ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশ : ২৪ জুন ২০২৫ ১২:৪০ এএম
অন্ধকারে আশার আলো: কঠিন সময় কীভাবে পার করতেন রাসুল (সা.)
জীবনে কখনো আনন্দ, কখনো ক্লান্তি—এই দুইয়ের সমন্বয়ে সময় চলে। তবে কঠিন সময়ই মানুষের ধৈর্য, চরিত্র এবং আল্লাহর প্রতি আস্থার পরীক্ষা। এই পরীক্ষাগুলো পার হওয়া মানুষের জীবন বদলে দিতে পারে। আর এই ক্ষেত্রেই মুসলমানদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ হলেন মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)।
তিনি ছিলেন সেই মানুষ, যিনি নিজের জীবনে একের পর এক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছেন, সহ্য করেছেন মানসিক, সামাজিক ও শারীরিক কষ্ট। অথচ কখনো হাল ছাড়েননি। বরং সব পরিস্থিতিতে আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে এবং অবিচল ধৈর্য নিয়ে এগিয়ে গেছেন।
বিষাদের বছর: প্রিয়জন হারানোর বেদনা
মক্কায় দাওয়াতি জীবনের শুরুতেই কাফেরদের তীব্র বিরোধিতার মুখে পড়েন নবীজি (সা.)। তখন পাশে ছিলেন সহধর্মিণী খাদিজা (রা.) ও চাচা আবু তালেব। কিন্তু মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে এই দুই আশ্রয়প্রদায়ক ব্যক্তির মৃত্যু ঘটে। এ সময়কে বলা হয় ‘আমুল হুজন’ বা বিষাদের বছর। একা হয়ে গেলেও রাসুল (সা.) পিছিয়ে যাননি, আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা রেখে দাওয়াতের কাজ চালিয়ে যান।
মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার
মক্কার নেতারা শুধু অপমান নয়, প্রকাশ্যে নবীজিকে শারীরিকভাবে আঘাত করতেও দ্বিধা করেনি। একবার নামাজরত অবস্থায় তার পিঠে উটের নাড়িভুঁড়ি ফেলে দেয় কাফেররা। নবীজি কিছু না বললেও কন্যা ফাতিমা (রা.) এসে তা সরিয়ে কাঁদতে থাকেন। রাসুল (সা.) তখন আল্লাহর কাছে তাদের বিরুদ্ধে দোয়া করেন।
অপবাদ, বয়কট ও ব্যর্থতা
যাকে এক সময় ‘আল-আমিন’ বলে সম্বোধন করা হতো, তাকে দাওয়াত দেওয়ার পর বলা হলো জাদুকর, মিথ্যাবাদী, গণক! এমনকি তায়েফে গিয়ে ইসলাম প্রচার করতে গিয়ে শিশুদের দিয়ে পাথর ছোঁড়ানো হয় তার দিকে। শরীর থেকে রক্ত ঝরলেও তিনি অভিযোগ করেননি, বরং দোয়া করেন তাদের জন্য।
হত্যার ষড়যন্ত্র ও হিজরত
কাফেরদের ষড়যন্ত্র চূড়ান্ত রূপ নেয় যখন তারা রাসুল (সা.)-কে হত্যা করতে চায়। আল্লাহর নির্দেশে তিনি হিজরত করেন মদিনায়। সেখানেও শান্তি ছিল না—ইহুদি গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্র, যুদ্ধের হুমকি ও অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ তার পদে পদে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
বড় বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা
প্রিয় চাচা হামজা (রা.)-র শাহাদাত
ওহুদ যুদ্ধে ক্ষতি
খন্দকের যুদ্ধ: পুরো মদিনা ছিল ধ্বংসের মুখে
ইহুদিদের একের পর এক বিশ্বাসঘাতকতা
তার প্রতিক্রিয়া ছিল কী?
ধৈর্য: কোনো পরিস্থিতিতে হতাশ হননি
তাওয়াক্কুল: আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা রেখেছেন
সত্যে অবিচলতা: কোনো প্রলোভন কিংবা ভয় তাকে পথ থেকে টলাতে পারেনি
ক্ষমাশীলতা: শত্রুর প্রতিও দয়া ও ক্ষমার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন
কোরআনের ভাষ্য
আল্লাহ তায়ালা বলেন—
“মানুষ কি মনে করেছে, তারা শুধু বলবে ‘আমরা ঈমান এনেছি’, আর তাদের পরীক্ষা করা হবে না?”
(সূরা আনকাবূত: ২)
আরও বলেন—
“তোমরা কি জান্নাতে প্রবেশ করবে, অথচ তোমাদের আগের লোকেরা যেমন দুঃখ-ক্লেশে পতিত হয়েছিল, তেমন কিছু এখনো তোমাদের ওপর আসেনি?”
(সূরা বাকারা: ২১৪)
আমাদের শিক্ষা কী?
মহানবী (সা.) এর জীবন আমাদের শিখিয়ে দেয়—
কঠিন সময় মানেই আল্লাহর অনুগ্রহের দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়া নয়
ধৈর্য, বিশ্বাস ও অবিচলতা থাকলে পথ তৈরি হয়
সাফল্য আসে ধৈর্য ও আত্মনিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে
তাই বিপদে, হতাশায় কিংবা যন্ত্রণায় পড়ে যখন পথ খুঁজে পাওয়া যায় না, তখন চোখ রাখুন সেই মানুষটির জীবনে যিনি ছিলেন রহমাতুল্লিল আলামিন। তার ধৈর্যই আমাদের পথ দেখাবে।
সূত্র: অ্যাবাউট ইসলাম, কোরআন ও হাদিস
ভোরের আকাশ//হ.র