও বিবাদের কেন্দ্র হিসেবে বাইরের বড় শক্তিগুলোর মনোযোগের কেন্দ্রে চলে এসেছে উপ-অঞ্চলটি। এখানে আমাদের পরোক্ষ সক্রিয়তা বা অনাগ্রহী দর্শকের ভূমিকা গ্রহণের কোনো সুযোগই নেই। ক্ষমতার এ মহাদ্বন্দ্ব এখন নতুন এক সুযোগও তৈরি করছে।

এশিয়ায় অস্থিরতা: বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনসমূহ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা এশিয়া মহাদেশকে সামগ্রিকভাবে অবদমিত করে রেখেছে। উত্তর এশিয়ায় রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমাদের টানাপড়েন চলছে। পাশাপাশি যুদ্ধেও জড়িত দেশটি। বেশি দূরে যেতে হবে না। শ্রীলঙ্কার পর গত এক বছরের মধ্যে  বাংলাদেশ ও নেপালে গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতার পটপরিবর্তন ঘটেছে। যুদ্ধ হয়েছে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে। ইন্দোনেশিয়ায় অব্যাহত রয়েছে সরকারবিরোধী গণবিক্ষোভ।

ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র। এভাবে মধ্যপ্রাচ্যে ইরান, লেবানন, সিরিয়া, ইয়েমেন ও জর্ডানে উত্তেজনাসহ ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাত বিদ্যমান। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কায় অস্থিরতা বিরাজমান। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রকোপও রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়াচ্ছে। দূরপ্র্যাচ্যের দেশ দুই কোরিয়ার বিরোধ, তাইওয়ান-চীন বিরোধ উত্তেজনা ছড়াচ্ছে। উত্তর-পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলো অস্থির হয়ে আছে জাতিগত সংঘাতে। অবস্থাদৃষ্টে এশিয়াজুড়ে প্রকট হচ্ছে গণতন্ত্রের সংকট। রাজনৈতিক অস্থিরতায় টালমাটাল পুরো মহাদেশটি।

এভাবে ২০২৪ সালে গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হন বাংলাদেশের সাবেক স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কা দেউলিয়া হয়ে যায়, পদত্যাগ করতে বাধ্য হন গোটাবায়া রাজাপাকসে। মিয়ানমারেও জান্তা-বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘাত চলছে। পাকিস্তানেও সামরিক বাহিনীর প্রভাব, ধর্মীয় উগ্রবাদ এবং অর্থনৈতিক সংকট রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। দুই দশক পর আফগানিস্তান তালেবানের কুক্ষিগত হলেও দেশটিতে মানবিক সংকটের পাশাপাশি রাজনৈতিক অস্থিরতা বেড়েছে। থাইল্যান্ডেও প্রায়ই সামরিক অভ্যুত্থান এবং রাজনৈতিক বিক্ষোভ দেখা দিচ্ছে। 

দেশটির রাজা ও সেনাবাহিনীর প্রভাবশালী ভূমিকা রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে অনিশ্চিত করে রেখেছে। ২০২২ সালে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানের অভাবের কারণে কাজাখস্তানে ব্যাপক প্রতিবাদ হয়। সরকার সেই প্রতিবাদ দমনে সেনাবাহিনী ব্যবহার করে।

অন্যদিকে অঞ্চলটিকে অস্থিতিশীল করার পেছনে উত্তর কোরিয়ার মতো একনায়কতান্ত্রিক দেশের কার্যকলাপও দায়ী। আবার সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, মঙ্গোলিয়া, ব্রুনাই, ম্যাকাউ, জর্জিয়া, আর্মেনিয়া কিংবা সৌদি আরব ও কাতারের মতো বেশ কিছু এশীয় দেশে বিস্তৃত রাজনৈতিক অস্থিরতা পরিলক্ষিত না হলেও দেশগুলোয় অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংকট রয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রকৃতপক্ষে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল ও বৈচিত্র্যময় মহাদেশ এশিয়ায় সভ্যতার সূচনা থেকেই রাজনৈতিক উত্থান-পতন ঘটে চলেছে। তবে স্বাধীনতা তথা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী কয়েক দশকে এশিয়া এক নতুন ধরনের রাজনৈতিক অস্থিরতার মুখোমুখি হয়েছে। এই অস্থিরতা কেবল কোনো এক দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এই পরিস্থিতি গ্রাস করেছে সমগ্র এশিয়াকেই। মোটাদাগে এশিয়ার রাজনৈতিক অস্থিরতার পেছনে দায়ী অর্থনৈতিক বৈষম্য, ধর্মীয় উগ্রবাদ, জাতিগত সংঘাত, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনসহ বৈদেশিক হস্তক্ষেপ।

অন্যদিকে ভৌগোলিক অঞ্চলভেদে যদি দেখা হয় তবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ধর্মীয় উগ্রবাদ, জাতিগত সংঘাত এবং তেলের দামের উঠানামার কারণে রাজনৈতিক অস্থিরতা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। অপরদিকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে অর্থনৈতিক বৈষম্য, জাতিগত সংঘাত এবং বৈদেশিক হস্তক্ষেপের কারণে রাজনৈতিক অস্থিরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। একইভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে ধর্মীয় উগ্রবাদ, জাতিগত সংঘাত এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কারণে রাজনৈতিক অস্থিরতা প্রকট হয়ে উঠেছে।

এশিয়ার দেশগুলোতে গণতন্ত্রের সংকট নিয়ে অধ্যাপক নেহা কুমার উল্লেখ করেছেন যে, এই অঞ্চলে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং ভঙ্গুর রাষ্ট্রের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশের উদাহরণ টেনে বলেন, এসব দেশে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভাঙন স্পষ্ট। থম্পসন রিভার্স ইউনিভার্সিটির রাজনীতির প্রফেসর সায়রা বানো তার এক নিবন্ধে উল্লেখ করেছেন, এশিয়ায় গণতন্ত্র উদ্বেগজনকভাবে পতনের সম্মুখীন হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘এই অঞ্চলের বেশিরভাগ দেশেই গণতান্ত্রিক চর্চা পিছিয়ে পড়ছে, যা অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করছে।’

হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এশিয়া মহাদেশটি অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিক থেকে অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়। একদিকে যেখানে চীন, ভারতের মতো দেশগুলো দ্রুত উন্নতি করছে, অন্যদিকে অনেক দেশ এখনও পিছিয়ে আছে। এই বৈচিত্র্যের মধ্যেই সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো অর্থনৈতিক বৈষম্য।

এশিয়ার প্রায় সব দেশেই কোনো না কোনো আকারে অর্থনৈতিক বৈষম্য বিদ্যমান। তবে কিছু দেশে এই সমস্যাটি অনেক বেশি প্রকট। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো চীন। দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি চীনে অর্থনৈতিক বৈষম্যও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেখানে শহর ও গ্রামের মধ্যে, পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে এবং রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি খাতের মধ্যে প্রকট বৈষম্য বিদ্যমান।ভারতের মতো জনবহুল দেশেও অর্থনৈতিক বৈষম্য একটি দীর্ঘদিনের সমস্যা। শহর ও গ্রাম, ধনী ও গরিব এবং বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বৈষম্য বিদ্যমান। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনামের মতো দেশগুলোতেও অর্থনৈতিক বৈষম্য একটি গুরুতর সমস্যা।

মধ্যপ্রাচ্যেও সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো তেলসমৃদ্ধ দেশগুলোতেও অর্থনৈতিক বৈষম্য বিদ্যমান। আবার মধ্য এশিয়ায় কাজাখস্তান, উজবেকিস্তানের মতো দেশগুলোতেও অর্থনৈতিক বৈষম্য দেখা যায়। এই অর্থনৈতিক বৈষম্য অস্থির করে রেখেছে মহাদেশটিকে। জমি, সম্পত্তি এবং উৎপাদন উপকরণের অসমান বণ্টন অর্থনৈতিক বৈষম্যের একটি প্রধান কারণ। আবার শিক্ষার অভাবের কারণে দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টি হয় না এবং মানুষের আয়ের সুযোগ সীমিত হয়ে যাচ্ছে। তা ছাড়া ভ্রষ্টাচার ও দুর্নীতির কারণে সম্পদ কয়েকজনের হাতে কেন্দ্রীভূত হয় এবং সাধারণ মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে।

অন্যদিকে গ্লোবালাইজেশনের ফলে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং তারা দেশের অর্থনীতিকে নিজেদের অনুকূলে ব্যবহার করছে। আর এই অর্থনৈতিক বৈষম্যের প্রভাবে সামাজিক অস্থিরতা, নানামুখী অপরাধ, রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়নোর পাশাপাশি প্রকট করছে দারিদ্র্য সমস্যাও।

হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এশিয়া মহাদেশে জাতিগত সংঘাত একটি দীর্ঘদিনের সমস্যা। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা সংঘাত, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সামাজিক-অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণে এই সংঘাত আরও তীব্রতর হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় এই সমস্যার শীর্ষে রয়েছে ভারত। সেখানে কাশ্মির সমস্যা, শিখ-হিন্দু সংঘাত, দ্রাবিড়-আর্য সংঘাত ইত্যাদি প্রকট আকার ধারণ করেছে।

পাকিস্তানেও পাঞ্জাবি-পশতুন কিংবা শিয়া-সুন্নি সংঘাত বিদ্যমান। আবার শ্রীলঙ্কায় সিংহল-তামিল সংঘাত তো আছেই। অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরাকে আরব-কুর্দ সংঘাত, সিরিয়ায় আরব-কুর্দ সংঘাত, বিভিন্ন ইসলামী গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘাত লেগেই আছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মিয়ানমারে বর্মী-রোহিঙ্গা সংঘাত, ফিলিপাইনে মুসলিম মিনোরাও এবং ফিলিপিনোদের মধ্যে সংঘাত বিরাজ করছে। মধ্য এশিয়ার দেশ কাজাখস্তানেও কাজাখ-উজবেক সংঘাত কিংবা কিরগিজস্তানে কিরগিজ-উজবেক সংঘাত বিদ্যমান।

মহাদেশটি সহস্রাব্দ ধরে বিভিন্ন সাম্রাজ্য ও শক্তির হস্তক্ষেপের শিকার হয়ে আসছে। স্বাধীনতার পরও এই হস্তক্ষেপ কমেনি বরং নতুন রূপ নিয়েছে। বৈশ্বিক রাজনীতির জটিলতার কারণে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ঘন ঘন বৈদেশিক হস্তক্ষেপের ঘটনা ঘটছে। নির্বাচনে হস্তক্ষেপ, সরকার পরিবর্তনে সহায়তা, গোপনভাবে রাজনৈতিক দলকে সমর্থন, ঋণের জালে ফেলা, বিনিয়োগের শর্ত জুড়ে দেওয়া, অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা কিংবা সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপ, অস্ত্র সরবরাহের পাশাপাশি শিক্ষা, মিডিয়া এবং সংস্কৃতিতেও হস্তক্ষেপ করে বিদেশি শক্তিগুলো।

এশিয়ায় বৈদেশিক হস্তক্ষেপ বেশি দেখা যায় মধ্যপ্রাচ্যে। এই অঞ্চলে তেলের কারণে বৈদেশিক শক্তির হস্তক্ষেপ বেশি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন প্রভৃতি দেশ এই অঞ্চলে তাদের প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করে। আবার দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তানের মতো দেশগুলোতে বৈদেশিক হস্তক্ষেপের ইতিহাস খুবই দীর্ঘ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন ইত্যাদি দেশ এই অঞ্চলে তাদের ভূ-রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিভিন্ন ধরনের হস্তক্ষেপ করে।

অন্যদিকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ডের মতো দেশগুলোতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যায়। আর এই বৈদেশিক হস্তক্ষেপের প্রভাবে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়ছে, সূত্রপাত ঘটাচ্ছে গৃহযুদ্ধের। আবার বৈদেশিক ঋণের জালে জড়ি পড়া এবং বিনিয়োগের শর্ত জুড়ে দেওয়ার ফলে এশিয়ার অনেক রাষ্ট্র অর্থনৈতিকভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। আরও বাড়ছে সামাজিক বিভাজন। ঘটছে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাও। এমন তথ্য দিয়েছে হিন্দুস্তান টাইমস।

চীন-রাশিয়া বনাম মার্কিন জোট: যুগ যুগ ধরেই চীন-রাশিয়া জোটের বিপরীতে মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমাজোটের অবস্থান। চলে স্নায়ুযুদ্ধ। তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বেশ কয়েকটি দেশে যুদ্ধ বিগ্রহ ও ক্ষমতার পট পরিবর্তনের ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর যেন এই মাত্রা বেড়েছে অনেক গুণ। যার বেশি প্রভাব পড়ছে এশিয়ায়।

কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ভূ-রাজনীতির মাঠে সফলতা পাচ্ছেন না মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বরং সংকুচিত হয়ে পড়ছে মার্কিন আধিপত্য বিস্তারের ক্ষেত্র। ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই সাম্রাজ্যবাদী  ‘মন্তব্য ও সিদ্ধান্ত’ গ্রহণ করে চলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার বেশ কিছু সিদ্ধান্ত বিশেষ করে শুল্কারোপ ইস্যু  বিশ্বের তিন মহারথী চীন, রাশিয়া ও ভারতকে একই ছাতার নিচে নিয়ে যাচ্ছে।

ভূ-রাজনীতিতে চলছে স্নায়ুযুদ্ধ। দৃশ্যমান হয়ে উঠছে নতুন মেরুকরণ। একটি কৌশলগত ও প্রতিরোধমূলক নিরাপত্তা প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠছে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও)। তিন মহারথী চীন, রাশিয়া ও  ভারত-এই  প্ল্যাটফর্মের প্রাণ। মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ‘নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশনের (ন্যাটো) বিকল্প হিসেবে উঠে আসার সম্ভাবনা জাগাচ্ছে এসসিও। সম্প্রতি শেষ হওয়া ‘এসসিও’ সম্মেলনে চীন ও রাশিয়া নানাভাবে এটাকে ‘ন্যাটো’ এর বিকল্প হিসেবে তুলে ধরেছে।

ভোরের আকাশ/এসএইচ

  • শেয়ার করুন-
জাতিসংঘ অধিবেশনেও মুখোমুখি ভারত-পাকিস্তান

জাতিসংঘ অধিবেশনেও মুখোমুখি ভারত-পাকিস্তান

জাতিসংঘ অধিবেশনেও মুখোমুখি ভারত-পাকিস্তান

জাতিসংঘ অধিবেশনেও মুখোমুখি ভারত-পাকিস্তান

 সিরাজগঞ্জে কনসালটেশন কর্মশালা অনুষ্ঠিত

সিরাজগঞ্জে কনসালটেশন কর্মশালা অনুষ্ঠিত

 রাউজানে গুলিতে নিহত হাকিম বিএনপির কেউ নয়: রিজভী

রাউজানে গুলিতে নিহত হাকিম বিএনপির কেউ নয়: রিজভী

 গরু লুটে ব্যর্থ হয়ে প্রহরীকে ছুরিকাঘাত, আতঙ্কে খামারি

গরু লুটে ব্যর্থ হয়ে প্রহরীকে ছুরিকাঘাত, আতঙ্কে খামারি

 জামায়াত আমিরের সঙ্গে ইতালিয়ান রাষ্ট্রদূতের সৌজন্য সাক্ষাৎ

জামায়াত আমিরের সঙ্গে ইতালিয়ান রাষ্ট্রদূতের সৌজন্য সাক্ষাৎ

 নেছারাবাদে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে যুবকের মৃত্যু,বাবা আহত

নেছারাবাদে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে যুবকের মৃত্যু,বাবা আহত

 শেখ হাসিনাসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

শেখ হাসিনাসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

 কোডেক এর আয়োজনে আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবসে ক্রেষ্ট প্রদান

কোডেক এর আয়োজনে আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবসে ক্রেষ্ট প্রদান

 ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিতাস নদীতে ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিতাস নদীতে ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত

 হত্যা মামলায় নতুন করে গ্রেফতার মেনন-আতিক-পলক

হত্যা মামলায় নতুন করে গ্রেফতার মেনন-আতিক-পলক

 হেফাজতে ইসলামের মহাসড়ক অবরোধ প্রত্যাহার

হেফাজতে ইসলামের মহাসড়ক অবরোধ প্রত্যাহার

 হিজাবে দীপিকা, দাড়িতে রণবীর— নতুন রূপে আলোচনায় দম্পতি

হিজাবে দীপিকা, দাড়িতে রণবীর— নতুন রূপে আলোচনায় দম্পতি

 দেশে কত দামে স্বর্ণ ও রুপা বিক্রি হচ্ছে আজ

দেশে কত দামে স্বর্ণ ও রুপা বিক্রি হচ্ছে আজ

 ঐতিহাসিক নির্বাচনে অংশ নিতে আসছেন তারেক রহমান

ঐতিহাসিক নির্বাচনে অংশ নিতে আসছেন তারেক রহমান

 বক্স অফিসে দাপট দেখাচ্ছে ‘রঘু ডাকাত’

বক্স অফিসে দাপট দেখাচ্ছে ‘রঘু ডাকাত’

 বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে ইইউ রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ

বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে ইইউ রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ

 রংপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আনিছুর রহমান লাকু মারা গেছেন

রংপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আনিছুর রহমান লাকু মারা গেছেন

 শহিদুল আলমদের 'কনশানস'সহ ফ্লোটিলার সব জাহাজ আটক

শহিদুল আলমদের 'কনশানস'সহ ফ্লোটিলার সব জাহাজ আটক

 ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যানজটে আটকা সড়ক উপদেষ্টা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যানজটে আটকা সড়ক উপদেষ্টা

সংশ্লিষ্ট

শহিদুল আলমকে অপহরণ করেছে ইসরায়েলি বাহিনী

শহিদুল আলমকে অপহরণ করেছে ইসরায়েলি বাহিনী

যাদের অর্থ-অস্ত্রে গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরায়েল!

যাদের অর্থ-অস্ত্রে গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরায়েল!

পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পেলেন ৩ মার্কিন বিজ্ঞানী

পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পেলেন ৩ মার্কিন বিজ্ঞানী

পিটিআইয়ের সানাম জাভেদ গ্রেপ্তার

পিটিআইয়ের সানাম জাভেদ গ্রেপ্তার